ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে যেতে বসেছিল ওমানের ‘বিশ্বকাপ-স্বপ্ন’
আইসিসির সহযোগী সদস্য তারা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলাটাই ওমানের জন্য বড় ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি এমন একটা টুর্নামেন্ট আয়োজনের সুযোগও মেলে, তাহলে তো কথাই নেই। ওমানের ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান পঙ্কজ খিমজির কাছে ব্যাপারটা ‘পরাবাস্তব’, ‘স্বপ্নের’ মতো ব্যাপার। তবে খিমজিদের সে স্বপ্নটাই আরেকটু হলেই ভেস্তে যেতে ধরেছিল! সেটাও প্রবল এক ঝড়ের কারণে।
ঘূর্ণিঝড় শাহিনের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝড়ের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ওমানের ১১ জন মানুষ। সে ঝড়ের গতিপথ আরেকটু এদিক-ওদিক হলেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগকে ‘বিদায়’ জানাতে হতো তাদের, এমন বলেছেন খিমজি, ‘উড়ে যাওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম আমরা।’
এমনিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এ আসর হওয়ার কথা ছিল ভারতে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে নিজেদের দেশে সেটা আয়োজন করতে পারছে না ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। আবার এমন টুর্নামেন্টের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থগিত হয়ে যাওয়া আইপিএলের পরের অংশও আয়োজন করছে তারা। ফলে আরব আমিরাতের সঙ্গে ওমানকেও বেছে নেওয়া হয়েছে ভেন্যু হিসেবে।
বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ‘বি’ গ্রুপের ছয়টি ম্যাচ হবে ওমানের আল-আমেরাত স্টেডিয়ামে। এই গ্রুপে বাংলাদেশ ছাড়া আছে ওমানও। তবে ঘূর্ণিঝড় শাহিন এসব ম্যাচ আয়োজনের ক্ষেত্রে বেশ শঙ্কা ধরিয়ে দিয়েছিল খিমজির মনে, রয়টার্সকে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘বলতে গেলে উড়ে যাওয়ার খুব কাছে ছিলাম আমরা। মাত্র কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরেই ঘূর্ণিঝড়টা আঘাত হেনেছে। প্রবল বৃষ্টিতে নেমেছে ভূমিধস। পুরো এলাকা ভেসে গেছে বন্যায়, ওলটপালট হয়ে গেছে সবকিছু। এ অঞ্চলে এমন কিছু হলে বিশ্বকাপকে “বিদায়” বলা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না আমাদের।’
এরই মাঝে ওমানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড। ওমানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে শ্রীলঙ্কাও। শাহিনের প্রভাবে অবশ্য ফ্লাইটের সূচিতে অদলবদল হয়েছিল বাংলাদেশের। প্রথম দফা বাতিল করা হলেও পরবর্তী সময়ে অন্য সূচিতে ওমান গেছে মাহমুদউল্লাহর দল।
ঘূর্ণিঝড় শেষ পর্যন্ত কয়েকটা তাঁবু নিয়ে উড়ে গেলেও বৃষ্টি একটা সুবিধাই করে দিয়েছে ওমানের ক্রিকেট আয়োজকদের। খিমজি বলছেন, ‘প্রায় তিন-চার ইঞ্চির মতো বৃষ্টিপাত হয়েছে আমাদের এখানে। ফলে ঘাসগুলো আরও সবুজ হয়ে উঠেছে। মাঠগুলোও এখন বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। বৃষ্টিতে সব ধুলাবালি মুছে গেছে।’
শেষ পর্যন্ত তাই ‘নিরাপদ’ই আছে ওমানের ক্রিকেট। খিমজি টুর্নামেন্ট নিয়েও বেশ রোমাঞ্চিত, ‘ওমানে ক্রিকেটের এমন আসর হওয়াটা আসলে বিশাল একটা ব্যাপার। কোটি কোটি মানুষ ম্যাচ দেখবে, এটাই তো অভাবনীয়। একটা সহযোগী দেশ একই সঙ্গে বিশ্বকাপে খেলছে আবার আয়োজনও করছে—এমন হয়ই–বা কয়বার! এটা আসলে পরাবাস্তব একটা ব্যাপার, যেন স্বপ্নের ঘোরে আছি আমি।’
ওমানের অবশ্য টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরে খেলা এটাই প্রথমবার নয়। তবে জিশান মাকসুদের নেতৃত্বাধীন দলটা এখনো পেশাদার নয়, জানিয়েছেন খিমজি, ‘তারা দারুণ খেলছে। এমনিতে দলের সবাই শৌখিন, ৯-৫টা চাকরি করে। বিশ্বকাপে খেলতে দুই-এক মাস করে ছুটি নিয়েছে তারা।’
প্রথম পর্বে ওমানের গ্রুপে বাংলাদেশ ছাড়াও আছে স্কটল্যান্ড ও পাপুয়া নিউগিনি। অবশ্য প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টুয়েলভে যাওয়ার আশা করছেন তাদের বোর্ডের চেয়ারম্যান খিমজি।