২৪ ধাপের ধাঁধা মেলাতে বলছেন ডোনাল্ড
২৪টি বল মানে ২৪ ধাপের এক ধাঁধা। বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের কাছে টি-টোয়েন্টির বোলিংটা এমনই। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে একজন বোলার সর্বোচ্চ ৪ ওভার বা ২৪টি বল করতে পারেন—ডোনাল্ডের ইঙ্গিত সেদিকেই। পরিস্থিতি, উইকেট, কন্ডিশন বিবেচনায় সে ধাঁধা মেলাতে হবে, ডোনাল্ডের দর্শন এমন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য বাংলাদেশি বোলাররা সে ধাঁধা মেলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে ম্যাচে হতাশ হলেও পরের ম্যাচে বোলারদের পারফরম্যান্সে বেশ সন্তুষ্টই ডোনাল্ড। আশা করছেন, সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পেসারদের পারফরম্যান্স অন্তত আরও ‘৫-৮ শতাংশ’ ভালো হবে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে দুই ম্যাচেই উইকেট ছিল বেশ ব্যাটিং–সহায়ক। প্রথম ম্যাচে সেখানেই খেই হারিয়েছিলেন বাংলাদেশ বোলাররা, বিশেষ করে পেসাররা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে মোসাদ্দেক হোসেনের দুর্দান্ত বোলিং সুর ধরিয়ে দেওয়ার পর তাঁরা বেশ আঁটসাঁট বোলিংই করেছেন । লাইন-লেংথের ধারাবাহিকতার দিকেই নজর ছিল তাঁদের।
সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জিম্বাবুয়ে সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের ডোনাল্ড জানিয়েছেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের বোলিং দর্শনের কথা, ‘গতকাল ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিকে তাকালে দেখবেন, ইংল্যান্ড ৯৮ (১০১) রানে গুটিয়ে গেছে। যেকোনো দিনই টি-টোয়েন্টি খুবই নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে পারে। (টি-টোয়েন্টি বোলিংকে) আমি যেভাবে দেখি, আপনাকে ২৪ ধাপের একটা ধাঁধা মেলাতে হবে। এর মানে হচ্ছে আপনাকে স্মার্ট হতে হবে, “স্ট্রিট স্মার্ট”।’
দলের বোলারদের কাছ থেকেও সেটিই আশা করেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার, ‘দলের মিটিংয়ে আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই এ নিয়ে কথা বলছি—কীভাবে আমরা প্রথম বলটা করব, শেষ বলটা করব। যে দলেই হোন না কেন, সমন্বিতভাবে বোলারদের দিনটা খারাপ যেতেই পারে। কাল আমাদের শুরুটা দারুণ হয়েছিল, পেসাররা ভালোভাবে শেষ করেছে এরপর। গতকাল আমরা দেখিয়েছি, আমরা কেমন স্মার্ট হতে পারি। আশা করি কালকেও ঘুরে দাঁড়াব।’
দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে দলে ফিরেছেন ২০২০ সালে একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা হাসান মাহমুদ। এরপর গত বছরের শুরুর দিকে ওয়ানডে অভিষেক হলেও চোটের কারণে বেশ কিছুদিন বাইরে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে হাসানের বোলিংয়ে মুগ্ধই হয়েছেন ডোনাল্ড, ‘গতকাল পেসারদের পারফরম্যান্সে খুশি আমি। বিশেষ করে হাসান মাহমুদে মুগ্ধ হয়েছি। তার কথা অনেক শুনেছি। সে দারুণ স্কিল দেখিয়েছে। চরিত্রের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তার ভাবভঙ্গি, সে যেমন শান্ত ছিল...প্রায় দেড় বছর বাইরে ছিল। ভালো ছেলে, ভালো অ্যাথলেট, শারীরিক দিক দিয়ে বেশ সমর্থ। তার সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে।’
গতকাল ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিকে তাকালে দেখবেন, ইংল্যান্ড ৯৮ (১০১) রানে গুটিয়ে গেছে। যেকোনো দিনই টি-টোয়েন্টি খুবই নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে পারে। (টি-টোয়েন্টি বোলিংকে) আমি যেভাবে দেখি, আপনাকে ২৪ ধাপের একটা ধাঁধা মেলাতে হবে। এর মানে হচ্ছে আপনাকে স্মার্ট হতে হবে, “স্ট্রিট স্মার্ট”অ্যালান ডোনাল্ড, বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ
সব মিলিয়ে পেসারদের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি ডোনাল্ড। দ্বিতীয় ম্যাচটি হয়েছিল ভিন্ন এক উইকেটে। তবে শেষ ম্যাচে খেলা হবে প্রথম ম্যাচের উইকেটেই। অবশ্য পরের ম্যাচে আরেকটু ভালো কিছুর প্রত্যাশাই করছেন ডোনাল্ড, ‘প্রথম ম্যাচে কিছু কিছু দিকে পিছিয়ে ছিলাম। কাল দেখিয়েছি, কীভাবে ম্যাচ শেষ করব। (সিকান্দার) রাজা (ক্রিজে) আটকে ছিল, কাল তাকে ভিন্ন ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। প্রথম ম্যাচের মতো আক্রমণ করতে পারেনি। গতকাল পেসারদের পারফরম্যান্সে খুশি আমি। আশা করছি, আগামীকাল ৫-৮ শতাংশ ভালো করবে।’
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ পাচ্ছে না এ সিরিজের অধিনায়ক নুরুল হাসানকে। আঙুলের চোটে পড়ে সফরই শেষ হয়ে গেছে তাঁর। নুরুলের জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মোসাদ্দেককে। স্বাভাবিকভাবেই নুরুলের জন্য খারাপ লাগছে ডোনাল্ডের, ‘আজ নাশতার সময় দেখা হয়েছে। আঙুলে স্প্লিন্ট ছিল। ভেবেছিলাম সতর্কতা হিসেবেই। সে বলল যে, “না, ভেঙেই গেছে”। তার জন্য খারাপ লাগছে। ভালো উইকেটকিপিং করছিল, বল পেটাচ্ছিল ভালোভাবে, গত দুই ম্যাচে অধিনায়কত্বও ভালো করেছে। সে এমনভাবে অধিনায়কত্বের দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে, যেন এর আগে ২০-৩০ বার এ কাজ করেছে। আমরা তাকে মিস করব। আশা করি, তিন সপ্তাহের মধ্যে সেরে উঠবে, এশিয়া কাপে ফিরবে।’
তবে নুরুলের না থাকা একটা সুযোগ হিসেবেও দেখতে চান বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ, ‘আমরা তার বল পেটানোর সামর্থ্য মিস করব। প্রথম ম্যাচে সে দেখিয়েছে। তবে কাল আরেকটি সুযোগ। লিটন দেখিয়েছে, সে অসাধারণ উইকেটকিপার। আর ম্যাচ শেষ করার ক্ষেত্রে আশা করি অন্য কেউ এগিয়ে আসবে।’