আফিফদের চট্টগ্রামকে শেষ চারে নিয়ে গেলেন জ্যাকস
সিলেট সানরাইজার্সের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে আগেই। এ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, তবে চেয়েছিল খুলনা টাইগার্স ও মিনিস্টার ঢাকাও। জিতলে প্লে-অফ নিশ্চিত, চট্টগ্রামের সামনে ছিল এমন সমীকরণ।
তবে দিনের প্রথম ম্যাচটা নিজেদের প্রায় বাঁচা-মরার হলেও টস জিতে রান তাড়া করার সুযোগটা বেছে নেয় দলটি। সিলেটের ১৮৫ রানের সংগ্রহে চাপটা বাড়ল আরও। এরপর টুর্নামেন্টে চট্টগ্রামের সেরা ব্যাটসম্যান উইল জ্যাকস জ্বলে উঠলেন, এই ওপেনার খেললেন মৌসুমের অন্যতম সেরা এক ইনিংস।
৫৭ বলে ৯২ রানে অপরাজিত থেকে পার করলেন দলকে, সিলেট ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আটকাতে পারেনি চট্টগ্রামকে।
৪ উইকেটের এ জয়ে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে প্লে-অফ নিশ্চিত করল চট্টগ্রাম। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচের ওপর এখন নির্ভর করছে খুলনা টাইগার্স ও মিনিস্টার ঢাকার ভাগ্য।
সে ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে হারালে প্লে-অফে এলিমিনেটর ম্যাচে চট্টগ্রামের প্রতিপক্ষ হবে খুলনাই, আর তারা হারলেই শুধু শেষ চারে যাবে ঢাকা।
সিলেট নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে ব্যাটিংয়ে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সটা দেখাল আজ। টপ অর্ডারের পর জ্বলে উঠল মিডল অর্ডার। কলিন ইনগ্রাম, এনামুল হক, লেন্ডল সিমন্স, রবি বোপারার পর মোসাদ্দেক হোসেন এনে দিলেন আগে ব্যাটিং করে এ মৌসুমে সিলেটের সর্বোচ্চ স্কোর।
ইনগ্রাম ও এনামুল মিলে শুরুটা ভালো এনে দিয়েছিলেন সিলেটকে। মেহেদী হাসান মিরাজকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ইনগ্রাম করেন ১৯ বলে ২৪, এনামুলের সঙ্গে তাঁর উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে ৪১ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে মিজানুর রহমানকে হারায় সিলেট, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর প্রথম শিকারে পরিণত হন তিনি। তবে প্রথম ৬ ওভারে ওঠে ৫০ রান।
দ্রুত ২ উইকেট হারালেও মাঝের ওভারগুলোতে সিলেট রানের গতি ঠিক রাখে এনামুল ও লেন্ডল সিমন্সের জুটিতে। ৩৮ বলে দুজন যোগ করেন ৫৪ রান। এক ওভারেই অবশ্য দুজনকে ফেরান মৃত্যুঞ্জয়—৫ চার ও ২ ছয়ে ২৭ বলে ৪২ রান করা সিমন্স দেন ক্যাচ, এনামুল বোল্ড হন ৩ চার ও ১ ছয়ে ২৬ বলে ৩২ রান করে।
তবে এবারও দ্রুত ২ উইকেটের আঘাত সিলেটকে বুঝতে দেননি বোপারা ও মোসাদ্দেক। পঞ্চম উইকেটে ৪১ বলে ওঠে ৮০ রান। ১৬ ওভারের পর থেকে ১৯.২ ওভার—এই ২০ বলেই ওঠে ৫৮ রান।
