কাঁদলেন মাবিয়া, কাঁদালেনও
গতকাল বিকেল পর্যন্ত বলতে গেলে অপরিচিতই ছিলেন মাবিয়া আক্তার। ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে মাতামাতির দেশে একজন নারী ভারোত্তোলোকের নাম জানবেই বা কেন? কিন্তু রোববার বিকেলের পর সেই মাবিয়া আক্তারই তাঁর নামটিকে দেশের ক্রীড়াঙ্গণের ইতিহাসে তুললেন এবারের এসএ গেমসে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়ে। এই সাফল্যই তাঁকে পরিচিতি দিতে যথেষ্ট ছিল, কিন্তু এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের অবতারণা করে মাবিয়া স্থান করে নিয়েছেন সবার মনে।
সে দৃশ্য চমৎকার। আবেগ জাগানিয়া। পদক বিতরণের সময় মাবিয়া যখন বিজয়মঞ্চে, ঠিক তখনই বেজে উঠল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। আবেগাপ্লত মাবিয়া তখন আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। লাল-সবুজ পতাকাটি যখন ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছিল, মন ছুঁয়ে যাওয়া সারল্যে মাবিয়া পতাকার দিকে তাকিয়ে স্যালুটের ভঙ্গি করলেন, কাঁদতে লাগলেন অঝোর ধারায়। জাতীয় সংগীতের মধুর সুর-মূর্ছনার সমাপ্তি ঘটার আগ পর্যন্ত তিনি একইভাবে কেঁদে গেলেন। এই দৃশ্য গতকাল বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ভাইরাল’। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’-রবিঠাকুরের এই অনন্য সৃষ্টি যেন কাল নতুন করেই দেশাত্মবোধে জাগিয়েছে সবাইকে। মাবিয়া নিজের কীর্তি দিয়েই বাঙালির প্রাণের এই সুরে যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন নতুন করেই।
ক্রিকেটের সাফল্য মাঝে মধ্যেই উদ্বেলিত করে দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা অনেকবারই আনন্দে রাঙিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষকে। কিন্তু মাবিয়া আক্তার কাল কেবল সোনা জয়ের আনন্দই ছড়িয়ে দেননি, ছড়িয়েছেন স্বদেশপ্রেমের এক অনির্বচনীয় অনুভূতিও।
সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে মাবিয়াকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অনেকেই তুলে ধরেছেন বাংলাদেশে ক্রিকেট-ফুটবলের বাইরে অন্যান্য খেলাগুলোর দৈন্যদশার কথা। কী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাবিয়ার মতো ক্রীড়াবিদেরা উঠে আসেন, কী ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে এই সব খেলার খেলোয়াড়েরা নিজেদের লক্ষ্যপূরণের দীক্ষা নেন; সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তা নিয়েও হয়েছে জোর আলোচনা। বিজয়ীর বেশে নিজে কেঁদে, সবাইকে কাঁদালেন মাবিয়া। কাল তিনি যেন হয়ে উঠেছিলেন পাদ-প্রদীপের বাইরে থাকা দেশের অন্যান্য খেলাধুলার এক অসাধারণ বিজ্ঞাপন।
মাবিয়ার এই স্বর্ণ-সাফল্যে হয়তো মিছিল হয়নি দেশজুড়ে। কিন্তু দক্ষিণ এশীয় গেমসে সোনা জিতে তিনি লাল-সবুজের এই দেশকে যেভাবে সম্মানিত করলেন, যেভাবে আবেগাপ্লুত করলেন সকলকে, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে গুয়াহাটির এই দৃশ্য অম্লান থাকবে অনেক দিন, অনেক বছর।