সাকিব যখন লিটনদের ‘পাওয়ার হিটিং’ কোচ
‘এক আর দুই, এই দুই নেটে। তিন আর চার ওই দিকে’—ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্সকে কথাটা বললেন সাকিব আল হাসান। সিডন্সও হাতের ইশারায় সায় দিলেন। ততক্ষণে নেটে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত নাজমুল হাসান ও রনি তালুকদার। লিটন দাস ও তৌহিদ হৃদয় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের অন্য প্রান্তে হাঁটা ধরেছেন। সেখানে দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য নেট সাজানো।
সাকিব তখন ব্যাটিং-বোলিং কিছুই করছিলেন না। টি-টোয়েন্টি দলের অনুশীলনটা কেমন হবে, সেটি তিনি ঠিক করে দিচ্ছিলেন। কোচরা যেন সাকিবের চাওয়া অনুযায়ী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করছিলেন। আর সাকিব দূরে দাঁড়িয়ে নেটে নাজমুলের শটের শ্যাডো করছিলেন। কোন বলটা কীভাবে খেললে ভালো হবে, সেটাও দেখিয়ে দিচ্ছিলেন মাঝেমধ্যে। যেন ব্যাটিং কোচের ভূমিকা সাকিবেরই!
কিছুক্ষণ সতীর্থদের অনুশীলন দেখে নিজেই দুটি ব্যাট হাতে নিয়ে মাঝমাঠের দিকে হাঁটা দিলেন সাকিব। সেখানে সাকিবকে একজন বল ছুড়বেন, আর তিনি ছক্কা মারার অনুশীলন করবেন। এরপর মিনিট দশেক সাকিব একের পর এক বল আছড়ে ফেললেন লং অন, লং অফ বাউন্ডারি লক্ষ্য করে। কিছু পড়েছে বাউন্ডারির এ পাশে, কিছু ও পাশে।
কয়েকটি শট খেলার পর নিজের হিটিং স্টান্স দেখে নিচ্ছিলেন সাকিব। ব্যাক লিফট ঠিকঠাক আছে কি না, ব্যাট সুইংটা যেমন চাচ্ছেন, তেমন থাকছে কি না, সেদিকে ছিল মনোযোগ। গত বিপিএলজুড়ে সাকিবের ছক্কা মারার দৃশ্য দেখা গেছে নিয়মিত। ফরচুন বরিশালের হয়ে ১১ ইনিংসে সাকিব রান করেছেন ৩৭৫, স্ট্রাইক রেট ছিল বিপিএলে ৩০০’র বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ (১৭৪)।
বিপিএলে এবার সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ২২টি ছক্কা। ৩০০’র বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিবের চেয়ে বেশি ছক্কা মেরেছেন মাত্র দুজন। দুজনই বিদেশি। ইফতিখার আহমেদ (২৩) ও জনসন চার্লস (২৬) আছেন সাকিবের ওপর।
সাকিবকে ছক্কার বৃষ্টি বইয়ে দিতে দেখে লিটনও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নিজের নেট সেশন শেষে ড্রেসিংরুমের পথে এগোতে গিয়ে মাঝমাঠে সাকিবকে দেখে দাঁড়ালেন।
কিছুক্ষণ পর লিটনকে জায়গা ছেড়ে দেন সাকিব। এবার লিটনের পালা। হাত দিয়ে লিটনকে মাঠের কোন অংশে মারতে হবে, সেটি দেখিয়ে দেন সাকিব। নিজের ‘হিটিং বেজ’ নিয়ে লিটনকে কিছুক্ষণ বোঝালেন। এরপর শুরু হলো লিটনের ছক্কার বৃষ্টি। দৃশ্যটা আকৃষ্ট করল দলের বাকি ব্যাটসম্যানদেরও।
নেটে ব্যাটিং শেষে সবাই একে একে মাঝমাঠে এসে যোগ দেন। রনি তালুকদার, নাজমুল, আফিফ হোসেন, তৌহিদ হৃদয়—সবাই পালা করে ছক্কা মারার অনুশীলনে নামেন। আর তাঁদের রেঞ্জ হিটিং কোচ আর কেউ নন, সাকিব! বল বাউন্ডারির ওপারে না গেলে কৌশল শুধরে দিচ্ছিলেন।
দক্ষতা বাড়ানোর এই অনুশীলনকে সাকিব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে নিয়ম চালু করলেন। যে টানা ছক্কা মারতে পারবেন, সে ক্রিজে থাকবেন। বাউন্ডারি পার না করতে পারলে ক্রিজ ছাড়তে হবে। সাকিব নিজেই টানা দুই ছক্কা মেরে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন দলের বাকি ব্যাটসম্যানদের দিকে। লিটনও টানা দুই ছক্কা মেরে সতীর্থদের সঙ্গে তাকিয়ে চওড়া হাসি দেন।
এ নিয়ে সবার মধ্যে শুরু হয় খুনসুটি। অনুশীলনও যে মজা করে করা যায়, সেটিও দেখা গেল সাকিবদের ছক্কা মারার চেষ্টায়। ক্রিকেটারদের ছক্কায় আঘাত পাওয়ার ভয়ে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিতে হচ্ছিল। সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকেরাও ছিলেন আতঙ্কে। কিছুক্ষণ পরই যে দূর থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল, ‘ওয়াচ ইট! ওয়াচ ইট!’
কখন কার মাথায় বল এসে পড়ে, কে জানে!