ফিরেই পারফর্ম করা সহজ নয়, শামিকে নিয়ে রোহিত
বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম চার ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি মোহাম্মদ শামির। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার্দিক পান্ডিয়া চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলে কপাল খোলে শামির। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পাওয়া সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগান।
প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শামি নেন ৫ উইকেট। সেমিফাইনালে সেই কিউইদের বিপক্ষেই করেন আরও বিধ্বংসী বোলিং। বিশ্বকাপ নকআউট পর্বে এবং ভারতের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে এক ইনিংসে নেন ৭ উইকেট; এক যুগ পর ভারত উঠে যায় বিশ্বকাপ ফাইনালে। তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা বোলিংয়ের কাছে বিরাট কোহলির ৫০তম ওয়ানডে শতকের অনন্য কীর্তিও কিছুটা আড়ালে পড়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই দুই ম্যাচের মাঝে আরও চার ম্যাচ খেলে ১১ উইকেট নেন শামি। সব মিলিয়ে ২৩ উইকেট নিয়ে তিনিই এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
অথচ গত কয়েক বছরে কী কঠিন সময়ের মধ্য দিয়েই না গেছেন শামি। স্ত্রী হাসিন জাহান তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন। বিবাহবিচ্ছেদেরও আবেদন জানিয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে সেই মামলায় জামিন নিতে আদালতেও যেতে হয়েছিল। এসবের বাইরেও তাঁর বিরুদ্ধে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ ছিল। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) তাঁকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ দিয়েছিল। শামির দৈনন্দিন জীবন এতটাই জেরবার হয়ে পড়েছিল যে আত্মহত্যার চিন্তাও করেছিলেন!
হার না মেনে দৃঢ় সংকল্পে অটল থাকাই যে শামিকে এত দূর নিয়েছে, সেটাই নতুন করে বললেন রোহিত শর্মা। আহমেদাবাদে আজ ফাইনালপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শামিকে নিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক বলেছেন, ‘দলের সিনিয়র বোলার হয়েও বিশ্বকাপের শুরুর দিকে তাকে বসে থাকতে হয়েছে। এটা তার জন্য কঠিন ছিল। তবে সে দলের সঙ্গেই ছিল। সে যেভাবে পেরেছে সিরাজ ও বুমরাকে সহযোগিতা করেছে। এতেই বোঝা যায়, দলের প্রতি সে কতটা নিবেদিত।’
এশিয়া কাপ থেকেই ভারতীয় দলের সবাই আছেন দুর্দান্ত ছন্দে। একাদশে জায়গা করে নিতে নিজেদের মধ্যে চলছে অদৃশ্য লড়াই। হার্দিক পান্ডিয়া ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি পেস বোলিংটাও দারুণ করেন। পান্ডিয়া অলরাউন্ডার হওয়ায় দুই বিভাগেই বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিল ভারত। একই সঙ্গে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান বা বোলারকেও খেলানোর সুযোগ পাচ্ছিল। তবে পান্ডিয়া চোটে পড়ার আগে বাড়তি বোলার হিসেবে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট খেলিয়েছে শার্দূল ঠাকুরকে।
শামিকে না খেলিয়ে কেন অন্য কাউকে খেলানো হচ্ছে, সেটা তাঁকে জানানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রোহিত, ‘প্রথম কয়েকটি ম্যাচে তাকে কেন খেলানো হয়নি, তাকে ডেকে নিয়ে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছিলাম। তখন একাদশে না থাকলেও সে তার বোলিং নিয়ে কাজ চালিয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন সে যেভাবে ফিরেছে, সেটা কীভাবে দলের উপকারে এসেছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তার মানসিকতা যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। ফিরেই এ রকম পারফর্ম করা সহজ কাজ নয়। যখন কেউ দলীয় খেলার অংশ হয়, তখন সে বোঝে নির্দিষ্ট কিছু ম্যাচে কেন তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। সঠিক একাদশ বেছে নিতে অনেক কিছু করতে হয়। এটা কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ দল গঠনের ওপর নির্ভরশীল।’
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের লড়াইটা বেশ পুরোনো। যে লড়াইয়ে অশ্বিনই সফল হয়েছেন বেশি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ১৪৫ উইকেট তাঁরই। এবারের বিশ্বকাপে একমাত্র ম্যাচটিও তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই খেলেছেন। ৩৭ বছর বয়সী এই অফ স্পিনারের জন্মশহর চেন্নাইয়ে হওয়া সেই ম্যাচে ১০ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবার ফাইনাল সামনে রেখে গতকাল ব্যাটিং-বোলিং দুটোই অনুশীলন করেছেন অশ্বিন। তাহলে কি আগামীকাল তিন স্পিনার খেলাবে ভারত? কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে কি অশ্বিন জুটি বাঁধবেন—এমন প্রশ্নে রোহিত বলেছেন, ‘এখনো আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। ১৫ জনের যে কেউ খেলতে পারে, যে কারোরই সুযোগ আসতে পারে। (আহমেদাবাদে) ১২-১৩টি পিচ আছে। আমরা আজ ও আগামীকাল পিচ দেখব। আমাদের শক্তিমত্তা এবং ওদের দুর্বলতা বিবেচনা করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। আমি চাই দলের সবাই যাতে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকে।’