সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় দুবাই শহরে ভিড়টা যেন বেড়ে যায়। হোটেলগুলো ভরে ওঠে পর্যটকে, রাস্তায় বাড়ে যানবাহনের ব্যস্ততা। এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচটা রোববার দেওয়ার কারণও এটাই—ছুটির দিন যেন দর্শকেরা মাঠে এসে খেলা দেখার সুযোগ পান। এশিয়া কাপের ফাইনাল দেখতে ভারত, পাকিস্তান থেকেও দুবাই এসেছেন অনেকে। তবে তাঁদের বেশির ভাগেরই আশা ছিল, ফাইনালটা হবে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান মহারণ।
কাল দুবাইয়ের বুরদুবাই এলাকায় দেখা মিলল দিল্লি থেকে আসা এমন দুই সমর্থকের। তাঁরাও টিকিট কেটেছিলেন ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হবে ভেবেই। সেটি না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন তাঁরা। তাই বলে এশিয়া কাপের ফাইনাল না দেখে টিকিটের টাকা গচ্চা দেবেন, তা হয় নাকি! ব্যাগ গুছিয়ে দুই দিনের জন্য দুবাই চলে এসেছেন দুই বন্ধু। ভারত নেই তো কী হয়েছে, এশিয়া কাপের দুই ফাইনালিস্ট পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার শিরোপার লড়াইটাও তো কম উপভোগ্য হওয়ার কথা নয়।
শ্রীলঙ্কা ফাইনালে ওঠায় টুর্নামেন্টের আরেকটা জায়গায় প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির। শুরুতে প্রেসবক্সে শ্রীলঙ্কার সাংবাদিকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুপার ফোরের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর লঙ্কান সাংবাদিকেরাও আমিরাতে আসতে শুরু করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোর পর্বের শেষ ম্যাচটিতে তাঁদের অনেককেই প্রেসবক্সে দেখা গেল। আজকের ফাইনাল ম্যাচটি কাভার করার জন্য শ্রীলঙ্কা থেকে আসছেন আরও সাংবাদিক।
মাঠের বাইরে আজকের ফাইনাল নিয়ে রোমাঞ্চ থাকলেও কাল ফাইনালের আগের দিন দুই ফাইনালিস্ট দৃশ্যপটেই ছিল না। অনুশীলনই করেননি বাবর-শানাকারা। হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে দিন কাটিয়েছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা।
ফাইনালের আগে অধিনায়কদের সংবাদ সম্মেলনের রীতিটাকেও পাত্তা দিল না কোনো দল। পরে জানা গেল, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের জোরাজুরিতে তরুণ ক্রিকেটার নাসিম শাহকে কিছুক্ষণের জন্য সে দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়েছে। অনির্ধারিত এ সংবাদ সম্মেলনে অন্য দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছিল না।
পরে অবশ্য ফাইনাল নিয়ে দুই দলের অধিনায়ক বাবর ও শানাকার কিছু কথাবার্তা সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়েছে এসিসি। সেখানে বাবর বলেছেন, রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের অপেক্ষাই নাকি করছেন তাঁরা, ‘ফাইনালে অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি, এটা দারুণ রোমাঞ্চকর এক ব্যাপার। আমরা এখন শিরোপা জয় থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে আছি। যেকোনো অধিনায়ক, যেকোনো দলই চাইবে এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতবে। আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য।’
শানাকার কাছে এবারের এশিয়া কাপের অভিজ্ঞতা তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। শেষটাও ভালোভাবে হোক, এমন আশা তাঁর, ‘ফাইনাল খেলার একটা রোমাঞ্চ তো আছেই। এখন পর্যন্ত যে ম্যাচগুলো হয়েছে, প্রায় সবই রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে। আমার জন্য এটা স্মরণীয় এশিয়া কাপ হয়ে থাকবে। ফাইনালেও তেমনই প্রত্যাশা।’
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আজকের ফাইনাল দুই দলের জন্যই এশিয়া কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের সর্বশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। পাকিস্তান সর্বশেষ এশিয়া কাপ জিতেছে ২০১২ সালে, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎটাও হয়েছিল ২০১৪ সালেই।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এর আগে ১৯৮৬ সালেও এশিয়া কাপে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। সেবারও পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লঙ্কানরাই।
এবার অবশ্য দুই দলের জন্যই ফাইনালের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এশিয়া কাপের এবারের আসরের আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কা। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে টুর্নামেন্টটা ঘরের মাঠে আয়োজন করতে পারেনি তারা। ফাইনালে পৌঁছে তাই নিশ্চিতভাবেই ঘরের মাঠের দর্শকদের শূন্যতা অনুভব করবে লঙ্কানরা।
তবে এটা তাদের জন্য বাড়তি প্রেরণাও। শিরোপা জিতে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই যে এখন লক্ষ্য শানাকাদের! অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য আমিরাত অনেকটা বাড়ির মতোই। আজ গ্যালারির সিংহভাগ আসন যে পাকিস্তানের সমর্থকেরাই দখল করবেন, সেটি নিয়ে কারও দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না।
কাগজ-কলমে যদিও পাকিস্তানই এগিয়ে, আজ শ্রীলঙ্কাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে সুপার ফোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া জয়। অবশ্য ফাইনালে ফেবারিট কোন দল, সেটি নিয়ে অনেকে মন্তব্যই করতে চাইছেন না।
কারণ, এশিয়া কাপে এবার টসটাও হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। দুবাইয়ের মাঠে টসে জিতে পরে ব্যাটিং করা দলই বারবার জিতছে! আজও যদি টস–ভাগ্যই শিরোপা নির্ধারণ করে দেয়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না তাহলে।
এশিয়া কাপের গতবারের ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ এবার টুর্নামেন্টের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়েছে। তবু আজকের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও থাকছে।
ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবেই এ ম্যাচে থাকবেন বাংলাদেশের আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। এর আগে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দুটিতেও তিনি পালন করেছেন ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব।