হাথুরুসিংহেকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন মুমিনুল
এ রকম টেস্ট এর আগে বাংলাদেশ খেলেনি, খেলেনি আফগানিস্তানও। দুই দলের জন্যই বেশ ব্যতিক্রম এক টেস্ট। তা কোন কোন দিক দিয়ে ব্যতিক্রম মিরপুরের চলমান বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট ম্যাচটি?
প্রশ্নের উত্তর ওই ‘চলমান’ শব্দটাকে ভাঙলেই পাবেন। তৃতীয় দিন পার করে টেস্ট গড়িয়েছে চতুর্থ দিনে। অথচ প্রথম দুটি দিন যেভাবে এগিয়েছে, চাইলেও এই টেস্টকে চতুর্থ দিনে নেওয়া সম্ভব বলেই তো মনে হচ্ছিল না দ্বিতীয় দিনের শেষে!
কেন ম্যাচটা চতুর্থ দিনে গেল, সেটি এতক্ষণে সবারই জানা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও নাজমুল হোসেনের সেঞ্চুরি (১২৪), সেটি দিয়ে এর আগে বাংলাদেশের যে একমাত্র ব্যাটসম্যানের এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার গৌরবে তিনি ভাগ বসালেন, সেঞ্চুরি করেছেন সেই মুমিনুল হকও (১২১*)। সঙ্গে অধিনায়ক লিটন দাসের অপরাজিত ৬৬ মিলে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা।
আফগানিস্তানের হাতে দুই দিনেরও বেশি সময়, কিন্তু টেস্ট জিততে হলে তাদের করতে হবে ৬৬২ রান। তার মানে জিততে হলে একটা বড় রেকর্ডই গড়তে হবে হাসমতউল্লাহ শহীদির দলকে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০৯ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে এখন পর্যন্ত। ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটা জিতেছিল ইংল্যান্ড।
এই ৬৬২ রান একটা রেকর্ড বাংলাদেশের জন্যও। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে প্রতিপক্ষকে এত রানের লক্ষ্য এর আগে কখনোই দেয়নি বাংলাদেশ। ২০২১ সালে হারারে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। স্বাগতিকদের ২৫৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ টেস্টটা জিতেছিল ২২০ রানে। তা এবারের জয়টা কত রানের হচ্ছে?
এই প্রশ্নে কী উত্তর দিতে পারেন বাংলাদেশের দলের ক্রিকেটাররা, তা তো জানাই।
আফগানিস্তানকে আজ যত দ্রুত অলআউট করে দিয়ে যত বেশি রানে জেতা যায়। কিন্তু আফগানিস্তানকে ৪০০-৪৫০ রানের লক্ষ্য দিয়ে যেখানে তিন দিনেই টেস্টটা জেতা সম্ভব ছিল বলে সর্বসাধারণের ধারণা, সেখানে বাংলাদেশ কেন এতটা সময় ব্যাটিং করে সাড়ে ছয় শর ওপর লক্ষ্য তুলে ইনিংস ছাড়ল?
দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক এর খুব সাদামাটা কারণই বললেন। তাঁরা চেয়েছিলেন, এই কন্ডিশনে যতটা সম্ভব ব্যাটিং করা। অনেক রান করতে হবে, আফগানদের অনেক বড় লক্ষ্য দিতে হবে, এ রকম কোনো চিন্তাই নাকি ছিল না।
সকালে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও অবশ্য সেটাই বলেছিলেন ।
টেস্ট সম্প্রচারকারী টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার তো ভালো লাগবে সারা দিন ব্যাটিং করতে পারলে। এ ধরনের উইকেটে আমরা কেমন ব্যাট করি, তা দেখতে চেয়েছিলাম।’
আর এটা যেহেতু একটা টেস্টেরই মামলা, সিরিজে আর কোনো টেস্ট নেই, আগেই কোনো লক্ষ্য ঠিক না করে কোচ চেয়েছিলেন, সবাই ব্যাটিংয়ের যথেষ্ট সুযোগ পাক। আর সেই সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছেন নাজমুল-মুমিনুল।
নাজমুল অবশ্য টেস্টের প্রথম ইনিংসেও করেছেন ১৪৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেই সেই ধারাবাহিকতাই ধরে রেখে তোলেন নিলেন টেস্টে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সে তুলনায় সেঞ্চুরির জন্য মুমিনুলের অপেক্ষাটাই ছিল দীর্ঘ।
সর্বশেষ ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে ১২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। মাঝের ২৬ ইনিংসে মুমিনুলের সর্বোচ্চ ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৮৮ রান। এরপর লম্বা সময় ধরেই নিজেকে খুঁজে ফিরছিলেন মুমিনুল, যেটার শেষ দেখেন গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ৮৪ রানের ইনিংসে। তখনই মনে হচ্ছিল, হয়তো নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন মুমিনুল।
হাথুরুসিংহের যতটা সম্ভব বেশি সময় ব্যাটিংয়ের নীতি বাকি কাজটা সহজ করে দেয় এই বাঁহাতির জন্য। ‘যত পারো ব্যাটিং করো; লাইসেন্সটা পেয়েছিলেন বলেই না পৌঁছাতে পারলেন তিন অঙ্কে, মাঠ ছাড়লেন ১২১ রানে অপরাজিত থেকে। আফগানদের ৪০০-৪৫০ রানের লক্ষ্য দিয়ে দ্রুত ম্যাচ জিততে চাইলে মুমিনুল এই সুযোগ না–ও পেতে পারতেন।
একটা সময় হাথুরুসিংহের কারণেই ক্রিকেটার মুমিনুলের পরিসরটা ছোট হয়ে গিয়েছিল। তিনি হয়ে গেলেন শুধু টেস্ট ক্রিকেটার। ফর্মের সঙ্গে লড়াই করতে করতে যখন সে পরিচয়টাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছিল, তখন আবার হাথুরুসিংহেই সুযোগ করে দিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে প্রত্যাবর্তন উদ্যাপনের।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন মুমিনুল হক।