দেশের মানুষের জন্যই ভালো করতে চাই

বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানাছবি: আইসিসি

আগামী ৪ মার্চ থেকে নিউজিল্যান্ডে শুরু হচ্ছে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যেটিতে প্রথমবারের মতো খেলছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ সামনে রেখে আইসিসিতে নিজেদের কলাম লিখছেন ৮ দলের অধিনায়ক। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা নিজের কলামে লিখেছেন, এ বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ দলের জন্য দারুণ একটা সুযোগ। পাঠকদের জন্য কলামটির অনূদিত রূপ—

আইসিসির মেয়েদের বিশ্বকাপে খেলাটা আমাদের সবার জন্যই স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই এক ব্যাপার।

তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছি, কিন্তু কখনোই ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। আমরা রোমাঞ্চিত, সবচেয়ে বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে আমরা মুখিয়ে আছি। দারুণ এই সুযোগটা যখন এসেছে, তখন ভালো খেলেই এর সদ্ব্যবহার করতে চাই।

বাংলাদেশ কখনোই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলেনি। নতুন এক অভিজ্ঞতাই হতে যাচ্ছে। আমরা তাদের টিভিতে দেখেছি, ইন্টারনেটে অনুসরণ করেছি। জানতাম, কোনো একদিন তাদের বিপক্ষে খেলার সুযোগ আসবে। আমাদের বিশ্লেষক তাদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা নিয়মিত খেললেও ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবেন এবারই প্রথম
ফাইল ছবি

২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জয়ের পরই বাংলাদেশে নারী ক্রিকেটের চেহারাটা বদলে গেছে। এখন মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, এর আগে কেউ কেউ হয়তো জানতই না বাংলাদেশে মেয়েদের ক্রিকেট দল বলে কিছু আছে।

মানুষ এখন আগ্রহ দেখায়, তারা জানতে চায় আমরা কোথায় খেলছি, কেমন খেলছি। সংবাদমাধ্যম আগ্রহ দেখাচ্ছে। যখন বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলাম, গোটা জাতিই খুশি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপ্রিয়। তারা এখন মেয়েদের দলকে নিয়েও প্রত্যাশা করে। সে কারণেই চাপটা বেড়ে গেছে। তবে এটি ভালোই। দেশের মানুষের জন্যই আরও ভালো করতে চাই আমরা।

২০১৮ সালে ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জয়ের পর বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস
ফাইল ছবি

ওয়ানডে বিশ্বকাপ আমাদের জন্য বিরাট এক সুযোগ। দল হিসেবে এখানে আমরা নিজেদের সামর্থ্যটা বুঝতে পারব। সেই সামর্থ্য সবার সামনে প্রমাণ করতে পারব। আমরা সবাইকে দেখাতে পারব দল হিসেবে আমরা কতটা উন্নতি করেছি।

এখানে ভালো করলে আরও বেশি দল আমাদের বিপক্ষে খেলার আগ্রহ দেখাবে। আন্তর্জাতিক দলগুলো আমাদের দেশে আসবে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও ঘরোয়া ম্যাচের সংখ্যা বাড়াবে।

বিশ্বকাপে দল ভালো করলে ক্রিকেট বোর্ড হয়তো আরও তরুণ ও মেধাবী ক্রিকেটার খুঁজে বের করার প্রকল্প হাতে নেবে। একটা পাইপলাইন তৈরি করবে। নতুন প্রতিভা তুলে আনতে একটা নির্দিষ্ট পাইপলাইন দরকার।

ক্রিকেট বোর্ড অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৭ দল নিয়ে কাজ করছে, ইমার্জিং দল নিয়েও। অনেক ক্রিকেটার আছে, দেখতে চায় আমরা ভালো করি। কারণ, তারা জানে, আমরা ভালো করলে তাদের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি হবে।  

আমাদের এখনকার দলের উদ্বোধনী ব্যাটার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার সুপ্তা বাছাইপর্বে দারুণ খেলেছে, ফর্মে আছে। দলের যখনই প্রয়োজন, রুমানা আহমেদ তখনোই সামনে এগিয়ে আসে। সালমা খাতুন তো বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।

সালমা খাতুন ও জাহানারা আলমরা খেলবেন বিশ্বকাপে
ছবি: প্রথম আলো

বোলিং আক্রমণে আমরা সুরাইয়া আজমিনের মতো তরুণ ফাস্ট বোলারকে নিয়েছি। বিশ্ব এখনো সেভাবে দেখেনি তাকে। বাঁহাতি স্পিনে ফারিহা তৃষ্ণা ভালো করছে।

আমাদের দলে তিনজন সাবেক অধিনায়ক আছেন—সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ ও জাহানারা আলম। সবাই আমাকে অনেক সাহায্য করেন, তাঁদের সব পরামর্শই গ্রহণ করি আমি।

ব্যক্তিগত দিক দিয়ে দলকে প্রথম বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়াটা বড় একটা সুযোগ আমার জন্য। এখানে ভালো করলে আমাদের সবার জন্যই ব্যাপারটি ঐতিহাসিক কিছু হবে।