অভিশাপের নাম প্রথম বলেই উইকেট! শাপমোচন নাথান লায়নের আঙুলে
প্রভাত কি সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয়? কখনো দেয়, কখনো দেয় না। ক্রিকেটও এমনই। দুঃস্বপ্নের মতো শুরুর পরও যেমন আলো ছড়ানোর গল্প আছে, তেমনি হইচই ফেলে দেওয়া আবির্ভাবের পর পথ হারিয়ে ফেলারও। এসব গল্প নিয়েই নতুন এই ধারাবাহিক শুরু করলেন উৎপল শুভ্র
টেস্ট ক্রিকেটে নাথান লায়নের প্রথম বলটা ইউটিউবে একটু আগেই আবার দেখে নিলাম। প্রথম বলেই উইকেট, সেটিও আবার কুমার সাঙ্গাকারার! সাঙ্গাকারা বলেই ব্যাটসম্যানের নামটা বলা, নইলে ব্যাটসম্যান কে, তাতে কিই-বা আসে যায়! প্রথম বলে উইকেট তো প্রথম বলে উইকেটই, ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানকে আউট করে পেলেও সেটির আনন্দ কম হয় নাকি! ২০১১ সালে গল টেস্টে লায়নের আনন্দ আর তাঁকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থদের বাঁধনহারা উদযাপন আবার দেখতে দেখতে মনে পড়ল, এই দৃশ্যটাই টেলিভিশনে 'লাইভ' দেখার কী মনে হয়েছিল! নাথান লায়নের জন্য একটু মায়াই হয়েছিল, এই রে, ছেলেটার সর্বনাশ হয়ে গেল!
'ছেলেটা' পড়ে অবাক হবেন না। মুন্ডিত মস্তক লায়নকে এখন যেমন ত্রিকালদর্শী এক প্রবীণের মতো দেখায়, তখন তিনি এমন ছিলেন না। নাথান লায়নের মাথায় তখনো চুল ছিল। ছেলেটা বলার রহস্য না হয় বোঝা গেল, কিন্তু প্রথম বলে উইকেট পেয়ে যাওয়ায় লায়নের জন্য মায়া হবে কেন? ক্রিকেট ইতিহাসের একটু মনোযোগী পাঠক হলে এই প্রশ্নের উত্তর আপনার জানা থাকার কথা। যে ইতিহাস বলছে, টেস্টে প্রথম বলেই উইকেট উজ্জ্বল এক ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তা তো নয়ই, বরং এক অভিশাপ!
নাথান লায়নকে দিয়ে লেখাটা শুরু করার কারণ, সেই শাপমোচনের কাজটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কেউ করতে পারেননি। ৯৬ টেস্টে ৩৯০ উইকেট নিয়েঅস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সফলতম অফ স্পিনার। এই অর্জন অবশ্য অনেক আগের। হিউ ট্রাম্বলের ১৪১ উইকেটকে পেছনে ফেলেছেন সেই ২০১৫ সালে।সেদিন থেকেই টিমমেটরা তাঁর GOAT বলে ডাকতে শুরু করে। এই নামকরণে থুতনিতে দাড়ির কোনো ভূমিকা নেই। GOAT মানে গ্রেটেস্ট অব অল টাইম!
এটা হয়তো একটু অতিশয়োক্তিই। কারণ লায়নের আগে শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরন নামে দুজন স্পিনার ছিলেন। তবে ওয়ার্ন-মুরালি কেউই টেস্টক্রিকেটে তাঁদের প্রথম বলে উইকেট পাননি। প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেটও না। না পাওয়ায় হয়তো একটু স্বস্তিই পেয়েছিলেন। ওই যে বললাম, টেস্টে প্রথমবলে উইকেট মানেই অভিশাপ! নাথান লায়নের আগে ১৬ জন বোলার এমন অবিস্মরণীয় শুরুর আনন্দে ভেসেছেন। লায়নের পরে আরও তিনজন। এই ১৯জনের মধ্যে মাত্র দুজন ছাড়া আর কারও ক্যারিয়ারই বলার মতো কিছু নয়। পাঁচজন তো দ্বিতীয় টেস্ট খেলারই সুযোগ পাননি!
