হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

বাংলাদেশকে হারানোর আনন্দ স্কটিশদেরছবি: এএফপি

‘বাংলাদেশ কি রান তাড়া করতে পারবে?’

লক্ষ্য যখন মাত্র ১৪১, তখন এমন প্রশ্ন যেন করার জন্য করা। স্কটল্যান্ডের ইনিংস শেষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করা প্রশ্নটি তেমন এক প্রশ্ন বলেই মনে হচ্ছিল। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই সে প্রশ্নকে দারুণ প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছিল। ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। উইকেটের ঘরে ৩ না হওয়ায় আম্পায়ার হাসান রাজার ভূমিকা আছে। জশ ডেভির ইনসুইঙ্গার প্যাডে আঘাত হানার পরও সাড়া দেননি পাকিস্তানি আম্পায়ার। স্কটল্যান্ড রিভিউ নেওয়ার পর দেখা গেল, আম্পায়ার যদি আউট দিতেন, তাহলে সে সিদ্ধান্ত বদলানো যেত না।

এতেও হতোদ্যম হয়নি স্কটল্যান্ড। দারুণ নিয়ন্ত্রিত ও বুদ্ধিদীপ্ত টি-টোয়েন্টি বল করে গেলেন স্কটিশ বোলাররা। আর সে চাপে বাউন্ডারির জন্য হাপিত্যেশ করতে করতে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহরা। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। হার দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ।

ছন্দে ছিলেন না সাকিব
ছবি: এএফপি

দ্বিতীয় বলে চার মেরে শুরু করা সৌম্য সরকার পরের ওভারেই সে শটের পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন সীমানায়। চেপে ধরা স্কটিশ পেসারদের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পেতে এগিয়ে এলেন লিটন দাস। কিন্তু তাঁর শট মিড অফ পেরোয়নি। সে ধাক্কা সামলাতে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম তাই মুখ গুঁজে টিকে থাকায় মন দিলেন। ৮ ওভার শেষেও তাই বাংলাদেশের রান ছিল মাত্র ৩৪।

নবম ওভারে গিয়ে প্রথম মনে হলো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হচ্ছে। ১৮ বলে ৯ রান করা মুশফিক ওভারের তৃতীয় বলে প্যাডল করতে গেলেন। ঠিকমতো ব্যাটে লাগেনি, কিন্তু দুই রান পেতে কষ্ট হয়নি মুশফিককে। তবে বাংলাদেশকে মোমেন্টাম এনে দিল পরের দুই বল। চতুর্থ বলটা লেগ স্টাম্পে পেয়েই করলেন প্রিয় সুইপ। স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়ল বল। পরের বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে করেছিলেন মাইকেল লিস্ক। এবার মুশফিক করলেন স্লগ সুইপ। এবার বল আশ্রয় নিল গ্যালারিতে। ১৮ রান এলে সে ওভারে।

মুশফিকও দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারেননি
ছবি: আইসিসি টুইটার

তবু ১০ ওভার শেষেও বাংলাদেশের রান রেটে ৬ ছুঁতে পারেনি। শেষ ৬০ বলে ৮২ রানের লক্ষ্য নিয়ে পানি পানের বিরতি থেকে ফিরল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের নায়ক ক্রিস গ্রিভস বোলিংয়ে এলেন। প্রথম বলেই বিদায় নিলেন সাকিব। ২৮ বলে ২০ রানের ঘাম ঝরানো ইনিংস শেষ হলো সাকিবের।

মুশফিকুর রহিমের ইনিংসটি সে তুলনায় ভালো ছিল। কিন্তু চাপে পড়লে সেটা কাটানোর পুরোনো অভ্যাসই ফেরাল মুশফিককে। গ্রিভসের পরের ওভারের প্রথম বলে আবার প্যাডল স্কুপ করতে গেলেন। কিন্তু লেগ স্পিনের বদলে গুগলি করলেন গ্রিভস। বোল্ড হলেন মুশফিক। ৩৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংসে ওই দুই ছক্কা ছাড়া একটা চারও ছিল সাবেক অধিনায়কের।

