টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ
আগুন জ্বলে পেস বলে
পেস বোলাররাও এখন টেস্ট জেতাচ্ছেন বাংলাদেশকে। পেস বোলারদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ পেস বোলিংয়ে উন্নতির আরেকটা লক্ষণ।
তাসকিন আহমেদ আর ইবাদত হোসেনের গতি, সঙ্গে শরীফুল ইসলামের সুইং—পরশু শেষ হওয়া মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের দিকে ফিরে তাকালে বাংলাদেশ দলের এই তিন পেসারের স্পেলগুলোই ঘুরেফিরে সামনে ভেসে উঠবে। নিউজিল্যান্ডের ২০ উইকেটের ১৩টিই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এই তিনজন। বাংলাদেশও পেয়েছে ঐতিহাসিক এক জয়। সারা বিশ্ব দেখেছে, টেস্টে বাংলাদেশেরও এখন আছেন আগুন ঝরানো পেস আক্রমণ। সবুজ, বাউন্সি উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশকে ঘায়েল করতে গেলেই এখন বিপদ। বাংলাদেশের পেসারদের হাতেও এখন জ্বলে ওঠে আগুন।
তাসকিনের কথাটা আলাদা করেই বলতে হয়। করোনার শুরুর সময়টাতে নিজেকে নতুন করে গড়েছেন এই পেসার। ঘরোয়া ক্রিকেট কাঁপিয়ে ফিরেছেন জাতীয় দলে। এরপর খুব দ্রুতই তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই তাসকিন হয়েছেন জাতীয় দলে নিয়মিত। আর তাতে বাংলাদেশ দল পেয়েছে টেস্টের জন্য কাঙ্ক্ষিত একজন ফাস্ট বোলার। শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে তাসকিনের দারুণ কিছু স্পেল নতুন আশাই জাগাচ্ছিল। কিন্তু পেসারদের হাত ধরে জয় আসছিল না। নিউজিল্যান্ডে তাসকিনের নেতৃত্বে পেস বোলিং আক্রমণের বাকিরাও জ্বলে ওঠায় কাঙ্ক্ষিত টেস্ট জয়টা পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে বিসিবির কোচ মাহবুব আলীর সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন তাসকিন। নিউজিল্যান্ডে কোন লেংথে বল করতে হবে, সে বিষয়ে ছাত্রকে বুঝিয়েছেন মাহবুব। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে তাসকিনের সাফল্যের পেছনে সেই প্রস্তুতির ছায়া দেখছেন তিনি, ‘নিউজিল্যান্ড কিন্তু ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দল নয়। আপনার বলের গতি যেমন, সেই অনুযায়ীই বল করতে হবে। তাসকিন যেমন এখন ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করছে। নিউজিল্যান্ডে তাঁর লেংথ হবে ৭-৮ মিটার। এর আগে বল ফেললে ব্যাটসম্যান সহজে ড্রাইভ মারতে পারবে, কারণ, বল ওতটা উঠবে না।’
তাসকিনের মতো ইবাদতও ধারবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করছেন। কিন্তু ইবাদতের বড় পরিবর্তনটা এসেছে লাইন-লেংথে। গত বছরের হারারে টেস্ট থেকেই তিনি ওভারপ্রতি ৩ রান করে দিচ্ছেন, গড় কমে এসেছিল ৪০–এর ঘরে। মিতব্যয়ী বোলিংয়ের সুবাদে উইকেটও ধরা দিচ্ছিল। নিউজিল্যান্ডে রান কম দেওয়ার কাজটা আরও নিখুঁতভাবে করার কারণেই এসেছে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স।
বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগে ইবাদতকে নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে শ্রীলঙ্কার কোচ চম্পকা রমানায়েকের।
শ্রীলঙ্কা থেকে কাল মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘গতির সঙ্গে যদি নিয়ন্ত্রণ যোগ করা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর চেয়ে আদর্শ কিছু হতে পারে না। ইবাদতের গতি ছিল, সমস্যা ছিল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু সব ফুল একই সঙ্গে ফোটে না, কেউ একটু সময় নেয়। তার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। ওকে কিছু টেস্ট খেলানোর পরেই কিন্তু এখন সাফল্য এল।’
চম্পাকার সঙ্গে কাজ করেছেন আরেক পেসার শরীফুলও। গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য জাতীয় দলে এসে এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছেন। দুই ম্যাচেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করছেন তিনি।
তবে চম্পকার চোখে শরীফুলের বড় শক্তি তাঁর আত্মবিশ্বাস। প্রতিপক্ষ কে, সেটা নিয়ে কখনো মাথা ঘামান না ২০ বছর বয়সী এই তরুণ।
হাই পারফরম্যান্স বিভাগ এবং ‘এ’ দলে শরীফুলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকেই চম্পাকা বলছিলেন, ‘ছেলেটা আত্মবিশ্বাসী। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট থেকেই পেস বোলিংয়ের অনেক কিছু শিখে এসেছে সে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব বেশি না খেললেও ওর বোলিংয়ে টেস্টে ভালো করার আত্মবিশ্বাসটা আছে। নিয়ন্ত্রণটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যেটা সে অনূর্ধ্ব-১৯ ও এইচপিতে আয়ত্ত করেছে।’
তবে জাতীয় দল এবং এর আশেপাশে এখন পেসারদের যে রকম ভিড়, তাতে ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে না রাখলে দলে কারও জায়াগাই পাকা নয়। টেস্ট দলের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল আবু জায়েদেরই তো এখন মূল একাদশে জায়গা হচ্ছে না! পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে খেলা খালেদ আহমেদও ভালো ছন্দে আছেন। ফর্ম আর কন্ডিশন যেকোনো সময় খেলার সুযোগ করে দিতে পারে তাঁদেরও। স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই উত্তাপও পেস বোলিংয়ে উন্নতির আরেকটা লক্ষণ।