সেই পাঁচজনের সঙ্গে আগে পরিচয় করিয়ে দিই। অস্ট্রেলিয়ার আর্থার কনিংহাম, নিউজিল্যান্ডের ম্যাথু হেন্ডারসন ও হোরেস স্মিথ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফ্রান্সিস জনসনের দলে একেবারে সাম্প্রতিক সংযোজন দক্ষিণ আফ্রিকার হার্ডাস ভিলিয়ন। টেস্টে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ কীর্তিও ভিলিয়নের।জোহানেসবার্গে টেস্ট অভিষেকে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম বলেই চার মেরেছেন, পরে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট। সেই উইকেটটিও ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের। একমাত্র টেস্টের মতো এটিও হয়ে আছে ভিলিয়নের একমাত্র উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকায় এত পেসারের ভিড়ে আর সুযোগ পাবেন না বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি। সম্পর্কে ফাফ ডু প্লেসিসের বোনজামাই ভিলিয়নের টেস্ট অভিষেক ২০১৬-এর জানুয়ারিতে, সে বছর ডিসেম্বরেই ডার্বিশায়ারের সঙ্গে কলপ্যাক চুক্তি করে ফেলেন।
কনিংহামকে নিয়ে কথা বলার আগে একটা বিভ্রান্তির কথা জানানো উচিত। সারা জীবন জেনে এসেছি, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বলে উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি পেসার। এ নিয়ে একাধিক লেখা তো লিখেছিই, অন্য অনেক লেখায়ও এর উল্লেখ করেছি। কী আশ্চর্য, ইদানীং আবার সব রেকর্ডে দেখছি, আর্থার কনিংহাম আসলে দ্বিতীয়, টেস্টে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তিটা অস্ট্রেলিয়ারই টম হোরানের! সোয়া শতাব্দীরও বেশি আগের ঘটনা, এটা তো কাউকে ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার ব্যাপার নয়। প্রথম দিকের অনেক টেস্ট ম্যাচের খুঁটিনাটি লিপিবদ্ধও নেই।ইতিহাস খুঁড়ে এখনো অনেক কিছু বের করে যাচ্ছেন ক্রিকেট ইতিহাসবিদরা। টম হোরানেরটাও কি তাহলে এমনই কোনো আবিষ্কার! হবে হয়তো।
সব রেকর্ডই যখন হোরানের কথা বলছে, তখন এতদিনের জানাটা ভুল মেনে নিয়ে এটাকেই সত্যি বলে ধরে নিতে হচ্ছে। যে রেকর্ড বলছে, ১৮৮৩ সালেরজানুয়ারিতে সিডনিতে ইতিহাসের দ্বাদশ টেস্ট ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছিলেন হোরান। এর এগার বছর পর মেলবোর্নে আর্থার কনিংহাম যেটির পুণরাবৃত্তি করেন। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলে টম হোরান একটু হলেও বাড়তি মনোযোগ দাবি করেন। হোরান যত না বোলার ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ব্যাটসম্যান। টেস্টে তাঁর সেঞ্চুরিও আছে। ১৫ টেস্টে নিয়েছেন ১১ উইকেট। প্রথম নয় টেস্টে বোলিংই করেননি, সিডনির ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসেও না।দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়েই উইকেট। এরপর থেকে মোটামুটি অলরাউন্ডারের ভূমিকায়। অলরাউন্ডার তিনি সর্বার্থেই ছিলেন। ক্রিকেট নিয়ে লিখতে শুরুকরেছেন খেলোয়াড়ি জীবনেই। খেলা ছাড়ার পর আরও স্রোতস্বিনী তাঁর কলম। টানা ৩৭ বছর অস্ট্রেলেশিয়ান (এখনকার দ্য অস্ট্রেলিয়ান-এর পূর্বসুরি) পত্রিকায় 'ক্রিকেট চ্যাটার' নামে একটা কলাম লিখে গেছেন। লেখালেখি করেছেন অন্য পত্রিকাতেও। বইও লিখেছেন বেশ কটি। ক্রিকেট লেখক হিসাবে পাইওনিয়ারই বলা যায়। এত বছর পরও শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। বলা যায়, ক্রিকেটারের চেয়েও এই পরিচয়ে আরও বেশি বিখ্যাতটম হোরান।
প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার পরও যাঁরা 'ওয়ান টেস্ট ওয়ান্ডার' হয়ে আছেন, তাঁদের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আর্থার কনিংহাম প্রথম বলেই আউট করেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ইংলিশ ব্যাটসম্যান আর্চি ম্যাকলারেনকে। যেটি ১৮৯৪ সালে সেই মেলবোর্ন টেস্টেরও প্রথম বল। কনিংহামের আগে কেউ টেস্টের প্রথম বলে উইকেট পাননি। সেই টেস্টে উইকেট পেয়েছেন আর একটিই। কনিংহামের যে কাণ্ডকীর্তির যেসব নমুনা দেখলাম, তাতে এক টেস্টেই তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিস্ময়ের কিছু নেই। বরং আদৌ যে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন, এটাকেই বিস্ময় বলে মনে হয়। বর্ণময় এক চরিত্র, একটু খ্যাপাটেও। একবার এক ম্যাচে আউটফিল্ডে ফিল্ডিং করার সময় বেশি ঠাণ্ডা লাগছে বলে শরীর গরম করতে সংবাদপত্র জ্বালিয়ে নিয়েছেন। গির্জার এক পাদ্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রাখার। প্রতারণার দায়ে জেল খেটেছেন। শেষ জীবন কেটেছে এক মানসিক হাসপাতালে। একমাত্র যে টেস্টটি খেলেছেন, সেটিও নিষ্কলঙ্ক নয়। দ্বিতীয় ইনিংসে আম্পায়ার নো বল ডাকায় খেপে গিয়ে বিমার মেরেছেন ম্যাকলারেনকে।
