১০ বছরের অপেক্ষা ফুরোল পঞ্চম ফাইনালে
অপেক্ষাটা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। সেবারই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। এত কাছে তবু এত দূরের স্বাদও সেবারই প্রথম পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর একের পর এক ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। প্রতিবারই হতাশা নিয়েই ফিরেছে দল। আজ আর সেটা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
এই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। বৃষ্টি আইন ও আয়ারল্যান্ডের কন্ডিশন মিলে কঠিন এক লক্ষ্য তাড়া করেই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এমন অর্জনের দিনে পুরোনো হতাশার স্মৃতিও খুব একটা হৃদয়ে হাহাকার জাগায় না। ডাবলিনের ফাইনালের আনন্দের রেশ থাকতে থাকতেই আগের চার ওয়ানডে ফাইনালের কথা একটু স্মরণ করে নেওয়া যাক।
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, ২০০৯
বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ১৫২
শ্রীলঙ্কা: ৪৮.১ ওভারে ১৫৩/৮
ফল: শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে জয়ী
ভয়াবহ ব্যাটিং নিদর্শনে ৫০ তুলতেই ৫ উইকেট গায়েব হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাত্র ১৫২ রান তুলতে পেরেছিল দল। প্রথম বলেই জয়াসুরিয়াকে রান আউট করে দিলেন সাকিব। স্বপ্নের এক স্পেল দেখালেন নাজমুল। ৮ ওভার শেষে ৬ রানে শ্রীলঙ্কার প্রথম ৫ উইকেট নেই! কুমার সাঙ্গাকারা ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় সাকিবের জোড়া আঘাতে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরে। ১১৪ রানে ৮ উইকেট খোয়ানোর পর মুরালিধরন ব্যাটিংয়ে নামেন। রুবেল হোসেনকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে ১৬ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৩৩ রান করে বাংলাদেশের মুঠো থেকে শিরোপা কেড়ে নিলেন মুরালি।
এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২০১২
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৩৬/৯
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৪/৮
ফল: পাকিস্তান ২ রানে জয়ী।
পাকিস্তানকে জাপটে ধরেছিল বাংলাদেশ দল। ২০৬ রানে ৯ উইকেট হারানো পাকিস্তান ২৩৬ রান করতে পেরেছিল শাহাদাত হোসেনের সুবাদে। পাকিস্তান ইনিংসের শেষ ওভারে ১৯ রান দিয়েছিলেন এই পেসার। জবাবে তামিম-সাকিবে ৩ উইকেটে ১৭০ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু রান ও বলের মধ্যে দূরত্ব বাড়তেই থাকল। সেটা শেষ ওভারে ৯ রানের দূরত্বে দাঁড়াল। মূল ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ মাত্র দুই বল স্ট্রাইকে থাকতে পারলেন। ১ বলে ৪ রানের সমীকরণের সামনে দাঁড়ালেন ওই শাহাদাতই! চাপের মুহূর্তে ব্যাটেই লাগল না বল, এল মাত্র ১ রান। সাকিব-মুশফিকদের কান্নার ছবিটা এখনো ভুলতে পারেনি বাংলাদেশের ক্রিকেট।
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, ২০১৮
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২২১
বাংলাদেশ: ৪১.১ ওভারে ১৪২
ফল: শ্রীলঙ্কা ৭৯ রানে জয়ী।
ইনিংসের শুরুতে ৯ বলের এক ঝড় তুললেন কুশল মেন্ডিস। কঠিন উইকেটে সে ইনিংসটাই পার্থক্য করে দিল। মাঝ পথে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়ে ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেলেন সাকিব। ২২২ রানের লক্ষ্য পেয়েও মানসিকভাবে তাই পিছিয়ে পড়েছিল দল। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুশফিকের বিদায়ের পর আর কোনো সঙ্গী পাননি মাহমুদউল্লাহ। অভিষিক্ত শেহান মাদুশঙ্কার হ্যাটট্রিক দিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। মাদুশঙ্কার শেষ শিকার হয়ে ফিরেছেন ৭৬ রান করা মাহমুদউল্লাহ।
এশিয়া কাপ, ২০১৮
বাংলাদেশ: ৪৮.৩ ওভারে ২২২
ভারত: ৫০ ওভারে ২২৩/৭
ফল: ভারত ৩ উইকেটে জয়ী।
১২০ রানের উদ্বোধনী জুটিকে ম্লান করে দিলেন লিটন দাসের অসাধারণ এক সেঞ্চুরি। ১১৭ বলে ১২১ রানের সে ইনিংসের পর বাংলাদেশ অলআউট ২২২ রানে। এই পুঁজি নিয়েও দুর্দান্ত বোলিং করেছে বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিতে লাগলেন বোলাররা। ৪৯তম ওভারে মোস্তাফিজ উইকেট তুলে নিলেন, সে ওভারে মাত্র ৩ রান দিলেন। শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল ভারতের। মাহমুদউল্লাহ ম্যাচটিকে শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। কিন্তু শেষ বলে লেগ বাই ঠেকানো গেল না। আরেকটি ফাইনাল থেকে হতাশা নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ।
এ চারটি ফাইনাল নিয়ে গল্পগাথা লেখার দিন শেষ হলো আজ। অবশেষে মানসিক এক বাধা কাটাল বাংলাদেশ। কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জয় করে দেখাল এ দল।