মাছের সেবা করতে গিয়ে আইপিএল খেলতে পারছেন না আর্চার
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট, টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে সিরিজটাও হেরে বসেছে ইংল্যান্ড। তৃতীয় ওয়ানডেতে স্যাম কারেনের বীরত্ব ৭ রানের জন্য বৃথা গেছে। এত সূক্ষ্ম ব্যবধানের হারে নির্ঘাত জফরা আর্চারের অভাব আরও ভালোভাবে টের পেয়েছে ইংল্যান্ড। শুধু বল হাতেই ভয়ংকর বলে নয়, শেষ দিকে ব্যাটিংটাও যে মন্দ নয় এই ফাস্ট বোলারের।
টেস্ট সিরিজেও আর্চারের সেবা পুরোটা পায়নি ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি সিরিজের অবশ্য পাঁচ ম্যাচেই ছিলেন আর্চার। কিন্তু টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হতেই দেশে ফিরে গেছেন, খেলেননি ওয়ানডে সিরিজ। শুধু যে জাতীয় দলের দায়িত্ব থেকেই সরে গেছেন এমন নয়, হাতের চোট তাঁকে আইপিএল থেকেও দূরে ঠেলে দিয়েছে।
আর্চারের চোটের ধরনটা নিয়ে আগেও প্রশ্ন ছিল। অস্ত্রোপচার করে ফিরে এসেও আবার চোটে পড়াটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। এর মধ্যেই জানা গেল কীভাবে চোটে পড়েছেন আর্চার। মাছের ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে হাতে চোট পেয়েছিলেন এই ফাস্ট বোলার।
অদ্ভুত কারণে জাতীয় দলের ম্যাচ খেলতে না পারার ঘটনা আর্চার আগেও দেখিয়েছেন। করোনা বিরতি থেকে আবার যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরল, তখনই দেখা গিয়েছিল।
জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা অবস্থায় হঠাৎ বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ কারণে শাস্তি হিসেবে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল এক টেস্ট থেকে। তবু মাছের সেবা করতে গিয়ে হাতে চোট পাওয়ার ঘটনা একটু বিরল।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক অ্যাশলি জাইলসই জানিয়েছেন এই বিস্ময়কর ঘটনার কথা। বিবিসির টাফারস অ্যান্ড ভন শোতে গিয়ে সাবেক স্পিনার বলেছেন, ‘শুনে খুবই হাস্যকর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের মতো শোনাবে এবং আমি এটা বলার পর টুইটারে কী শুরু হবে সেটা বুঝতে পারছি। সে ঘর ধোয়ামোছা করছিল। ওর একটা মাছের ট্যাংক আছে। হাত থেকে ট্যাংক পড়ে যায় এবং তার হাত কেটে যায়। এরপর ওর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেখান থেকে ভালোভাবেই ফিরেছিল সে। ভারত সফরে ভালোই সামলাচ্ছিল। ও যখন এসেছে, ওর শুশ্রূষা করা হয়েছে এবং ওর আঙুলে কোনো ক্ষত ছিল না। ওর খেলতে কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু যেহেতু কনুইয়ে একটা ইনজেকশন নিতে সে ফিরে এসেছে এবং আঙুল একটু অসাড় লাগছে, তাই একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করেছে।’
ট্যাংক ভেঙে হাতে কাচ ঢোকার ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসের। মার্চে এসে আবার বিশেষজ্ঞ দেখানোর পর নতুন করে এক ভয়াবহ খবর জানা গেছে। জাইলস জানিয়েছেন, ‘তারা (নতুন করে) অস্ত্রোপচার করেছেন এবং আমার ধারণা, কাচের একটা ছোট টুকরা ভেতরে পেয়েছেন। হ্যাঁ, ও সেরে উঠেছিল কিন্তু মাছের ট্যাংকের ক্ষুদ্র একটা অংশ ওর আঙুলে রয়ে গিয়েছিল। তাই এটাই করা দরকার ছিল। আমাদের হাতে বেশ বড় একটা সময়ও আছে (জাতীয় দলের খেলা নেই)। এটাই সত্যি, এর মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র নেই।’
জাইলসের এভাবে বারবার ‘কোনো ষড়যন্ত্র নেই’ বলার কারণ, অনেকেই সন্দেহ করছিলেন আর্চারকে আইপিএল খেলতে দিতে চাইছে না ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। এ বছরের শেষ দিকে ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এই অবস্থায় আর্চারকে তাজা রাখতে চাইতেই পারে ইসিবি। যদিও জাইলস অমন কিছুর কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। আর্চার আইপিএলের শেষ দিকে খেলবেন কি না, এমন প্রশ্নে এখনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এটাও বলেছেন, ‘আপাতত আমাদের চিন্তা হলো আর্চারকে চোটমুক্ত রাখা এবং ও যে কাজে সেরা—জোরে বল করা এবং বোলিং উপভোগ করা, সেটা যেন করতে পারে তার জন্য ওকে প্রস্তুত রাখা। কনুইয়ের চোট নিশ্চিতভাবেই তাকে সেটা করতে বাধা দিচ্ছিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজজুড়ে ওর অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে এবং ব্যথানাশক ছাড়া ও খেলতে পারছিল না। আপনাকে এসব বিষয় খুব সাবধানে সামলাতে হবে। কারণ, এটাও ওর আঙুলের মতো। খুব ছোট একটা ব্যাপার মনে হয়, কিন্তু যখন আপনি একজন ফাস্ট বোলার, তখন ডান হাতের মধ্যমা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আইপিএলে গত মৌসুমে রাজস্থান রয়্যালসের বোলিংকে প্রায় একাই টেনেছেন আর্চার। এ মৌসুমে ক্রিস মরিস ও মোস্তাফিজুর রহমানকে দলে নিলেও আর্চারকে ছাড়া চলার কথা চিন্তাও করতে পারছে না দলটি।
কিন্তু রাজস্থান সমর্থকদের মন খারাপ করে দিতে পারে জাইলসের কথা, ‘ওর কনুইয়ের ব্যাপারটা খুব সাবধানে সামলাতে হবে আমাদের। আমাদের খুব ভালো একটা চিকিৎসক দল আছে। আগামী কয়েক মাসে কী হবে তা বলতে পারছি না (আইপিএল খেলার যোগ্য হবেন কি না), কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ওর দুটি সমস্যা আগে দূর করা এবং ওকে মাঠে ফেরানো। ও যা করে, অনেক শক্তি প্রয়োজন হয় এ জন্য। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যতটা রক্ষণশীলভাবে এগোনো যায়। কারণ জফরার জন্য এটা শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সবার প্রথমে ওকে দেখভাল করতে হবে আমাদের। আমি নিশ্চিত ও খুব দ্রুত ভালো হয়ে যাবে। যতটা সম্ভব দ্রুত ফিরে আসবে।’
এই ফিরে আসাটা আইপিএল চলার সময়ে হবে কি না, এটাই বড় প্রশ্ন।