শেষ পর্যন্ত টি–টোয়েন্টির নেতৃত্ব ছাড়লেন নাজমুল

নাজমুল হোসেনপ্রথম আলো

অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘অধিনায়কত্ব’ প্রায় নিয়মিত আলোচনার প্রসঙ্গ। এই অনেক দিনের হিসাবটা করতে হবে ২০১৪ সালে যখন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হলো, তখন থেকে। অর্থাৎ যখন থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণে একাধিক অধিনায়ক রাখার পথে চূড়ান্তভাবে পা বাড়াল সেই সময় থেকে।

সাকিব আল হাসান কোনো সংস্করণের অধিনায়ক, কিন্তু তিনি হয়তো একটা সিরিজ খেলবেন না। তখন আলোচনা, তাহলে অধিনায়ক কে? তামিম ইকবাল সিরিজের মাঝপথে অবসর নিয়ে নিলে প্রশ্ন ওঠে—কে ধরবেন ওয়ানডের হাল? এই করে করে গত কয়েক বছরে মেহেদী হাসান মিরাজ আর লিটন দাসও ভালোভাবে জেনে ফেলেছেন অধিনায়কত্ব বিষয়টা আসলে কী। লিটন তো আপৎকালীন অধিনায়ক হিসেবে একাধিক বড় সিরিজও জিতেছেন।

শান্ত (নাজমুল) ফাইনালি বলে দিয়েছে সে আর টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব করবে না। আমরাও এটা মেনে নিয়েছি।
ফারুক আহমেদ, বিসিবি সভাপতি

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে নাজমুল হোসেনকে তিন সংস্করণের অধিনায়ক করার আগে মাঝে অল্প সময়ের জন্য সাকিবও একবার নিয়েছিলেন তিন সংস্করণের দায়িত্ব। তবে সাকিব–তামিম–সাকিব করে শেষ পর্যন্ত নাজমুল তিন সংস্করণের দায়িত্ব নেওয়ার পরই মনে হলো, এবার বুঝি অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনায় বিরতি পড়ল। কিন্তু এক বছর না যেতেই আবারও একাধিক অধিনায়কের পথেই পা বাড়াতে হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে।

বিসিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, নাজমুল চূড়ান্তভাবেই বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি আর টি–টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেবেন না। বিসিবি যদি চায়, টেস্ট এবং ওয়ানডে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যাবেন। তাঁর এই ইচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে বিসিবিও। অর্থাৎ, আগামী মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরবর্তী টি–টোয়েন্টি সিরিজে নাজমুল বাংলাদেশের অধিনায়ক থাকছেন না।

আরও পড়ুন

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও কাল এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘শান্ত (নাজমুল) ফাইনালি বলে দিয়েছে সে আর টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়কত্ব করবে না। আমরাও এটা মেনে নিয়েছি। তবে যেহেতু আপাতত আমাদের টি–টোয়েন্টি খেলা নেই, হাতে সময় আছে; এখনই নতুন অধিনায়ক নিচ্ছি না। তবে যদি চোটের সমস্যা না থাকে, ওয়ানডে ও টেস্টে শান্তই অধিনায়ক থাকবে। সেভাবেই কথা হয়েছে।’

লিটন দাসের টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হওয়া অনেকটা নিশ্চিতই
প্রথম আলো

টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে এখনই কারও নাম ঘোষণা না হলেও কে আসতে পারেন নেতৃত্বে, সেটা অলিখিতভাবে ঠিক হয়ে আছে। গত মাসে লিটনের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩–০–তে টি–টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আসার পর বিসিবির জন্যও সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ হয়ে গেছে। হ্যাঁ, সব ঠিক থাকলে মার্চে বাংলাদেশের পরবর্তী টি–টোয়েন্টি সিরিজে লিটনই নামবেন টস করতে। সমান্তরালে মেহেদী হাসান মিরাজের নাম যে নেই, তা নয়। সেটা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক ঠিক করার আলোচনাতেও। তবে টি–টোয়েন্টি দলে মিরাজের জায়গাটা প্রশ্নাতীত না থাকাটা তাঁর বিপক্ষে যাচ্ছে। আলোচনায় তাসকিন আহমেদের নামও কেউ তুলতে পারেন। তবে তাসকিন একে পেস বোলার, তার ওপর চোটপ্রবণ। মাঝেমধ্যেই তাঁকে বিশ্রাম দিতে হয়। সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে তাসকিনও তাই বিসিবির ভাবনায় নেই।

আরও পড়ুন

গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময় প্রথম জানা গিয়েছিল, ‘ব্যক্তিগত’ কারণে নাজমুল কোনো সংস্করণেই আর অধিনায়কত্ব করতে চান না। ‘ব্যক্তিগত’ কারণ বলতে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক আলোচনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। যদিও অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ব্যাটিং নিয়ে কিছু সমালোচনা হলেও মাঠে নাজমুলের নেতৃত্ব প্রশংসিতই হয়েছে সব সময়। অধিনায়কের দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরও বিসিবির তাঁকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করার কারণও এটাই।

মাঠে অধিনায়ক হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন নাজমুল
প্রথম আলো

নভেম্বরের শুরুতে শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও তাই নাজমুলকেই অধিনায়ক রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু কুঁচকির চোটে পড়ে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটা খেলতে পারেননি তিনি, যেতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে আপৎকালীন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মিরাজ। আর টি–টোয়েন্টিতে তো ‘ম্যাজিক’ই দেখালেন অধিনায়ক লিটন!

আরও পড়ুন