বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে আলো ছড়িয়েছেন যাঁরা
প্রথম পর্ব শেষ। এবার অপেক্ষা শেষ চারের লড়াইয়ের। প্রথম পর্বে যাঁরা ভালো করেছেন, তাঁদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে এবারের বিশ্বকাপের সেরা একাদশ গড়েছে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ক্রিকেট ডট কম ডট এইউ। যেখানে অধিনায়ক করা হয়েছে বিরাট কোহলিকে। কোন খেলোয়াড়কে কোন একাদশে রাখা হয়েছে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছে তারা।
১. কুইন্টন ডি কক (উইকেটকিপার, দক্ষিণ আফ্রিকা)
প্রথম পর্বে খেলা ৯ ম্যাচে চারটি শতক করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বাকি তিনটি শতক এসেছে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ৫৯১ রান নিয়ে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো খেলোয়াড়ের বিশ্বকাপের এক আসরে এটাই সর্বোচ্চ রান। এক বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড থেকে ৮২ রান দূরে তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন টেন্ডুলকার।
২. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা দুটি শতক করেছেন অস্ট্রেলিয়ার এ ওপেনার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮১ রানে আউট না হয়ে গেলে টানা তিনটি শতকও হতে পারত তাঁর। এই বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে রান তোলার দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এখন পর্যন্ত সেরা দল। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত ওয়ার্নারের ধারাবাহিকতার কারণে। এখন পর্যন্ত তিনি এক অঙ্কে আউট হননি, সব মিলিয়ে করেছেন ৪৯৯ রান।
৩. রাচিন রবীন্দ্র (নিউজিল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ম্যাচেই শতক পেয়েছেন ২৩ বছর বয়সী রাচিন রবীন্দ্র। এরপর শতক করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও। ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৭৫ রানের চমৎকার ইনিংস। সব মিলিয়ে ৫৬৫ রান তাঁর। কার্যকরী বাঁহাতি স্পিনে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
৪. বিরাট কোহলি (ভারত), অধিনায়ক
দুটি শতক, পাঁচটি অর্ধশতক। এবারের বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দেই আছেন বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ শতক দিয়ে তিনি ছুঁয়েছেন ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকারের সর্বোচ্চ শতকের রেকর্ড (৪৯)। ৯৯ গড়ে ৫৯৪ রান তুলে এখন পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক কোহলি। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব না করলেও সেরা পারফরমারদের দলের নেতৃত্ব তাঁরই।
৫. এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মারকুটে এক শতক দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেন এইডেন মার্করাম। ৪৯ বলে করা যে শতকে তিনি ভেঙেছেন বিশ্বকাপে দ্রুততম শতকের রেকর্ড। পরে অবশ্য গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সেটা ভেঙে দেন। ডেথ ওভারে দারুণ কার্যকর মার্করাম, শেষ ১০ ওভারে তিনি প্রতি ১০০ বলে তুলেছেন ২৪৪.৪৪ রান। প্রতি ২.৪ বলে মেরেছেন বাউন্ডারি।
৬. গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (অস্ট্রেলিয়া)
প্রথম পর্বে দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। এরপরও ৭ ম্যাচে তাঁর রান ৩৯৭। দুটি শতকের একটি করেছেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। ৪০ বলে করা সেই শতকে ভেঙেছেন বিশ্বকাপে এইডেন মার্করামের দ্রুততম শতকের রেকর্ড। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে খেলেছেন ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা। ম্যাক্সওয়েল অফস্পিন বোলিংয়েও প্রতিপক্ষকে একাধিকবার বিপদে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ৫ উইকেট।
৭. মার্কো ইয়ানসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
এই বিশ্বকাপে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব অনেক দলই অনুভব করছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেই অভাব টের পেতে দিচ্ছেন না মার্কো ইয়ানসেন। ব্যাট হাতে ৭ ইনিংসে করেছেন ১৫৭ রান। আর বল হাতে ৮ ইনিংসে নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
৮. রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)
বাঁহাতি স্পিনে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের হিমশিম অবস্থায় ফেলে দিচ্ছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ১৮.২৫ গড়ে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। ব্যাট হাতেও প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে পারেন জাদেজা। এই বিশ্বকাপে ৪ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। ৫৫.৫০ গড়ে তুলেছেন ১১১ রান।
৯. মোহাম্মদ শামি (ভারত)
প্রথম চার ম্যাচে ভারতের একাদশে জায়গা পাননি মোহাম্মদ শামি। হার্দিক পান্ডিয়ার চোটের কারণে দলে সুযোগ পেয়েই দেখিয়েছেন কী করতে পারেন। ৫ ম্যাচে ৯.৫৬ গড়ে এখন পর্যন্ত ১৬ উইকেট নিয়েছেন ভারতের এ পেসার। রান দেওয়াতেও বেশ কৃপণ তিনি (ইকোনমি ৪.৭৮)।
১০. অ্যাডাম জাম্পা (অস্ট্রেলিয়া)
বিশ্বকাপে তাঁকে লড়াই করতে হচ্ছে শারীরিক সমস্যার সঙ্গে। পিঠের সমস্যা নিয়েও অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বোলিংকে বলতে গেলে একাই টানছেন অস্ট্রেলিয়ান এই লেগ স্পিনার। ১৮.৯১ গড়ে ২২ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি অ্যাডাম জাম্পা।
১১. যশপ্রীত বুমরা (ভারত)
৯ ম্যাচে ১৭ উইকেট তাঁর। নতুন বলে দলকে যেমন ব্রেকথ্রু এনে দিচ্ছেন, তেমনি ডেথ ওভারেও দুর্দান্ত বোলিং করছেন যশপ্রীত বুমরা। সময়ের অন্যতম সেরা পেস বোলার রানও দিচ্ছেন হিসাব করে। এই বিশ্বকাপে তাঁর ইকোনমি মাত্র ৩.৬৫। পাওয়ার প্লেতে তো আরও কম—২.৯৫!
১২. দিলশান মাদুশঙ্কা (শ্রীলঙ্কা)
দল সেমিফাইনালে ওঠেনি। কিন্তু মাদুশঙ্কা বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ২৫ গড়ে ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ২১ উইকেট। তাঁকে তাই দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছে দলে।