বন্দুকের মুখে তুলে নেওয়া হয়েছিল ম্যাকগিলকে, জানা গেল ২০ দিন পর
পুরোটা ক্যারিয়ার বলতে গেলে শেন ওয়ার্নের ছায়ায় ঢাকা ছিলেন। বলা হয়, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল অন্য সময়ে জন্মালে হয়তো শেন ওয়ার্নের কাছাকাছি পর্যায়ের কেউই হতেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বুঝি এতটাই আড়ালে থেকে গেলেন ম্যাকগিল। না হলে অস্ট্রেলিয়ার ৫০ বছর বয়সী সাবেক লেগ স্পিনার যে অপহরণের শিকার হয়েছেন, সে খবর কেন এত দিন পর সংবাদমাধ্যমে আসবে!
ঘটনাটা ঘটেছে গত ১৪ এপ্রিল। অপহরণের পর বন্দুকের মুখে ঘণ্টাখানেক আটক করে রাখা হয় ম্যাকগিলকে, মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সে খবর এত দিন পর সংবাদমাধ্যমে এসেছে পুলিশ আজ অপহরণের অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর। অপহরণের ঘটনাটা ঘটেছে সিডনিতে যে অঞ্চলে ম্যাকগিলের বাড়ি, সেখানেই—অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের পর এমনটাই জানিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ান ওয়েবসাইট নিউজডটকমডটএইউ-র প্রতিবেদন, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যেই তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল।
ম্যাকগিল এখন কেমন আছেন, তা পুলিশ জানায়নি। অস্ট্রেলিয়ান সাবেক লেগ স্পিনার নিজেও এ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি।
পুলিশের ভাষ্য, গত ১৪ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে সিডনির উত্তরের উপশহর ক্রেমোর্নের এক ব্যক্তি ম্যাকগিলের পথ আটকান। নিউজডটকমডটএইউ জানাচ্ছে, ওই ব্যক্তির বয়স ৪৬ বছরের মতো। এরপর আরও দুজন এসে অস্ট্রেলিয়ান সাবেক লেগ স্পিনারকে ঘিরে ধরেন। জোর করে তাঁকে গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিঞ্জেলি নামে আরেক উপশহরে।
ম্যাকগিলকে গাড়িতে উঠিয়ে নেওয়া দুজনের সঙ্গে ব্রিঞ্জেলিতে আরেক অপরিচিত মানুষ যোগ দেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনজন মিলে বন্দুকের নলের সামনে ম্যাকগিলকে লাঞ্ছিত করেছেন। হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর ম্যাকগিলকে আবার গাড়িতে উঠিয়ে বেলমোর অঞ্চলে এনে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের বিবৃতি, ঘটনাটা ১৪ এপ্রিল ঘটলেও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয় ছয় দিন পর। এরপর রাজ্য অঞ্চলের ডাকাতি ও গুরুতর অপরাধবিষয়ক ইউনিটকে তা জানানো হয়। স্ট্রাইক ফোর্স কেইনের অধীনে তদন্ত হয়। দুই সপ্তাহের তদন্তের ফল, আজ বুধবার ভোরে চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের বয়স ২৭, ২৯, ৪২ ও ৪৬ বছর বলে জানা গেছে। তবে তদন্ত এখনো চলমান বলেই জানাচ্ছে পুলিশ।
অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে ম্যাকগিল খেলেছেন প্রায় ১৯ বছর। কিন্তু সে সময়ে কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন ছিলেন বলে দলে সেভাবে জায়গা পাওয়া হয়নি তাঁর। এমনই যে, প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে ম্যাকগিল ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৩টি! এই সময়ে টেস্ট খেলেছেন ৪৪টি।
বোলিংয়ে প্রতি ওভারে একটা ‘বাউন্ডারি বল’ দেন, ব্যাটিং পারেন না, ফিল্ডিংয়েও তথৈবচ...এসব বিবেচনা করেই ওয়ানডেতে তাঁকে নেওয়া হতো না। তারওপর ওয়ার্ন থাকায় দুই লেগ স্পিনার খেলানোর বিলাসিতা অস্ট্রেলিয়া কখনো দেখাতে রাজি ছিল না। তবে মজার ব্যাপার, যে তিন ওয়ানডে খেলেছেন, তার মধ্যে একটিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন ম্যাকগিল। সে ম্যাচে ১৯ রানে ৪ উইকেটসহ সব মিলিয়ে ৩ ম্যাচে ম্যাকগিলের উইকেট ৬টি। টেস্টে উইকেট ২০৮টি।
টেস্টেও ওয়ার্নের সঙ্গে ম্যাকগিল—দুই লেগস্পিনার খেলানোয় খুব একটা আগ্রহী শুরুতে ছিল না অস্ট্রেলিয়া। তবে ২০০৫ সালে সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুজন মিলে ১৩ উইকেট (ওয়ার্ন ৫, ম্যাকগিল ৮) নেওয়ার পর যখন বোঝা যায়, ওয়ার্ন-ম্যাকগিল একসঙ্গে চলতে পারে...তারপর দুজনকে একসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে দেখার আশা জেগেছিল।
ফল? ক্যারিয়ারে ৪৪টি টেস্টের ১৬টিতে ওয়ার্নের সঙ্গে একই দলে খেলেছেন ম্যাকগিল।
মোটেও খারাপ করেননি, ম্যাকগিল বরং ভালোই করেছেন। ক্যারিয়ারের ২০৮ উইকেটের ৮২টি ওই ১৬ টেস্টে। ক্যারিয়ারের বোলিং গড় যেখানে ২৯.০২, সেখানে ওয়ার্নের পাশে খেলার সময়ে ম্যাকগিলকে উইকেটপ্রতি গড়ে রান খরচ করতে হয়েছে ২২.১০ করে। ক্যারিয়ারে ১২বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন, তার ৫ বার এই ১৬ টেস্টে।
২০০৭ সালে ওয়ার্ন অবসর নেওয়ার পর যখন ভাবা হচ্ছিল, ৩৬-এ এসে ম্যাকগিল এবার সুযোগ বেশি পাবেন, তখনই কার্পাল-টানেল সিনড্রোমে (হাতের অসারতা জাতীয় রোগ) ভোগেন ম্যাকগিল। কবজির অস্ত্রোপচারের পর ফেরেন ঠিকই, কিন্তু নিজেই বুঝতে পারেন, এই বোলিং দিয়ে চলবে না। ২০০৮ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অ্যান্টিগায় দ্বিতীয় টেস্টের পর নিজেই তাই বিদায় নিয়ে নেন।
একটু চুপচাপ, নিজের মতো করে থাকা দার্শনিক ঘরানার মানুষ ম্যাকগিলের বই পড়ার অভ্যাস। একবার নাকি পাকিস্তান সফরে গিয়ে ২৪টা উপন্যাস পড়েছেন! তাঁকে হঠাৎ এভাবে শিরোনামে আসতে হলো! তা-ও ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর।