করোনা নিয়ে এত প্রশ্ন, উত্তর দেবেন কে?
বুন্দেসলিগা শুরু হচ্ছে আজ। ইতালি-স্পেনেও ফুটবলের শীর্ষ দুই পর্যায়ে খেলা শুরু করার দিনক্ষণ প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। প্রতিবেশিদের এভাবে এগিয়ে যেতে দেখে তর সইছে না যুক্তরাজ্যের ফুটবল কর্তৃপক্ষের। তাই করোনাসংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে থাকার পরও লিগ শুরু করতে চাইছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ। পারলে সেটা জুনেই।
কর্মকর্তারা চাইলেও ফুটবলাররা এখনো একমত হতে পারেননি এ ব্যাপারে। খেলা শুরু করার আগে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তাঁরা। এসব প্রশ্নের পরিস্কার জবাব কেউ দিচ্ছেন না। এ সপ্তাহে পেশাদার ফুটবলারদের অ্যাসোসিয়েশন, প্রিমিয়ার লিগের কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মকর্তারা একটি কনফারেন্স কলে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই নিজেদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন ফুটবলাররা।
ওয়াটফোর্ড অধিনায়ক ট্রয় ডিনি তো সোজাসাপ্টা বলেই দিয়েছেন, পরিবারকে বিপদে ফেলে খেলা সম্ভব নয় তাঁর পক্ষে, 'আমি আপাতত ফুটবল নিয়ে কথাই বলছি না-আমি কথা বলছি আমার পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে।' ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, 'আমার যদি মনে হয় এতে আমার পরিবারের দেখভাল করা হচ্ছে না, তাহলে আমি খেলব না। আমি আমার পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলব না কোনোভাবেই। কী করবে তারা, আমার সম্পদ কেড়ে নেবে? আমি এর আগেও কপর্দকশূন্য ছিলাম, এতে আমার কিছু আসে যায় না। তারা বলছে ২০২১ সাল পর্যন্ত দর্শকদের সামনে খেলা যাবে না। যদি একটা স্টেডিয়ামে দর্শক ঢোকা নিরাপদ না হয়, তাহলে খেলোয়াড়েরা কীভাবে নিরাপদ থাকেন?'
ফুটবল মাঠে গড়াতে চাইলে প্রতিটি ম্যাচের সব ফুটবলার ও দলের কোচ ও স্টাফদের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। সে সঙ্গে ম্যাচ আয়োজনসংশ্লিষ্ট বাকিদেরও পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। এক একটি ম্যাচের সঙ্গে কয়েক শ ব্যক্তি জড়িত থাকেন। ফলে প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার বাড়তি করোনা পরীক্ষা করাতে হবে ইংল্যান্ডে।
ইংলিশ ফুটবলের প্রথম দুই স্তরের জন্য এভাবে প্রতি সপ্তাহে করোনা পরীক্ষা করাকে নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না ওয়াটফোর্ড গোলরক্ষক বেন ফস্টারের, 'ফুটবলাররা প্রয়োজনীয় কর্মী নয় (স্বাস্থ্য বা অন্য সেবা খাতের মতো), যারা সামনে থেকে লড়াই করছেন তাদের আগে আমাদের পরীক্ষা করানোর সুযোগ দেওয়া ঠিক না।'
বিবিসিকে ফস্টার আরও বলেছেন, 'আমি জানি না, অনুশীলনে আমরা মাস্ক পরব কিনা, আমার কোনো ধারণাই নেই। এটা আর কখনো স্বাভাবিক হবে না, পুরো ভিন্ন পরিস্থিতি। একটা কর্নারের সময় আপনি কীভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন? গোলরক্ষকেরা কি এখন তাদের গ্লাভসে থুতু ফেলতে পারবে (প্রায় সব গোলররক্ষকের এ অভ্যাস আছে)?'
নরউইচ সিটির অধিনায়ক গ্র্যান্ট হেনলি মাঠে ফেরার অপেক্ষায়। কিন্তু এখনো কিছু ব্যাপার নিয়ে তাঁর মনে সন্দেহ রয়ে গেছে, 'অনুশীলনে ফেরার জন্য যে নিয়ম দেওয়া হয়েছে, তা ঠিকই মনে হচ্ছে। কিন্তু এর পরের ধাপগুলো কী হবে? এরপর আমরা কী করব? যখন শারীরিক সংস্পর্শের অনুশীলন ও ম্যাচের সময় হবে, তখন? আমার স্ত্রী গর্ভবতী , ফলে এ নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত আমি। সব দল ও খেলোয়াড়ের এ নিয়ে ভিন্ন মত আছে। কারও কারও পরিবারে বেশি ঝুঁকিতে থাকা সদস্য আছে।'
মাঠে ফুটবল ফেরানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে, একা একা অনুশীলনের দিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হেনলির প্রশ্ন এমন অনেক বিষয় আছে যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে কেমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, 'আমরা কীভাবে ম্যাচের জন্য ভ্রমণ করব? কোথায় থাকব? কোন ধরণের হোটেলে? কিভাবে নিশ্চিত হবো থাকার জন্য এই হোটেলগুলো নিরাপদ? শেষ পর্যন্ত পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলছেন কিনা সেটাই হলো প্রশ্ন এবং আমার ধারণা সব দলই এখন এ নিয়ে ভাবছে।'
আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন ফুটবলের হর্তাকর্তারা। এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় হবে তাঁদের?