পৃথ্বী জানান দিয়ে রেখেছিলেন আগেই
>টেস্ট অভিষেকেই ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন পৃথ্বী শ। তিনি যে বিশেষ এক প্রতিভা, তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল ব্যাট হাতে তাঁর বিভিন্ন কীর্তিতে!
বলা হচ্ছে, সে ভারতের ‘নেক্সট বিগ থিং’। তা কত বড়? খুব বেশি না, উচ্চতায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি আর ওজন মেরেকেটে ৫৫ কেজি। বয়সটাও কাঁচা। নভেম্বরে পা রাখবেন উনিশে। গায়ে এখনো কৈশোরের গন্ধ।
অথচ আঠারোর এই ছেলেটাই কিনা উইলোকে ছড়ি বানিয়ে শাসন করলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের। ৫৬ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর ৯৯ বলে সেঞ্চুরি। টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকেই এক শর-নিচে বল খেলে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার কীর্তি ছিল দুটি—শিখর ধাওয়ান (৮৫ বল) ও ডোয়াইন স্মিথ (৯৩ বল)। পৃথ্বী এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। সেটিও আবার অভিষেক টেস্টে অভিষেক ইনিংসেই! এমনিতেই তো আর বলা হচ্ছে না, ছেলেটা শচীন টেন্ডুলকারের ‘ক্লোন’, বিরাট কোহলি পরবর্তী সময়ের ‘ভবিষ্যৎ’।
ভারতীয় ক্রিকেট কিন্তু পৃথ্বীর ব্যাটে ভবিষ্যৎ দেখেছে বেশ আগেই। মুম্বাইয়ের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা এই কিশোর চার বছর বয়সে হারায় মাকে। বান্দ্রার রিজভি স্কুলে ক্রিকেটে হাতেখড়ি আট বছর বয়সে। বাবা পঙ্কজ শ ব্যবসা বন্ধ করে ৯০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। ১৪ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের কাঙ্গা লিগে সেঞ্চুরি করে হইচই ফেলে দিয়েছিল পৃথ্বী। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রিজভি স্কুলের পক্ষে ৫৪৬ রান করেছিল মাত্র ১৫ বছর বয়সে!
অনূর্ধ্ব-১৬ ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন পৃথ্বী। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলেরও অধিনায়ক। ২০১৬ যুব বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন বাংলাদেশে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র তিন ম্যাচ খেলতেই পৃথ্বীর তুলনা চলেছে টেন্ডুলকারের সঙ্গে। ১৮ বছর বয়সের আগেই দুলীপ, রঞ্জি ও ইরানি ট্রফিতে সেঞ্চুরি করা একমাত্র খেলোয়াড় টেন্ডুলকার। পৃথ্বী সেঞ্চুরি পেয়েছেন রঞ্জি আর দুলীপ ট্রফিতে। এর মধ্যে দুলীপ ট্রফিতে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। মজার ব্যাপার, রঞ্জি আর দুলীপে পৃথ্বী সেঞ্চুরি করেছেন অভিষেকেই—যেমনটা দেখালেন আজ রাজকোট টেস্টে। ভারতের ১৫তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক টেস্টে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। তবে বাকি ১৪জনের সঙ্গে পৃথ্বী একটি জায়গায় আলাদা। অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয়।
কবি সুকান্ত বলেছিলেন, আঠারো বছর বয়স ‘স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি/আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ পৃথ্বীর ব্যাটিং দেখলে সুকান্তর এই কথা ফেলতে পারবেন না। অভিষেক টেস্টের প্রথম বলটা ছেড়েছেন ঠান্ডা মাথায়—যা দেখে সঞ্জয় মাঞ্জেরকারের টুইট, ‘পৃথ্বী শ প্রথম বলেই টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শটটা খেলেছে।’ বয়স যাই হোক পৃথ্বীর মাথাটা যে বেশ পরিণত তা বোঝা গেছে তাঁর ব্যাটিংয়ে। ভালো বল ছেড়েছেন, বাজে বল ছাড়েননি। বোলার যেন চড়ে বসতে না পারে তাই মাঝেমধ্যে চড়াও হয়েছেন। এই ট্যাকটিকসেই পৃথ্বী তুলে নিয়েছেন এক শ বলের নিচে খেলা সেঞ্চুরি।
সেই সেঞ্চুরির সুবাসে নানা রং-রূপ-রস। যেমন ধরুন, পৃথ্বীর চেয়ে কম বয়সে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র তিনজন—মোহাম্মদ আশরাফুল (১৭ বছর ৬১ দিন), হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (১৭ বছর ৩৫২ দিন) ও সেলিম মালিক (১৮ বছর ৩২৩ দিন)। টেস্টে ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এই সেঞ্চুরি করলেন পৃথ্বী। তার চেয়েও কম বয়সে সেঞ্চুরির রেকর্ডটা টেন্ডুলকারের। সেটিও একটি-দুটি নয়, তিন-তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন টেন্ডুলকার পৃথ্বীর চেয়েও কম বয়সে। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। প্রথম শ্রেণি ও টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা তিনজন ক্রিকেটারের একজন পৃথ্বী। তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন ভারতের গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ও অস্ট্রেলিয়ার ডির্ক ওয়েলহাম।
শচীন টেন্ডুলকার ৯টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন টেস্ট দলে। পৃথ্বী এ জায়গায় টেন্ডুলকারকে হারাতে পারেননি। টেস্ট অভিষেকের আগে খেলেছেন ১৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। মজার ব্যাপার, টেন্ডুলকারের চেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে টেস্টে আঙিনায় প্রথম বলটা খেলেই রেকর্ড গড়েছেন পৃথ্বী—টেস্টে কোনো ইনিংসের প্রথম বল খেলা সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয়। টেস্টে সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে দলীয় ইনিংসের প্রথম বলটা খেলেছেন পৃথ্বী। তার আগে এই পরীক্ষা দিতে হয়েছে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ইমরান ফারহাত ও তামিম ইকবালকে।
প্রথম বলের সেই পরীক্ষায় পাস করার পর পৃথ্বীর ইনিংস থেমেছে ১৩৪ রানে। তিনটি সংখ্যায় সাজানো তিন অঙ্কের এই ইনিংসটা নিশ্চিতভাবেই তাঁর আগামীর পথচলার প্রেরণা।