কাকতাল? তা বলাই যায়।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া আগেই হয়ে গিয়েছিল। টিকে ছিল শেষ উইকেট জুটি। সেটিও ভাঙল সাকিবের হাতেই। মিড অফ থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভেঙে আসিতা ফার্নান্দোকে রানআউট করে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ করে দিলেন সাকিব। বলা যাবে না, শেষ উইকেটটি তিনি–ই নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর হাতের নিখুঁত নিশানায়ই তো অলআউট হলো শ্রীলঙ্কা।
অর্থাৎ, শেষটাও সাকিবের মাধ্যমেই। প্রায় চার বছর আগে যে টেস্টে সাকিব ইনিংসে সর্বশেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন, সেটিতেও শেষ উইকেটটি ছিল সাকিবের—২০১৮ সালে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। মিলটা হলো, এ দুবারই প্রতিপক্ষের ইনিংস প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শেষ হয়েছে সাকিবের মাধ্যমে।
কিংস্টনে সেই টেস্টের আগে থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে একটু অনিয়মিত সাকিব। মাঝের সময়টায় বাংলাদেশ যে ২৪টি টেস্ট খেলেছে, তার মাত্র ৭টিতেই ছিলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজেও তো তাঁর খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় যখন ভাবা হচ্ছিল, সাকিবকে বোধ হয় পাওয়া যাবে না, তখন তিনি নিজে থেকেই খেলার সিদ্ধান্ত নেন।
সাকিব নিজে মনেপ্রাণে কিছু করতে চেয়ে করতে পারেননি, এমন ঘটনা কম। এটা মনে রাখলে এই সিরিজে সাকিব বল কিংবা ব্যাটে ভালো করবেন, তা মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল!
এই ভালো করার পথে একটি জায়গায় সতীর্থদের সঙ্গে নিজের ব্যবধান আরও বাড়িয়েছেন সাকিব। না, সেটি মোটেও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়—টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পরিসংখ্যানে।
টেস্টে এ নিয়ে ১৯ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন সাকিব। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ১০ বার ৫ উইকেট নিয়ে দুইয়ে তাইজুল ইসলাম। ৮ বার নিয়ে তিনে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ৭ বার তা করে দেখিয়ে চারে মোহাম্মদ রফিক।
অর্থাৎ বাংলাদেশের এ তালিকায় শীর্ষ চারে কোনো পেসার নেই। ৪ বার ৫ উইকেট নেওয়া পেসার শাহাদত হোসেন পাঁচে। আর হ্যাঁ, ভুললে চলবে না সর্বোচ্চসংখ্যক বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া শীর্ষ দুই বোলারই বাঁহাতি স্পিনার। একসময় বাংলাদেশকে বলা হতো বাঁহাতি স্পিনারপ্রসবা দেশ। শীর্ষ দুইয়ে তাকিয়ে কথাটার সার্থকতা বোঝা যায় একটু হলেও।
টেস্টে সর্বোচ্চসংখ্যক বার ৫ উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় সাকিব মাঝামাঝি অবস্থানে। তাঁর চেয়ে বেশিবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৫ জন বোলার। অবিশ্বাস্যভাবে ৬৭ বার ৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। দুইয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ৩৭ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট। তালিকাটা পেসার ও স্পিনার মিলিয়ে।
শুধু স্পিনারদের হিসাব করলে সাকিব উঠে আসবেন শীর্ষ দশে। রিচি বেনো, আবদুল কাদির, ভগবৎ চন্দ্রশেখর, সাকলায়েন মুশতাক, বিল ও’রিলির মতো কিংবদন্তিদের চেয়েও টেস্টে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অফ স্পিনার ল্যান্স গিবসকে আজ পেছনে ফেলে স্পিনারদের এ তালিকায় সাকিব উঠে এসেছেন ১০ নম্বরে।
৯ ও ৮ নম্বরে থাকা দুজন—নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (২০ বার) ও অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেট (২১ বার) সামান্য ব্যবধানেই এগিয়ে তাঁর চেয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের প্রথম ৫ উইকেট অভিষেকের বছর দেড়েকের মধ্যে। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৩৬ রানে ৭ উইকেট এখনো তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং হয়ে আছে। সেই টেস্টের আগে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ দলের সে সময়কার হেড কোচ সাকিবকে স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে খেলানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। ৭ নম্বরে ব্যাটিং করা সাকিব সেই ভূমিকার সার্থক রূপায়ণ করেছিলেন মাঠে। মাঝখানে এক টেস্ট বিরতি দিয়েই টানা তিন টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব।
নভেম্বরে ব্লুমফন্টেইন ও সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরপর দুই ইনিংসে ৫ ও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন, এরপর এই মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্টেই আবার ইনিংসে ৫ উইকেট। এরপর টানা দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন আরও তিনবার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে টেস্টে, এর পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের দুই ইনিংসে এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে মিরপুর টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংসে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মিরপুর টেস্টে অনেক দিন পর বোলার সাকিবকে চেনা রূপে দেখা গেল। ৪০.১–১১–৯৬–৫ বোলিং বিশ্লেষণই তা কিছুটা বলছে। সবচেয়ে বেশি বলছে তৃতীয় দিনের ওই বলটি। যে বলটিতে বোল্ড করেছিলেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে।