‘কঠিনেরে ভালোবাসা’ ইবাদতকে ‘স্যালুট’
একসময় ভলিবল খেলতেন। ছিলেন বিমানবাহিনীর সদস্য। সেখান থেকেই ক্রিকেটের দুনিয়ায়। জোরে বল করতে পারেন বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদটাও পেয়ে গেলেন বলতে গেলে দ্রুতই। কিন্তু সেটি যে কত কঠিন, তা গত চার-পাঁচ বছরে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন ইবাদত হোসেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা বড় কঠিন জায়গা, অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেও কতজন চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান দৃশ্যপট থেকে। ‘কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’ তো আর সবাই বলতে পারেন না জোর দিয়ে। কঠিনেরে ভালোবাসাটাও তো বড় কঠিন কাজ। ইবাদত সেই কঠিনকে ভালোবেসেই ঝুলে ছিলেন। নিজেকে ভেঙেগড়ে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। কোর্টনি ওয়ালশ, চম্পাকা রমানায়েকে, ওটিস গিবসনদের কোচ হিসেবে পেয়েছেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। নিজেকে ধারালো করেছেন। বাংলাদেশের পেসাররা অনুকূল পরিবেশের সুযোগও নিতে পারেন না, এমন অভিযোগ অনেক পুরোনো। কিন্তু ইবাদত সেই ধারণাকে পুরোপুরি উল্টে দিয়ে দেখালেন, অধ্যবসায় থাকলে বাংলাদেশের পেসাররাও সেটি করতে পারেন। এমনকি পরিবেশ অনুকূলে না থাকলেও বাজিমাত করতে পারেন। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ইবাদতই এ মুহূর্তে একটা জায়গায় নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন উঁচু বেদিতে। জোরে বল করেন, বাংলাদেশের এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে ইবাদতের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পারফরম্যান্স এখন দ্বিতীয় সেরা।
পেস বোলিং নিয়ে খুব একটা ভাবনাচিন্তা কখনোই ছিল না বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ছিল না বলেই জাতীয় দলে সব সময়ই পেসাররা বিমাতার ছেলে। এমনও হয়েছে, টেস্ট ম্যাচে জাতীয় দলের একাদশ সাজানো হয়েছে চার-পাঁচজন স্পিনার নিয়ে। পেসাররা দলকে জেতাবেন, এ তো অসম্ভব ব্যাপার।
এমন চিন্তাভাবনার কারণেই হোক আর যে কারণেই হোক, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের একটি পরিসংখ্যানের ঘর খুব সীমিত। সেটি হচ্ছে পেস বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্স। ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের তৃতীয় টেস্টে (বিদেশের মাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে বাঁহাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম ৮১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। আজ ২১ বছর পর টেস্টে এক ইনিংসে ৫ বা ততোধিক উইকেট নেওয়ার ব্যাপারে মঞ্জুরুলের সঙ্গী মাত্র চারজন। তবে টেস্টে পেসার হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ৫ বা ততোধিক উইকেট নেওয়ার ঘটনা নয়টি। শাহাদত হোসেনেরই এ কীর্তি আছে চারবার। ধূমকেতুর মতো বাংলাদেশের ক্রিকেটে আবির্ভূত হওয়া আরেক পেসার রবিউল এমন কীর্তি করেছেন দুবার। একবার করেছেন রুবেল হোসেন। এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ইবাদত। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭ রানে ৬ উইকেট নেওয়া শাহাদতকে এখনো টপকাতে পারেননি কেউই। দ্বিতীয় সেরা বোলিং পরিসংখ্যানটি ইবাদত হোসেনের। টেস্টে দেশের হয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ কীর্তিটি রবিউল ইসলাম করেছিলেন ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালে।
ইবাদত যে এক ম্যাচের রাজা হচ্ছেন না, সেটি বোঝাই যায়। এ তালিকায় আরও অনেকবার নিজের নামটা নিশ্চয়ই দেখতে চান তিনি। আর সে কারণেই দুই বছর ধরে তিনি শিখছেন। এই ‘শেখা’র কথা অনেকেই বলেন। কিন্তু ইবাদত সেই শেখার সফল বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন বলেই আজ এক ঐতিহাসিক দিন এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
ক্রিকেটপ্রেমীদের স্যালুট পেতেই পারেন ইবাদত!