এমন ‘অর্থহীন ম্যাচ’ শেষ কবে খেলেছিল ভারত
ভারতীয় ক্রিকেটাররা আজ নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে নিজেদের কীভাবে মাঠে টেনে নিয়ে যাবেন, সেটিই বড় প্রশ্ন। এ ম্যাচটা খেলার যে কোনো অর্থ হয় না। লক্ষ্য নিশ্চিত করে অর্থহীন ম্যাচ খেলা যায়, কিন্তু লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে অর্থহীন ম্যাচ! নিজেদের উদ্দীপ্ত করাই তো কষ্টকর। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা নিজেদের ক্যারিয়ারে এমন ম্যাচ আদৌ খেলেছেন কি না, এ প্রশ্ন উঠতে পারে।
ভারতের বিশ্বকাপটা আসলে শেষ হয়ে গেছে পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে টানা দুই ম্যাচ হেরে। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা হেরেই তাদের হয়েছে সবচেয়ে বড় সর্বনাশ। এরপর আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বড় জয় পেয়েছে ভারত, এ দুটি ম্যাচে তা-ও কিছু সমীকরণের মীমাংসা বাকি ছিল। কিন্তু কাল আফগানিস্তানকে নিউজিল্যান্ড উড়িয়ে দেওয়ার পর সব সম্ভাবনারই সমাধি রচিত হয়। আজ নামিবিয়ার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভে শেষ ম্যাচ ভারতের। এ ম্যাচে ব্যক্তিগত কিছু অর্জন ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেটারদের আসলে পাওয়ার কিছুই নেই। পরিতাপ এখানেই, কোহলির মতো এক তারকার টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্বের অধ্যায়টা শেষ হচ্ছে এমন একটা ম্যাচ দিয়ে, যে ম্যাচ ঘিরে ভারতীয়দেরই কোনো আগ্রহ নেই।
এর আগে ভারত কবে এমন ম্যাচ খেলেছিল? ক্রিকেট ইতিহাসবিদেরা মাথা কুটে ২৯ বছর আগের এক ম্যাচের কথা মনে করতে পারছেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপে এমনই একটা পরিস্থিতির মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটি খেলেছিল ভারত। সেবার অংশগ্রহণকারী আটটি দল লিগ ভিত্তিতে প্রতিটির মুখোমুখি হয়েছিল। শীর্ষ চার দল খেলেছিল সেমিফাইনালে। ভারত জয় পেয়েছিল কেবল জিম্বাবুয়ে আর পাকিস্তানের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় খাতায় যোগ হয়েছিল এক পয়েন্ট। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারত যখন মুখোমুখি, সেমিফাইনালের স্বপ্নটা অনেক দূরে সরে গেছে তাদের। ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত খেলেছিল সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে না পেরে।
২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি ভারত। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে ওঠে। সে পর্বে সব ম্যাচ হেরে ভারত বিদায় নেয়। প্রথম দুই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেই আসলে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ভারতের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি ছিল নিতান্তই নিয়মরক্ষার। ২০১০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই অবস্থা। সুপার এইটে উঠে প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের পর শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ‘সম্মানরক্ষা’র ম্যাচ খেলেছিল ভারত। হেরেছিল সেটিতেও। ২০১২ সালে অবশ্য অন্য ব্যাপার। সুপার এইটে ভারত পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ জিতলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের হার আর নেট রান রেটই কাল হয় তাদের।
নামিবিয়ার বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি আসলে যেকোনো বিচারেই ভারতের জন্য অর্থহীন ম্যাচ। এ ম্যাচ কোহলি-রোহিত-পন্তরা দ্রুত ভুলে যেতে চাইলেও এটি যে তাঁরা সহজে ভুলবেন না, এটা নিশ্চিত। এমন ম্যাচ যে কখনোই খেলেননি তাঁরা।