ইবাদত আজ ৪–৫ উইকেট পেতে পারত: ডোনাল্ড
৯–০–৩১–১। কাল দ্বিতীয় দিন শেষে ইবাদত হোসেনের বোলিং বিশ্লেষণ। ওভারপ্রতি গড়ে তিনের বেশি রান দিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে খুব ভালো বলা যায় না। আজ তৃতীয় দিনে ইবাদতের বোলিং বিশ্লেষণ ১৭–৪–৪৭–২।
কালকের মতোই ১টি উইকেট, এর সঙ্গে সংযোজন ৪টি মেডেন এবং ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন তিনের কম। তুলনামূলক ভালো বলা যায়। কিন্তু পরিসংখ্যানকে কেন আস্ত গাধা বলা হয়, সেটাও বোঝা যাচ্ছে সারাদিনে ইবাদতের বোলিং দেখার পর এসব সংখ্যা দেখে।
পরিসংখ্যানে শুধু রান আর উইকেটই লেখা থাকে; একজন বোলার ব্যাটসম্যানদের কতটা ভুগিয়েছেন, তা ফুটিয়ে তুলতে পারে না। আজ ইবাদতের ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে এসে সেটাই মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড, ‘সে আজ যেভাবে বল করেছে, তা স্কোরবোর্ড দেখে বোঝা যাবে না।’ ডোনাল্ড মনে করেন, ভাগ্য ইবাদতের প্রতি সুবিচার করেনি। যেভাবে বোলিং করেছেন, তাতে নামের পাশে ১ উইকেট একেবারেই বেমানান, ‘সে চার-পাঁচ উইকেট পেতে পারত। স্পেলটা এমনই ছিল।’
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে সুযোগ পাননি এবাদত। পেসার শরীফুল হাসান চোটে না পড়লে মিরপুর টেস্টেও খেলতেন কি না, কে জানে। এবাদতের তাই নিজেকে প্রমাণের দায় ছিল। উইকেট সংখ্যায় প্রতিফলন না থাকলেও তা কিছুটা প্রমাণ তো করেছেনই। একমাত্র উইকেটটি নিয়েছেন আজ সকালে দিনের দ্বিতীয় বলেই। বোল্ড করেছেন ‘নাইটওয়াচম্যান’ কাসুন রাজিতাকে। এরপর যে আর কোনো উইকেট পাননি, সেটাকেই মনে হচ্ছে অবিচার। প্রায় সারাদিনই ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশে বোলিং করেছেন। অফ স্টাম্পের বাইরে কল্পিত ‘ফোর্থ স্টাম্প’ বরাবর বল করার চেষ্টা করেছেন, ব্যাটসম্যানদের বুক বরাবরও বল তুলেছেন। বৃষ্টি–বিরতি শেষে খেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম আধঘন্টায় তাঁকে খেলতে ভালোই সমস্যা হয়েছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৭২ টেস্টে ৩৩০ উইকেট নেওয়া সাবেক পেসার ডোনাল্ড তাঁর ক্যারিয়ারে বিশ্বসেরাদের একজন ছিলেন। ‘সাদা বিদ্যুৎ’ নামে খ্যাত এই পেসার স্বাভাবিকভাবেই কোন পেসার কেমন, আজ কতটা ভালো করতে পারে—এসব বিষয় অনুমান করতে পারেন।
ইবাদতকে নিয়ে তেমনই একটি কথা বললেন ডোনাল্ড, ‘ইবাদত আজ অসাধারণ (বল) করেছে। তাকে ওয়ার্ম আপের সময় দেখেই বুঝতে পেরেছি আজ জ্বলে উঠতে পারে।’
কেমন এবং কতটা জ্বলে উঠেছে সে ব্যাখ্যাও দিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। প্রাচীনকালে যুদ্ধ–বিগ্রহে দূর্গের ফটক ভাঙার জন্য বড় কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে প্রথম ওভার করা পেসার কাসুন রাজিতাকে শ্রীলঙ্কা ঠিক এ কাজেই ব্যবহার করেছে বলে মনে করেন ডোনাল্ড।
৫ উইকেট নেওয়া রাজিতার যে ভূমিকা ছিল, শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে ইবাদতের ভূমিকাও এখন তেমন বলে মনে করেন ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এই পেসার, ‘ইবাদতকে আমি এখন ঠিক এভাবেই দেখছি। সে কারণে চা বিরতির পর তাকে বল করতে বলেছি এই বরাবর (বুক দেখিয়ে)। ম্যাথুস আরেকটু হলেই ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়ত।’
ফ্ল্যাট উইকেটে কীভাবে বল করতে হয়, মানসিকতা কেমন থাকতে হয়, আর ইবাদত তা কতটা শিখেছেন সেসব নিয়েও বলেছেন ডোনাল্ড, ‘আমার মনে হয়, ফ্ল্যাট উইকেটটা ইবাদত বুঝতে শুরু করেছে। এখানে যেমন বোলিং করতে হয়। আমি চাই, ও নিজের পছন্দমতো ফিল্ডিং সাজিয়ে তেড়েফুঁড়ে বল করুক। বোলিং বিভাগে এই স্বাধীনতাটুকু চাই।’
অভিজ্ঞতা ইবাদতকে আরও পরিণত করবে বলেই বিশ্বাস ডোনাল্ডের, ‘দলে নিজের ভূমিকাটা কী, সে বুঝতে শুরু করেছে। আমি চাই, সে বল চেয়ে নিক। টেস্টে ফ্ল্যাট উইকেটে আক্রমণাত্মক বোলিং করতে হয়। ইবাদতের যে পেস, তাতে এটা সম্ভব। এখন শুধু আরও বেশি বেশি টেস্ট খেলতে হবে।’
এই টেস্টে বাংলাদেশের আরেক পেসার খালেদ আহমেদ ১৫ ওভার বল করে ৬২ রান দিলেও উইকেট পাননি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে আগের সিরিজেই দুই টেস্টে ৮ উইকেট নিয়েছেন খালেদ। ইনিংসে ৪ উইকেটও ছিল। ডোনাল্ড তা দেখেছেন বলেই সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরতে বললেন, ‘আমি চাই, সবাই তাদের নিয়ে একটু ধৈর্য ধরুক। খালেদ ক্রমাগত শিখে যাচ্ছে।’