একসময় বাংলাদেশকে দুঃসহ সব স্মৃতি উপহার দেওয়ার দৌড়ে সম্মুখসারিতেই থাকত শ্রীলঙ্কা। গত কয়েক বছরে ভালো পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে আর দুঃস্বপ্ন জাগায় না। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে সেটি বলার উপায় নেই। যেকোনো সফরকারী দলের জন্যই কঠিন পরীক্ষা এই দুই দেশের কন্ডিশন। সেই ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভয়াবহ সব রেকর্ড উপহার দিয়েছে এ দুই দেশের বিভিন্ন সফর।
২০২২ তাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক বছর। ২০ বছর পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের স্মৃতি তরতাজা থাকতেই থাকতেই আরেকটি প্রায় অসম্ভবের দেখা পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ ওয়ানডে দল।
তামিম ইকবালের দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইতিহাস রচনার পথে কাল খেলেছে দাপুটে ক্রিকেট। প্রথম ম্যাচে তবু দ্বিতীয় ইনিংসের ৪০ ওভার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল। গতকাল স্বাগতিক দলের ইনিংসের মাঝপথেই ম্যাচের ভাগ্য জেনে গিয়েছিল সবাই। তাসকিনের ৫ উইকেট ও সাকিব-মিরাজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বোলারদের দাপটের পর ব্যাটসম্যানরাও প্রভাববিস্তারী খেলা দেখিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম শতরানের জুটি গড়েছেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। অধিনায়ক তামিম ৮৭ রানে অপরাজিত থেকে ৯ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছেন।
সবে মিলে করি কাজ—নীতিতেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা ফুরিয়েছে ২০ বছরে। ২০০২ সালে প্রথম সফর দিয়ে শুরু। এরপর ২০০৮, ২০১৭ ও ২০২২ সাল। মাঝে তিন সংস্করণেই সিরিজ খেলে কোনো জয় না পাওয়া বাংলাদেশ এবার সফরই শুরু করেছে ওয়ানডে সিরিজ জিতে।
২০ বছর ও চতুর্থ চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটের অন্য পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে প্রথম সাফল্য পেতে কত বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে?
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম ওয়ানডে খেলতে গিয়েছিল ভারত। ১৯৯২ সালে প্রথম সফর করা ভারতকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় করতে আরও চারবার চেষ্টা করতে হয়েছে। ২৬ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫-১ ব্যবধানে হারিয়ে এর শোধ তুলেছিল ভারত।
কোন দলের অপেক্ষা কতদিনের
সে তুলনায় এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করতে যাওয়া দলটি বেশ সফল। ১৯৯৪ সালে প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে গিয়ে আট ম্যাচের সিরিজ ড্র করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তিন বছর পর খেলতে গিয়েই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯৬ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল ইংল্যান্ড। তবে সিরিজ শেষে সাফল্যের হাসিটা মুখে ঝোলাতে তাদের ১৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। নিউজিল্যান্ডেরও ওয়ানডে সিরিজ জিততে ১৩ বছর লেগেছে। সময়ের দিক থেকে এ দুই দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে পাকিস্তান। ২০০২ সালে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলা পাকিস্তান ২০১৩ সালে সিরিজ জেতার স্বাদ পেয়েছে। বাংলাদেশের মতো তাদেরও সেটি চতুর্থ চেষ্টা।
কোন দলের অপেক্ষা কত সিরিজের
ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই দশকের বেশি চেষ্টা করেও সিরিজ জেতার স্বাদ পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। ১৯৯৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় চারটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেও জয়ের দেখা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওদিকে ২২ বছরে পাঁচটি সিরিজ খেলেও একই ভাগ্য শ্রীলঙ্কার। দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঁচটি সিরিজ খেলেও জয় না পাওয়ার রেকর্ড জিম্বাবুয়েরও। তবে তাঁদের অপেক্ষার বয়স ১৭।