বাংলাদেশের এই কীর্তি দেখাতে পারেনি কেউ
নিয়ন্ত্রণ!
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি এ শব্দই উচ্চারিত হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৯টি টেস্ট খেলে সব কটিতেই হেরে যাওয়া বাংলাদেশ যে ২০তম বছরে এসে জয়ের আশা করতে পারছে শেষ দিনে, তার পেছনে ভূমিকা রেখেছে ওই ভাবনা। বাংলাদেশের পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের স্বপ্নটা এখন অনেক উজ্জ্বল।
বাংলাদেশের পেসাররা আজ কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন, সেটি টিভি পর্দাতেই দেখা গেছে। বাংলাদেশের পেসারদের এত সময় ধরে মাথা ঠান্ডা রেখে লাইন লেংথ মেনে বল করতে দেখা যায় না খুব একটা। কিন্তু তাই বলে সেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং সবার সেরা? পরিসংখ্যান কিন্তু সেটাই বলছে। হিসাব রাখা হয়েছে, এমন ম্যাচের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং কোনো দেশের পেস আক্রমণই করেনি!
প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অলআউট করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন দুর্দান্তভাবে। আজ গুটিয়ে যাওয়ার আগে ১৩০ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় সেশনের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন। তবু প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিউজিল্যান্ড রানের ঘাটতি পুষিয়ে নিয়েছিল। উইল ইয়াং ও রস টেলর দলকে লিডও এনে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের পেসাররা হাল ছাড়েননি। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যাওয়ার পুরস্কার ইবাদত তুলে নিয়েছেন দিনের শেষভাগে। ৭ বলের মধ্যে ইয়ং (৬৯), হেনরি নিকোলস (০), টম ব্লান্ডেলকে (০) আউট করে ম্যাচের রং বদলে দিয়েছেন এই পেসার। ৫ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৭ রানের লিড নিয়ে দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড।
দিন শেষে বাংলাদেশের পেসারদের এমন সাফল্যের রহস্য জানতে চাওয়া হয়েছিল পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের কাছে। সাধারণত স্পিন দিয়ে আক্রমণ সাজানো বাংলাদেশের বোলিংয়ে হঠাৎ পেসারদের দাপট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
ইবাদতরা কেন আজ সফল, সে ব্যাখ্যায় গিবসন বলেছেন, ‘সাধারণত স্পিনারদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল আমরা। উইকেট তাদের সাহায্য করলে তারা উইকেট পায়। তবে মেহেদী খেলাটা আটকে রাখার কাজটা খুব ভালো করছে। আমি জানি না কেন (পেসাররা ভালো করছে), কে জানে হয়তো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা আমাদের খুব একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আমরা গত দুই দিন ধরে খুব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছি। একজন বোলিং কোচ হিসেবে আমার এটা দুর্দান্ত লাগছে।’
বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে, সেটা জানিয়েছে ক্রিকেটের পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকভিজ। আজ বাংলাদেশের তিন পেসার ৩৭ ওভার বল করেছেন। একটি নো বলসহ ২২৩টি ডেলিভারি ছুটেছে ইবাদত, তাসকিন ও শরীফুলের হাত থেকে। এর মধ্যে ৫০টি বলই ছিল স্টাম্পে। অর্থাৎ ২২.৪ শতাংশ বলই কোনো বাধা না থাকলে স্টাম্পে আঘাত হানত বা স্টাম্প ছুঁয়ে যেত।
টেস্টে কাজটা করা কত কঠিন, সেটা এবারের অ্যাশেজে ইংলিশ পেসাররা বুঝছেন। প্রতিটি টেস্ট শেষেই জিমি অ্যান্ডারসন-ক্রিস ওকসরা স্টাম্পে বেশি বল করতে না পারার আক্ষেপে পুড়ছে ইংল্যান্ড। ক্রিকভিজ জানাচ্ছে, তাদের তথ্যভান্ডারে যে তথ্য আছে, সে অনুযায়ী কোনো পেস আক্রমণই, (অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণও) নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এতটা নিখুঁতভাবে স্টাম্পকে আক্রমণ করেনি।
এমন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সব সংস্করণ মিলে প্রথম জয়ের আশা করছে বাংলাদেশ। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে গিবসন তাঁর ছাত্রদের ওপর আস্থা রাখছেন, ‘আমাদের সেটা জানা আছে। আমাদের প্রতিবার এটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি সেটা। কিন্তু আমরা আগে থেকেই এ নিয়ে ভাবছি না। আমাদের মেডিকেল দল ছেলেদের সতেজ রাখুক, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদত অনেক লম্বা স্পেলে বল করেছে। তাসকিনও একটু ক্লান্ত।’
তাঁর আশা, আগামীকালও এমন নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ, ‘কাল ছেলেদের সতেজ হয়ে নামাটা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কাল আবারও সুশৃঙ্খল বোলিং করতে পারব এবং আজ শেষ দুই ওভারে যে নিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছা দেখিয়েছি, সেটা দেখাতে পারব। তারপর দেখা যাবে কী হয়। কিন্তু আগেভাগেই আমরা কোনো কিছু ভেবে নিচ্ছি না। আমরা জানি, কত অর্জন অপেক্ষা করছে। আমরা যতটা সম্ভব সবকিছু সহজভাবে করতে চাই এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং করব এবং আজকের মতো উইকেট নেব। এরপর ম্যাচের ভাগ্যে কী লেখা থাকবে, সেটা দেখা যাবে।’