তাসকিনের কাছে শোয়েব

শোয়েব আখতারের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ। পরশু মিরপুরে l প্রথম আলো
শোয়েব আখতারের সঙ্গে তাসকিন আহমেদ। পরশু মিরপুরে l প্রথম আলো

ম্যাচ শুরু হতে তখনো বেশ বাকি। খুব মনোযোগ দিয়ে সাদা রঙে রানআপের দাগ দিচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। যেন এক শিল্পী একাগ্রচিত্তে আলপনা আঁকতে বসেছেন। এ সময় হঠাৎ একজনের ডাক। তাকিয়ে দেখেন, শোয়েব আখতার। পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার এশিয়া কাপে ধারাভাষ্য দিতে এসেছেন বাংলাদেশে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগে ওখানেই তাসকিনের সঙ্গে বাতচিত হয়ে গেল শোয়েবের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে গতিময় বোলিং দিয়ে তাসকিন সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের পেস আক্রমণ। এবার এশিয়া কাপেও মাশরাফি বিন মুর্তজার অন্যতম অস্ত্র তিনি। তাসকিনকে দেখেই কিনা নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের সোনালি দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল শোয়েবের!
গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষের ব্যাটিংকে কাঁপিয়ে দেওয়া, দুটি হাত দুই দিকে ছড়িয়ে উড়ন্ত চিলের মতো উদ্যাপন! কী আশ্চর্য মিল, তাসকিনের উদ্যাপনও কিন্তু শোয়েবের মতো। ছেলেটার বোলিং মনে ধরেছে বলেই কিনা তাসকিনকে ডেকে কিছু পরামর্শ দিলেন পাকিস্তানের সাবেক গতিতারকা।
তো ‘কী কথা তাহার সনে?’ তাসকিন বললেন, ‘তিনি আমার বোলিংয়ের প্রশংসা করলেন। সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দিলেন। জোরে বল করার সঙ্গে সেটি কীভাবে আরও ওপরে ফেলা যায়, কীভাবে আরও ভয়ংকর বাউন্সার মারা যায়, কতটুকু রানআপ নিলে বোলিং আরও নিখুঁত হয়—এসব বললেন। সময় তো খুব বেশি পাইনি। বেশিক্ষণ কথা বলা যায়নি।’
এমনিতে নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার কিংবা এর আশপাশে বোলিং করে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে পরশু তাসকিনের একটি বল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে আলাদাভাবে। তাসকিনই জানালেন, ওই ডেলিভারিটি ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার গতির। প্রশ্নটা এখন বেশ উচ্চকিত—এটাই কি বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে গতিময় বল?
এক যুগের বেশি সময় ধরে ধারাভাষ্যে জড়িয়ে থাকা আতহার আলী খান জানালেন, গত বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড-মেলবোর্নে বাংলাদেশের বোলারদের ১৪৭ কিলোমিটার গতির বোলিং দেখেছেন। তবে বোলারের নাম তাসকিন নাকি রুবেল হোসেন—এই নিয়ে ধন্দ রয়েছে তাঁর।
মাশরাফিও পরিষ্কার নন, এটিই বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে সর্বোচ্চ গতির বল কি না। অধিনায়ক বললেন, ‘সম্ভবত রুবেল এর চেয়ে বেশি গতিতে বল করেছে। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিংয়ের সামর্থ্য আছে ওর।’
চোটের কারণে অনেক দিন ধরে দলের বাইরে রুবেল। গতির কথা তুলতেই বাংলাদেশ দলের এই পেসার মুঠোফোনে কাল সন্ধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, ‘সেবার ভারতের বিপক্ষে আমার একটা ডেলিভারি ছিল ঘণ্টায় ১৪৮.৬ কিলোমিটার।’
এমনিতে গতিময় বোলারদের একটু বেশি রান খরচের ঝুঁকি থেকে যায়। সেই ঝুঁকির মধ্যেও তাসকিনকে স্বাধীনভাবে বোলিং করার লাইসেন্সই দিচ্ছেন মাশরাফি, ‘একেক বোলারের একেকটা শক্তির দিক থাকে। তাকে তার শক্তি অনুযায়ী বল করতে দেওয়া উচিত। তবেই সে সাফল্য পাবে। তাসকিনের মূল শক্তি জোরে বল করা। আমরা ওর শক্তিকে সব সময় প্রাধান্য দিই।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ জয়ের পর দলের অন্য সবার মতো তাসকিনও কাল ছুটি কাটিয়েছেন বাসায়। তাঁর পরনে দেখা গেল একটা সাদা টি-শার্ট, তাতে লেখা—‘বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম’। সেই সেরাটার দেখা মিলবে ফাইনালে? স্নিগ্ধ হাসিতে তাসকিন শুধু বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ।’