মুস্তাফিজের আইপিএল-যাত্রা
‘অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স তো ভালোই হলো। এমন গুছিয়ে কথা বলেন, জানা ছিল না’—প্রশংসা শুনে মৃদু হাসলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবে মুখের অভিব্যক্তি যেন বলছিল, ‘এ আর এমন কী’! বাংলাদেশ দলের বাঁহাতি পেসার পরশু রাতে এসেছিলেন এবিসি রেডিওর ‘সেন্টার ফ্রেশ ম্যাজিক অব মুস্তাফিজ’ অনুষ্ঠানে। সংবাদমাধ্যমের সামনে বরাবর লাজুক থাকলেও সেখানে কিন্তু ভালোই ‘কথার জাদু’ দেখালেন কাটার-মাস্টার!
ছুটি কাটিয়ে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ৩ এপ্রিল। দিনের বেলায় ভারতীয় দূতাবাসে দৌড়াদৌড়ি, নিজের গোছগাছ, রাতে রেডিও অনুষ্ঠান—বেশ ব্যস্ততায়ই কেটেছে পরশুর দিনটা। আর কাল বিকেলে তো ভারতেই চলে গেলেন। সামনে আইপিএল-অভিযান, খেলবেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলতে কাল ভারতে গেছেন সাকিব আল হাসানও।
ভারতের জনপ্রিয় ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে এই প্রথম খেলতে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ। ১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে তাঁকে নিয়েছে হায়দরাবাদ। আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালের পর আইপিএলে মুস্তাফিজ ষষ্ঠ বাংলাদেশি খেলোয়াড়। রোমাঞ্চটা স্পষ্ট তাঁর কণ্ঠে, ‘এত বড় একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, ভালো তো লাগছেই।’
বড় টুর্নামেন্ট, আশপাশে থাকবে না পরিচিত তেমন কেউ—একটু কি স্নায়ুচাপ অনুভব করছেন না? কাল বিমানবন্দরে যাওয়ার আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে সাংবাদিকদের বললেন, ‘ভয় পাচ্ছি না। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, যেন ভালো করতে পারি।’
আইপিএলে দল পাওয়ার পর কথা প্রসঙ্গে এর আগে একবার বলেছিলেন, হায়দরাবাদের চেয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলতে পারলেই বেশি ভালো হতো। কারণ দুটি—কলকাতায় খেলেন জাতীয় দলের সতীর্থ সাকিব আল হাসান। আরেকটি ভাষাগত সুবিধা। কাল ভারতে উড়াল দেওয়ার আগেও সেই আফসোসের পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের দলে খেলতে পারলে খুবই ভালো হতো। একসঙ্গে থাকতে পারতাম, খেলতে পারতাম...।’
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট মানেই বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির সম্মিলন, সারা বিশ্বের ক্রিকেট তারকাদের এক ছাদের নিচে আসা। বল হাতে বিধ্বংসী হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন মুস্তাফিজের সমস্যা হতে পারে এখানেই। জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজারও তাই ধারণা, ‘ও হিন্দি-ইংরেজিতে অতটা অভ্যস্ত নয়। খেলা নিয়ে সমস্যা না হলেও এটা একটা সমস্যা হলেও হতে পারে।’ তবে তাঁর আশা, ‘দলের সবাই নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবে। তা ছাড়া মুস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে ও এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়।’
মাশরাফি সব সময়ই বলেন, বাংলাদেশ দলের হয়ে ১০-১৫ বছর খেলবেন মুস্তাফিজ। আপাতত তাঁর চাওয়া একটাই, ‘সে খেলবে বিদেশি খেলোয়াড়ের কোটায়। সব ম্যাচে খেলার সুযোগ পাবে কি না জানি না। পেলে সে-ই হবে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।’
গত বছরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আন্তর্জাতিক অভিষেক মুস্তাফিজের। তবে যে সংস্করণ দিয়ে তাঁর আগমন, সেটিতে সাফল্য পাচ্ছিলেন না বলার মতো। অভিষেক ম্যাচে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। এরপর তো ওই ‘২’-এর চক্রেই আটকে গেলেন! পরের ১১টি-টোয়েন্টিতে আরও ছয়বার ২ উইকেট। অবশেষে ইডেন গার্ডেনে ভাঙলেন চক্র। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তুলে নিলেন ২২ রানে ৫ উইকেট। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এটি সেরা বোলিং। মুস্তাফিজ বলছিলেন, ‘উইকেট যেমনই হোক না কেন, সেদিন আমার লক্ষ্য ছিল ভালো জায়গায় বল করা। সেটিই করেছি। বারবার বলি, উপরওয়ালা ভালো সময় দিয়েছেন। এই কারণে ৫ উইকেট পেয়েছি।’
চোটের কারণে বিশ্বকাপের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে ড্রেসিংরুমে। মাঠে ফিরেই দেখালেন ‘জাদু’। ৩ ম্যাচে ৯ উইকেট, টুর্নামেন্টের সপ্তম সেরা বোলার। তবু আইসিসি ঘোষিত বিশ্বকাপের সেরা একাদশে মুস্তাফিজ কি না দ্বাদশ খেলোয়াড়! মুস্তাফিজ অবশ্য এ ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে রাজি হলেন না।
আইসিসির দলে না হলেও ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর একাদশে ঠিকই আছেন বাংলাদেশের বোলিং-বিস্ময়। শুধু কাগজে-কলমের দলে নয়, মুস্তাফিজ নিশ্চয়ই চাইবেন হায়দরাবাদের একাদশেও নিয়মিত হতে।