‘ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেছে, আমরা দুর্ভাগা ছিলাম’, বললেন তানজিম হাসান
বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১১৩ রানে আটকে দিয়েও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি বাংলাদেশ। নিউইয়র্কের লো স্কোরিং ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৪ রানে। কাছাকাছি গিয়েও এমন হারে হতাশ বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা।
ম্যাচ শেষে এই হারের পর নিজেদের দুর্ভাগা মনে করার কথা জানিয়েছেন পেসার তানজিম হাসান। দল হারলেও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন এই পেসার। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচ শেষে নিজের বোলিং নিয়ে তৃপ্তির কথাও জানিয়েছেন তানজিম। বলেছেন, আক্রমণাত্মক বোলিংয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিরুদ্ধে সফল হয়েছেন তিনি।
মিক্সড জোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুরুতে তানজিম কথা বলেছেন দলের হার নিয়ে। নিজেদের দুর্ভাগা দাবি করে এ পেসার বলেছেন, ‘আমাদের আসলে লো স্কোরিং এই ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। আমার মনে হয় আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালোই ব্যাট করেছে, ওদের বোলাররা অনেক ভালো করছে। এই উইকেটে রান করা সহজ নয়। ব্যাটসম্যানরা অনেক চেষ্টা করেছে। আমরা দুর্ভাগা ছিলাম, তাই ম্যাচটা জিততে পারিনি।’
উইকেটের সহায়তা পেলে বোলাররা অনেক রোমাঞ্চিত বোধ করেন এবং সে সময় অনেক ভুলও করেন। কিন্তু গতকাল বাংলাদেশ উইকেটের সহায়তা নিয়েও দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে তানজিম বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমরা গতকাল টিম মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। এটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি যে উইকেটের সাহায্য পেলে বোলাররা উত্তেজিত হয়ে পড়ে, তখন অনেক বেশি কিছু করার চেষ্টা করে। যেমন সাধারণত আমার শক্তি হচ্ছে আউটসুইং, কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমি ইনসুইংও করার চেষ্টা করি। তখনই এদিক–সেদিক বল হয়। টিম মিটিংয়ে আমরা ঠিক করেছি যে নিজেদের মৌলিক কাজগুলোই করে যাব। আমরা ভালো জায়গায় বল করে যাব, বাকিটা বলই করবে।’
এত ভালো বোলিং করেও হারতে হলো, তবে এখানেই শেষ ভাবছেন না তানজিম। ঘুরে দাঁড়িয়ে জিততে চান পরের দুই ম্যাচ, ‘ক্রিকেটটা তো টিম গেম। কখনো বোলাররা ভালো করবে, ব্যাটসম্যানরা ব্যাকআপ করবে। আবার কখনো ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে, বোলাররা ব্যাকআপ করবে। এটা শেষ পর্যন্ত দলীয় খেলা। আমরা চেষ্টা করছি, যেন আমাদের খুব ভালো সমন্বয় হয়। তবে আমরা ভালো খেলছি। আমরা অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমরা আশা করি পরের দুই ম্যাচ আমরা অনেক ভালো করব। দুই ম্যাচেই জিতব এবং পরের পর্বে যাব।’
বাংলাদেশের পরের ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। যাদের কাছে সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে হেরেছে বাংলাদেশ। যদিও সেটাকে অতীত ভাবছেন তানজিম, ‘ওটা অতীত হয়ে গেছে। নেদারল্যান্ডসের কাছে আমরা যে ম্যাচে হেরেছি, সেটা ছিল ওয়ানডে। এখন আমরা টি টোয়েন্টি খেলছি, যেটা একেবারেরই ভিন্ন একটা ফরম্যাট। মানসিকভাবে চিন্তা করলে আমরা অনেক শক্ত আছি। আমাদের দলীয় একতা অসাধারণ। আমি মনে করি, আমরা যদি এভাবে খেলতে থাকি, তবে কোনো দলই আমাদের কাছে ব্যাপার নয়। আর এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি যে টি টোয়েন্টিতে যেকোনো দলকে আমরা হারাতে পারি।’
শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন তানজিম। নিজেকে প্রমাণ করার বাড়তি তাগিদ ছিল কি না, জানতে চাইলে বলেন, ‘নাহ্, তেমন কিছু ছিল না। আমার কাজই হচ্ছে পারফর্ম করা। নির্বাচকেরা যেখানে আমাকে খেলাবে, সেখানেই পারফর্ম করব। আর এই বিশ্বকাপে আমি চেষ্টা করছি প্রতিটি বলেই নিজের সেরাটা দেওয়ার। কোনো বলকেই আমি হালকাভাবে নিই না। নিজের মানসিকতাকে সেভাবেই আমি সেট করেছি। আমি যদি ২৪টা বল করি, প্রতিটাই যেন সেরা বল হয়। মানসিকতায় এটুকু পরিবর্তন আমি নিয়ে আসছি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই স্পেলটাকে ক্যারিয়ারের সেরা মনে করেন কি না, ‘হ্যাঁ। আজকের স্পেলটা আমি অনেক উপভোগ করেছি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ রকম একটি স্পেল অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে বলে মনে করি। যেকোনো বোলারকে আত্মবিশ্বাস দেবে। তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা একটা দল। সব দলের সঙ্গে ওরা অনেক আধিপত্য বিস্তার করে খেলে। তাই এদের বিপক্ষে ভালো বোলিং করা মানে নিজেকে উজ্জীবিত করা।’
প্রথম ইনিংস শেষে ডি ককের উইকেট নিয়ে খুশি হওয়ার কথা বলেছিলেন তানজিম। খুশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘ও আমার প্রথম ওভারে ১০ রান নিয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে ছয় মেরে দিয়েছে, আমি কল্পনা করিনি ওই জায়গা থেকে ছয় মেরে দেবে। তাই একটা তাড়না কাজ করছিল। আর শান্ত ভাই আমাকে বলছিলেন, উইকেটের জন্য বল করবি। ডিফেন্সিভ নয়, অ্যাটাকিং। আমি তাই ঠিক করেছি আক্রমণাত্মক বলই করব। তাই সফল হয়ে ভালো লেগেছে।’