শেষ ওভারে গিয়ে শরীফুল ইসলামের বলে ক্যাচ তোলার আগে বোপারা করেন ২১ বলে ৪৪ রান, ২টি চারের সঙ্গে মারেন ৪টি ছয়। শেষ পর্যন্ত ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকা মোসাদ্দেক তাঁর ২২ বলের ইনিংসে ৩টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়।
চট্টগ্রামের রান তাড়ায় জাকির হাসানের শুরুটা ছিল ঝোড়ো, তবে বেশিক্ষণ টেকেননি। সোহাগ গাজীকে একটা ছয় মারার পর আবারও ব্যাট চালিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৯ বলে ১৭ রান করে। আফিফ হোসেনও বেশিক্ষণ টেকেননি, সোহাগের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে চট্টগ্রাম অধিনায়ক করতে পেরেছেন ৭ বলে ৭ রান।
জ্যাকসের সঙ্গে চ্যাডউইক ওয়ালটনের জুটি অবশ্য স্বস্তি দিয়েছে তাদের। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে এ কে এস স্বাধীনের কাছ থেকে ২১ রান আসে জ্যাকসের ৩ চার ও ১ ছয়ে, প্রথম ৬ ওভারে চট্টগ্রাম তুলে ফেলে ৬০ রান। ১২তম ওভারে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে টানা দুটি ছয় মারার পর বোপারার দারুণ ফিল্ডিংয়ের শিকার হয়ে রানআউট হয়ে ফিরতে হয় ওয়ালটনকে, ২৩ বলে ৩৫ রান করে।
মিড অফ থেকে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন, ডাইভ দিয়ে বলটা নিয়ে সে অবস্থাতেই সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন বোপারা। জ্যাকসের সঙ্গে ওয়ালটনের জুটিতে এর আগে ওঠে ৪১ বলে ৬৯ রান।
পরের দুটি জুটিতে জ্যাকসের ভূমিকা ছিল ভিন্ন ভিন্ন—বেনি হাওয়েলের সঙ্গে ২৩ বলে ৩৫ রান যোগ করার পথে আক্রমণ করেছেন তিনিই, এরপর শামীম হোসেনের সঙ্গে ১১ বলে ২৮ রানের ঝোড়ো জুটিতে ছিলেন মোটামুটি সহকারীর ভূমিকায়।
৮ বলে ৮ রান করা হাওয়েলের পর ৭ বলে ২১ রানের ক্যামিও খেলা শামীম—দুজনকেই ফেরান আলাউদ্দিন বাবু। লং অনে হাওয়েলের ক্যাচটা দারুণভাবে নেন ইনগ্রাম, প্রথমে বলটা ধরে ভারসাম্য রাখতে সীমান পেরোনোর আগেই ছুড়ে দেন এপাশে, এরপর ফিরে সম্পন্ন করেন ক্যাচ। মিড উইকেটে সীমানার ওপর দাঁড়িয়ে শামীমের ক্যাচটা ভালোভাবে নেন সোহাগও।
শামীমের পর ১৯তম ওভারে মিরাজ ফিরলেও অন্য পাশে থাকা জ্যাকসকে টলাতে পারেনি চট্টগ্রাম। ৩৫ বলে অর্ধশতক পেয়েছিলেন, শেষ ওভারের প্রথম বলে আলাউদ্দিন বাবুকে ছক্কা মেরে জয় নিশ্চিত করেন তিনিই। শতক না পেলেও ক্যারিয়ারে এটিই জ্যাকসের সর্বোচ্চ ইনিংস। মেরেছেন ৮টি চারের সঙ্গে ৪টি ছয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সানরাইজার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৬ (বোপারা ৪৪, সিমন্স ৪২, মোসাদ্দেক ৩৫, এনামুল ৩২; মৃত্যুঞ্জয় ৩/৩৭, মিরাজ ১/৩৬, শরীফুল ১/৪১)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৯.১ ওভারে ১৮৮/৬ (জ্যাকস ৯১*, ওয়ালটন ৩৫, শামীম ২১; সোহাগ ২/২১, আলাউদ্দিন ২/৩৩, সিমন্স ২/৩২)।
ফল: চট্টগ্রাম ৪ উইকেটে জয়ী