তিন বছর আগে যে মাঠে ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলেদের দল। আজ পচেফস্ট্রুমের সেই সেনওয়েস পার্কেই প্রথমবার খেলতে নামল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল। তবে দিনটা হাসিমুখে শেষ করতে পারেনি দিশা বিশ্বাসের দল। জিতলেই সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত, এমন ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
তাতে মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে শেষ চারের ওঠার সমীকরণ অনেকটা জটিল হয়ে গেল বাংলাদেশের। এক নম্বর গ্রুপের শীর্ষ দুইয়ে থেকে সেমিফাইনালে উঠতে শেষ ম্যাচে শুধু সংযুক্ত আরব আমিরাততে হারালেই চলবে না, গ্রুপের অন্য কিছু ম্যাচের ফলও আসতে হবে নিজেদের অনুকূলে।
আজ গ্রুপের অন্য ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে ৭ উইকেট হারানোর পরই জটিল হয়ে যায় গ্রুপের হিসাবনিকাশ। সুপার সিক্সের এক নম্বর গ্রুপে এখন চারটি দলের সমান ৪ পয়েন্ট। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত বাংলাদেশের ওপরে আছে। বাংলাদেশ তাই আছে চারে।
আগামীকাল ভারত খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এই ম্যাচে ভারতীয়রা জিতে গেলে সুপার সিক্স শেষ করবে ৬ পয়েন্ট নিয়ে। বাংলাদেশের মতো অস্ট্রেলিয়ারও ম্যাচ বাকি আরব আমিরাতের বিপক্ষে। আর দক্ষিণ আফ্রিকারা শেষ ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যার অর্থ চারটি দলই সুপার সিক্স পর্ব শেষ করতে পারেন সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখা হবে কারা বেশি ম্যাচ জিতেছে। জয়ের সংখ্যাও সমান হয়ে গেলে আসবে নেট রান রেটের হিসাব। যে হিসাবে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ।
আজ জিতে গেলে অবশ্য ভাগ্য নিজেদের হাতেই থাকত দিশাদের। অল্প রানের পুঁজি নিয়ে বোলাররা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেনও, ৩৩ রানেই তুলে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ৪ উইকেট। চার উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান। সেখান থেকেই ম্যাচটাকে বাংলাদেশের হাত থেকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নেন ম্যাডিসন ল্যান্ডসম্যান ও কারোবো মেসো জুটি। পঞ্চম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়েন তাঁরা। ২১ রানে একবার জীবন পাওয়া ম্যাডিসন ৩৮ বলের ৩৭ রান করে যখন মারুফার শিকার হলেন, জয় হাত ছোঁয়া দূরত্ব স্বাগতিকদের। কারাবো যখন চার মেরে দলকে জিতিয়ে দিলেন দলটির হাতে ছিল আরও ৭ বল।
ব্যাট হাতে আজ তেমন ভালো করতে পারেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রথম পর্বের তিন ম্যাচেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করা দলটি পুরো ২০ ওভার খেলে ৬ উইকেট হারিয়ে করে ১০৫ রান। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১ উইকেট হারালেও স্কোর কার্ডে রান ওঠে ২৮টি।
তবে ম্যাচের প্রথম ওভারটা অন্যরকম ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। বাংলাদেশের দুই ওপেনার আফিফা প্রত্যাশা ও মিষ্টি সাহা একটি করে বাউন্ডারিতে জেমা বোথার করা ওভারে তুলে নেন ১১ রান। পরের দুই ওভারেও একটি করে চার মেরে রানের চাকাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আফিয়া ও মিষ্টি। বিনা উইকেটে ২৬ রান নিয়ে চতুর্থ ওভার শেষ করা বাংলাদেশ খেই হারায় পঞ্চম ওভারে। বোথার বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ১৪ বলে ১২ রান করা মিষ্টি। ওই ওভার কোনো রান আসেনি। পরের দুই ওভারে আসে ২ ও ৩ রান।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা আড়মোড়া ভাঙেন অষ্টম ওভারে। কাইলা রেইনেকের ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দারুণ তিনটি চার মারেন দিলারা আক্তার। ওয়ানডাউন ব্যাটার অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ফিরেছেন ২০ বলে ১৭ রান করে দশম ওভারের শেষ বলে।
একবার জীবন পাওয়া আফিফাও এরপর খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি। ৩৩ বলে ৩ চারে ২১ রান করা ওপেনার দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলে হয়েছেন বোল্ড। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৫৬।
সেখান থেকেই ৩৩ বলে ৩১ রানের জুটি গড়েন স্বর্ণা আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার। ১৭তম ওভারে স্বর্ণাকে ফেরানো রেইনেকের জোড়া আঘাতে ৩ উইকেটে ৮৭ থেকে মুহূর্তেই ৫ উইকেটে ৮৭ বাংলাদেশ। ১৮ বলে ২০ রান করেছেন স্বর্ণা। মারুফা আক্তার ফেরেন কোনো রান করেই। ১৯তম ওভারে তিন অঙ্ক ছোঁয়া বাংলাদেশ শেষ ওভারে তোলে ৫ রান। ইনিংসের শেষ বলে অসাধারণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে সুমাইয়াকে ফেরান মিয়ানা স্মিট। সুমাইয়া করেছেন ইনিংস সর্বোচ্চ ২৩ রান। তাঁর ২৮ বলের ইনিংসে ছিল একটি চার।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো না সুমাইয়াদের রান।