ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট—ঘরের মাঠে যেখানেই টেস্ট খেলা হোক, তাইজুল ইসলামের দাপট থাকবেই। তিনি রান থামাবেন, উইকেটও নেবেন। নতুন বল বা পুরোনো বল, ম্যাচের অবস্থা যেমনই হোক, অধিনায়কের আস্থার নাম তাইজুল। তিনিই এখন বাংলাদেশ টেস্ট দলের বোলিং আক্রমণের প্রাণভোমরা।
সিলেট টেস্টেও গতকাল আবার দেখা গেল তাইজুলের দাপট—৮৯ রানে নিলেন নিউজিল্যান্ডের ৪ উইকেট। ৪৩ টেস্টে এই বাঁহাতি স্পিনারের এখন ১৮১ উইকেট। সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের মাইলফলক এখন তাইজুলের জন্য খুব দূরের লক্ষ্য মনে হচ্ছে না।
৩১০ রানে বাংলাদেশ দলের প্রথম ইনিংস থামার পর নিউজিল্যান্ড তাদের ইনিংসে প্রত্যাশিত সূচনা পেয়ে যায়। দুই বাঁহাতি টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ে ৩৬ রানের জুটি গড়ে এগোচ্ছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। দুজনের ভাগ্যও ভালো, ইনিংসের ১২তম ওভার পর্যন্ত দুই কিউই ওপেনারকে তাইজুলের বল খেলতে হয়নি। দুই বাঁহাতি ক্রিজে থাকায় পেসার শরীফুল ইসলামের সঙ্গে বল করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাইজুল বোলিংয়ে এসেছেন ১৩তম ওভারে, সে ওভারেই আউট করেন ল্যাথামকে।
সারা দিনে তাইজুল ম্যাচের গতিপথ বদলেছেন আরও দুইবার। ৯৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড দল যখন বিপদে, তখন কেইন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেল মিলে ৬৬ রান যোগ করেন ৯৬ বলে। দুজনের মধ্যে বেশ দ্রুত ছিলেন মিচেল, তাঁর ৪১ রান এসেছে মাত্র ৫৪ বলে। তাইজুল তাঁর প্রথম স্পেলের প্রথম ওভারের মতো দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই ভয়ংকর হয়ে ওঠা মিচেলকে ফ্লাইটের ধোঁকায় ক্রিজছাড়া করেন। বিশাল বাঁকে বেরিয়ে যাওয়া বলটা লুফে নিয়ে মিচেলকে স্টাম্পিং করতে কষ্ট হয়নি নুরুল হাসানের।
দিনের শেষবেলায় নতুন বল হাতে পেয়ে আবার জ্বলে ওঠেন তাইজুল। এক ওভারের ব্যবধানে তাঁর দুই শিকার—প্রথমে শতক করে থিতু ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন, পরে ইশ সোধি। শেষ ১০ ইনিংসে এ নিয়ে পাঁচবার ইনিংসে ৪ বা তার বেশি উইকেট পেলেন তাইজুল। বাংলাদেশ দলের বিদায়ী স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথের মুখে তাই দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা, ‘তাইজুল সব সময় বোলিং আক্রমণকে সাহায্য করছে। সে আমাদের বোলিং আক্রমণের নেতা। সে নিউজিল্যান্ডের ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে। দারুণ অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও খেলা বোঝার ক্ষমতা আছে তাইজুলের।’
অভিষেকের পর থেকেই বাংলাদেশ দলের মূল বাঁহাতি স্পিনারের তকমাটা ছিল সাকিব আল হাসানের। গত কয়েক বছর সাকিব টেস্টে অনিয়মিত। এ সময় দক্ষতা ঝালাই করে নিজেকে বোলিং আক্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন তাইজুল। তাইজুলের বদলের প্রক্রিয়াটা কাছ থেকে দেখেছেন হেরাথ। তাঁর মূল্যায়ন, ‘সাকিব থাকুক আর না থাকুক, তাইজুল সব সময়ই বড় দায়িত্ব পালন করছে। সে আক্রমণাত্মক বোলিংও করছে, রক্ষণাত্মকও। সব সময়ই সে নিজের লাইন-লেংথের ওপর আস্থা রাখছে।’
প্রতিপক্ষ দলের প্রধান কোচ লুক রনকিও তাইজুলের প্রশংসা করলেন, ‘ওরা সারা দিন আমাদের চাপে রেখেছে। দিন শেষে পুরস্কার পেয়েছে। নতুন বলে ওর ওই দুটি উইকেট সারা দিনের খেলাটা বদলে দিয়েছে।’