এক টেস্ট খেলায় কনিংহামের চার সঙ্গীর মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা বলতে হয় ফ্রান্সিস জনসনকে। কনিংহামের মতো তিনিও বাঁহাতি পেসার। তাঁকে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে দেয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ সালে ওভালে জীবনের প্রথম টেস্টটিই হয়ে থাকে তাঁর শেষ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ। যেটিতে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট, যাঁর একটি স্যার লেন হাটনের। টেস্টে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার আগে উস্টারে সেই সফরে তাঁর প্রথম বলেও উইকেট নিয়েছিলেন জনসন।
ভিলিয়নের মতো হোরেস স্মিথেরও প্রথম বলে নেওয়া উইকেটটিই টেস্ট ক্যারিয়ারে একমাত্র উইকেট। ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারই খুব সংক্ষিপ্ত। ১৯৩১-এ শুরুহয়ে ১৯৩৪-য়েই শেষ। ম্যাথু হেন্ডারসন স্বপ্নের মতো শুরুর পর আরও একটি উইকেট পেয়েছিলেন, তবে তাঁর প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার কীর্তি আড়ালে চলে যায় অভিষিক্ত আরেক বোলার এর চেয়ে অনেক বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলায়। ইংলিশ পেসার মরিস অ্যালম শুধু হ্যাটট্রিকই নয়, গড়েন পাঁচ বলে চারউইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তিও। ১৯৩০ সালের সেই টেস্টে অবশ্য অভিষেকের ছড়াছড়িই ছিল। নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচ বলে সেই দলের ১১ জনেরই অভিষেক, ইংল্যান্ডের পক্ষেও অভিষেক হয়েছিল ছয়জনের। নিউজিল্যান্ডের টেস্ট স্ট্যাটাসটা হেন্ডারসনের জন্য একটু দেরিতেই এসেছিল। বয়স ৩৫ বছরহয়ে গেছে তখন, অবসর নিয়ে ফেলেন আর মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেই।
টেস্টে প্রথম বলে উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় সর্বশেষ দুটি নামই দক্ষিণ আফ্রিকান। হার্ডাস ভিলিয়নের আগে ড্যান পিট। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংসেই ৪টি করে উইকেট এই অফ স্পিনারের। অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকান কোনো স্পিনারের সেরা বোলিংয়েররেকর্ড গড়ার পর ভারতের বিপক্ষে পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসে আবারও ৪ উইকেট। গত বছর আরেকটি ভারত সফরে উল্টো অভিজ্ঞতাও হয় তাঁর। এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি ছক্কা (২০) খাওয়ার রেকর্ড করে ফেলেন। সেটিই হয়তো ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়ে থাকবে। ৯ ম্যাচেই টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনে কদিন আগে তাই মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে গিয়েও অবশ্য ক্রিকেটই খেলবেন। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলার খুব ইচ্ছা, যেটি দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকলে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ায় বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ আছে। পিটের সিদ্ধান্তে বড় অনুঘটকের কাজ করেছে এটিও।
বাংলাদেশের কোনো বোলার টেস্টে প্রথম বলে উইকেট পাননি এখনো। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে পেয়েছেন একজন। ২০০২ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলকে আউট করে চামিলা গামাগে। এরপর আর খেলেছেন আর একটি টেস্টই। উইকেট মােট পাঁচটি, তাঁর পুরো নামটি লিখতে এর চেয়ে একটি শব্দ বেশি লাগে----মাতেরবা কানাথা গামাগে চামিলা প্রেমনাথ লক্ষ্মীথা!
একটি টেস্ট বেশি খেলেও ভারতের নিলেশ কুলকার্নির গল্পটা আরও করুণ। ১৯৯৭ সালে কলম্বোর সিংহলিজ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে মারভান আতাপাত্তুকে আউট করার পর সেই টেস্টেই প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার 'মজা'টা টের পেয়ে যান এই বাঁহাতি স্পিনার। এরপরই জয়াসুরিয়া ও মহানামার ৫৭৬ রানের বিশ্বরেকর্ড জুটি। এক সময় ছিল এক বলে এক উইকেট, দ্বিতীয় উইকেটটি পেতে কুলকার্নিকে বোলিং করতে হয়েছে আরও ১২২.৫ ওভার। সেটিও তাঁর তৃতীয়টেস্টে। দ্বিতীয় টেস্টটিতে বৃষ্টির কারণে বোলিং করারই সুযোগ পাননি। টেস্টের সংখ্যা তিন তাই শুধু কাগজে-কলমেই। কুলকার্নি হয়তো প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার গল্পটা কাউকে বলেনও না। ৩ টেস্টে ১৬৬ গড়ে ২ উইকেট---এই ক্যারিয়ার রেকর্ড নিয়ে কি আর প্রথম বলে উইকেট পাওয়া নিয়ে গর্ব করা যায়!
