করোনার পর কী হবে?

কোভিড-১৯ পৃথিবীর অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দেবে। ছবি: এএফপি
কোভিড-১৯ পৃথিবীর অর্থনৈতিক চিত্র বদলে দেবে। ছবি: এএফপি

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে বিশ্ব জুড়ে। কবে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেটা বলার উপায় নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অনেকে পূর্বাভাস দিচ্ছেন আগামী জুলাই নাগাদ ইউরোপে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে পরিস্থিতি। কিন্তু ইউরোপের বাইরে কোভিড-১৯ এর প্রভাব থাকতে পারে আরও বহুদিন।

করোনা সংক্রমণের ফলে বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ। স্বভাবতই বৈশ্বিক অর্থনীতি থমকে গেছে। করোনা পরবর্তী বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা চিন্তা করে এখনই শঙ্কিত হয়ে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থনীতির ওপর এমন বিরূপ প্রভাব ক্রিকেটের ওপরও পড়বে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ক্রিকেটের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে সেটা কেমন হবে।

আইসিসির সাবেক সভাপতি এহসান মানি ও সাবেক প্রধান নির্বাহী হারুন লরগাতের মনে হচ্ছে ক্রিকেট বড় এক ধাক্কা খাবে। আর এ ধাক্কার প্রভাবটা ছোট দলগুলোর ওপরই বেশি যাবে। আইসিসি যদি আগের মতোই তিন মোড়ল নীতিতে চলে তবে অন্য দলগুলো আর্থিকভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

এহসান মানি
‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখছে। তবে আমরা আশা করছি তেমন কিছু হবে না। আমরা যা করেছি সেটা হলো প্রথমে স্বল্প মেয়াদি দুই-তিন মাসের পরিকল্পনা করেছি। এর পর বছরের শেষ পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা করেছি এবং এর পর দীর্ঘ মেয়াদি আরও এক বছরের পরিকল্পনা।’

‘আমাদের কপাল ভালো, পাকিস্তানে ক্রিকেট মৌসুম শেষ। ফলে খুব বেশি ম্যাচ হারাতে হয়নি। পিএসএলের চারটি ম্যাচ হয়নি; ব্যস, এটুকুই। বাংলাদেশের সফর আশা করি পরে হবে। কিন্তু কোনো দেশ যদি বড় কোনো সফর হারায় তবে বিপদে পড়বে। হয়তো সেটা পরের বছরের জন্য নতুন সূচি করবে কিন্তু এর ফলে পরের বছরের সূচিতে আবার প্রভাব পড়বে। আমার মনে হচ্ছে ক্ষতি কাটাতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’

‘এখনই কী ঘটবে তা বলা কঠিন। কিন্তু আমার ধারণা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব ঠিক না হলে ছোট দলগুলো বড় সমস্যার মধ্যে পড়বে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ সময়টাই মূল মৌসুম এবং এখন তারা কোনো ম্যাচ খেলতে পারছে না। ফলে এটা তাদের জন্য খুব ভয়ংকর। দক্ষিণ এশিয়ায় সাধারণত অক্টোবরে মৌসুম শুরু হয়, ফলে তারা একটু সময় পাচ্ছে। কিন্তু তত দিনে সব ঠিক হবে, সে নিশ্চয়তাও দেওয়া যাচ্ছে না।’

‘আইসিসি চাইলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পরে করতে পারে। কিন্তু এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোও সরাতে হবে। আমরা জানি না বিশ্বকাপ না হলে আসলে কত বড় ক্ষতি হবে। সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে প্রত্যেক দল ৭০ থেকে ৮০ লাখ ডলার হারাতে পারে শুধু বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেই।'

হারুন লরগাত
‘কোনো সন্দেহ নেই কোভিড-১৯ এর পর ক্রিকেট বিশ্ব বদলে যাবে। এটা তো বোঝাই যাচ্ছে মহামারির পর একটি মন্দা আসবে। সবাই বলছে সেটা বৈশ্বিক হবে। সবকিছুই নতুন করে সাজাতে হবে। আমি আশা করি নেতৃত্বে থাকা লোকজন সবকিছু বিবেচনা করে সবাইকে সাহায্য করবে। না হলে ক্রিকেট বিশ্ব অনেক ছোট হয়ে আসবে। ছোট দলগুলোর জন্য এটা টিকে থাকার লড়াই। পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে কিছু দেশ সাধারণ খরচও চালাতে পারবে না।’

‘আমি আশা করছি করোনার পর বড় তিন দল মডেলে আবার ফিরে যাওয়া হবে না। এ মডেল ধনীদের ধনী আর দরিদ্রদের হতদরিদ্র বানাবে। আমাদের অর্থ সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। যার দরকার তাকে সাহায্য করতে হবে। তিন মোড়ল নীতি এ সমস্যার সমাধান নয়।’

‘বিশ্ব বাজারের কথা চিন্তা করলে সেটা প্রায় ২৫ ভাগ ছোট হয়ে আসবে। এখনই বলা কঠিন ক্রিকেট থেকে কত টাকা বের হয়ে যাবে, কারণ বিপদ এখনো শেষ হয়নি। তবে বিশ্ববাজার যদি ২৫ ভাগ কমে আসে। তাহলে ক্রিকেটের সবার উচিত সে ধাক্কার জন্য প্রস্তুত থাকা।’