সৌম্য ফিরেছেন শুরুতেই
ছবি: আইসিসি টুইটার

মুশফিক ফেরার পর ২৩ বলে ৩০ রান এনেছেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩৭ রান। মার্ক ওয়াটের প্রথম তিন বল থেকে এল মাত্র ২ রান। এর মধ্যে তৃতীয় বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন আফিফ। সে ওভার শেষে সমীকরণ দাঁড়াল; ১২ বল, ৩২ রান, ৫ উইকেট! মাহমুদউল্লাহর উইকেটের বিনিময়ে ১৯তম ওভার থেকে এল ৮ রান।

শেষ ওভারেই যা একটু নাটক জমল। ২৪ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। সেটা তিন বলে ১৮ রানে দাঁড়াল। চতুর্থ বলে ছক্কা মারলেন মেহেদী। পরের দুই বলেও ছক্কা দরকার ছিল। পঞ্চম বলটাও ভালো হলো না সাফিয়ান শরিফের। কিন্তু সে বলে এল চার রান। অর্থাৎ শেষ বলটা বৈধ হলেই হার বাংলাদেশের। মেহেদী সে বলে শুধু এক রানই নিতে পারলেন। জয় থেকে ৭ রান দূরেই শেষ হলো বাংলাদেশের ইনিংস।

১৯ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন মেহেদী
ছবি: আইসিসি টুইটার

এর আগে স্কটল্যান্ডের ১৪০ রানের ইনিংসটি ছিল শুধু গ্রিভসময়।

ক্রিস গ্রিভস এর আগে মাত্র একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। ৮ অক্টোবর পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ব্যাট করার সুযোগ হয়নি। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিই খেলেছেন মাত্র ৪টি। তাতেও মাত্র দুবার ব্যাট করতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ ২৭ রানের ইনিংসটি ছিল আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর কোনো মাথাব্যথা সম্ভবত নেই। তাঁকে তো আর ব্যাটিং দক্ষতার জন্য দলে রাখা হয়নি। স্কটল্যান্ড দলে তাঁর জায়গা মিলেছে কবজির জোরে। লেগ স্পিনটা বেশ ভালোই করেন গ্রিভস।

সেই গ্রিভস আজ স্কটল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে উঠলেন ব্যাট হাতে। ১১তম ওভারে নেমেছিলেন। ৫ বল ও ১ রান পরই দলের ষষ্ঠ উইকেটের পতন। থর হরি কম্প! ১ উইকেটে ৪৫ রানে থাকা একটা দল ২৬ বলের মধ্যে মাত্র ৮ রান যোগ করতে না করতেই হারিয়ে ফেলল ৫ উইকেট। এক শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তাই ভালোভাবেই জেগেছিল।

ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন গ্রিভস
ছবি: এএফপি

পরের ৮.৩ ওভারে যা হলো, স্কটিশ সমর্থকদের মনে জায়গা পাকা করে নিলেন গ্রিভস। মার্ক ওয়াটের সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে এনে দিলেন ৫১ রান। মোস্তাফিজের বলে শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে দলকে ১৩১ রানে নিয়ে গেলেন। পেশাদার ক্যারিয়ারেই যার সর্বোচ্চ ইনিংস ২৭, সেই গ্রিভসই ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৮ বলে করে ফেললেন ৪৫ রান। সাকিব ও মেহেদী হাসান মিলে ৮ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে যে ধস নামিয়েছিলেন, সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে দলকে বের করে এনেছেন ওই গ্রিভস।

শেষ ৮ ওভারে ৮৫ রান তুলেছে স্কটল্যান্ড। তিন বলের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে সাকিবের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হওয়ার ঘটনাও ততক্ষণে কিছুটা আড়ালে।