নাথান লায়নের আগে প্রথম বলে উইকেট পাওয়া যে দুজন বোলার ক্যারিয়ার নিয়ে গর্ব করতে পারেন, তাঁদের কথা বলে লেখাটা শেষ করি। মরিস টেট ও ইন্তিখাব আলম। ৩৯ টেস্টে ১৫৫ উইকেট টেটের। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা মিডিয়াম পেসার হিসাবে নমস্য হয়ে আছেন আজও। ক্রিকেটে বাবা-ছেলের সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পটার শেষ অংশটুকুর রূপকারও তিনি। বাবা ফ্রেড টেটও ছিলেন মিডিয়াম পেসার, টেস্ট খেলেছেন একটিই। ১৯০২ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নাটকীয় সেই টেস্টে ফিল্ডিংয়ের সময় পরে নির্ধারক হয়ে ওঠা ক্যাচ ফেলেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে যখন ব্যাটিং করতে নামছেন, ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য লাগে আর ৮ রান। একটি চার মেরে প্রয়োজনটা অর্ধেকে নামিয়ে আনার পর বোল্ড হয়ে যান ফ্রেড। ৩ রানে পরাজয়ের দু:খে পরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'বাড়িতে আমার ছোট্ট একটা ছেলে আছে। একদিন ও এই পরাজয়ের শোধ নেবে।' মরিস টেট সত্যিই তা নিয়েছিলেন।
ইন্তিখাব আলমের অনেক পরিচয়। ব্যাটিংটাও ভালোই পারতেন এই লেগ স্পিনার। ৪৭ টেস্টে ১২৫ উইকেটের পাশাপাশি ১টি সেঞ্চুরি ও ৮টি ফিফটিসহ ১৪৯৩ রান অলরাউন্ডার হিসাবেই চিনিয়ে দেয় তাঁকে। পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করেছেন, কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েক দফায়। আন্তর্জাতিকক্রিকেটে পেশাদার কোচের ধারণা শুরু তাঁকে দিয়েই। টেস্টে প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার অভিজ্ঞতাটা শোনার সুযোগ হয়েছে তাঁর মুখ থেকেই। ১৯৫৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচিতে সেই টেস্টটি খেলা হয়েছিল ম্যাটিং উইকেটে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পনের বাকি থাকতে অধিনায়কফজল মাহমুদ বল করতে ডাকেন তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের তখন মাত্র শুরু, একটু আগেই উদ্বোধনী জুটিটা ভেঙেছে। বাকিটুকু শুনুন ইন্তিখাবের মুখেই, 'সে সময় আমি প্রথম দু'তিনটি বল করতাম মিডিয়াম পেসারের মতো। লেগ ব্রেক করতে গিয়ে শর্ট বা লং হপ দিয়ে ফেলতে পারি, এই ভয়ে। ফজল মাহমুদও এটা জানতেন। কেন যেন তিনি আমাকে বলে দেন, প্রথম বলটাই লেগ ব্রেক করো। তিনি এটা না বললে হয়তো আমি প্রথম বলে উইকেট পেতামনা। আমি লেগ ব্রেকই করলাম। প্রায় নতুন বল, এ কারণেই ম্যাটে পড়ে ছিটকে গেল। মাকডোনাল্ড (অস্ট্রেলীয় ওপেনার। কাট খেলতে খুব পছন্দ করত। কাট খেলতে গিয়েই বোল্ড হয়ে গেল। এর পরের দৃশ্যটা আমার এখনো বিশ্বাস হতে চায় না। প্রায় কানায় কানায় ভরা করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে! আমার মনে হচ্ছিল, এটা স্বপ্ন না সত্যি!'
এত যে খুশি হয়েছিলেন, প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার 'অভিশাপ' সম্পর্কে জানতেন না? ইন্তিখাব হেসে বলেছিলেন, 'তখন কি আর এত কিছু জানতাম নাকি! অনেক পরে জানার পর মনে হয়েছে, তখন না জানাটা ভালোই হয়েছে।'
এখন অবশ্য কেউ জানলেও কোনো সমস্যা নেই। চোখের সামনে শাপমোচনের রাজকুমার নাথান লায়ন আছেন না!