২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এখন খেললে তাঁদের দাম কত হতো?

ম্যারাডোনা, পেলে, জিদান, রোনালদো।
ম্যারাডোনা, পেলে, জিদান, রোনালদো।
>নেইমারের দাম ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো। কিলিয়ান এমবাপ্পের ১৮ কোটি। পেলে, ম্যারাডোনা, জিদান, রোনালদোরা এ যুগে খেললে দলবদলের বাজারে তাঁদের দাম কত হতো?

হিসেবটা কাল্পনিকই। বাস্তবের দলবদল মূল্যে আরও অনেক কিছুরই হিসেব জড়িত থাকে। একজন ফুটবলারের বয়স, ফর্ম, বর্তমান ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিতে কত বছর বাকি আছে তাঁর...এসব তো আছেই। এসব অঙ্ক কষে হিসেব করা যায়। কিন্তু অঙ্কের হিসেবে হয় না, এমন অনেক ব্যাপারও তো জড়িয়ে থাকে ফুটবলারদের দলবদলে। ওই ফুটবলারকে কিনতে চাওয়া ক্লাবের আর্থিক সঙ্গতি, কেনার ইচ্ছাই-বা আসলে কতটুকু, বর্তমান ক্লাবে তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ...সেসব আছে। আর ভবিষ্যতে বিশ্বের সেরাদের সারিতে নাম লেখাতে পারেন, এমন সম্ভাবনাময় ফুটবলারের ক্ষেত্রে দেখা হয় তাঁর দর্শক বা ব্র্যান্ডগুলোকে টানার ক্ষমতাও।

সব হিসেবে নিয়েই যদি বের করতে চাওয়া হয়, পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, জিনেদিন জিদান, রোনালদো নাজারিও...ফুটবল ইতিহাস রাঙিয়ে যাওয়া পুরোনো এই তারকারা এ যুগে খেললে তাঁদের দাম কেমন হতো?

দলবদলের বাজারটা এখন আর আগের মতো নেই, সে নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার মতো কিছু নয়। গত দশকের শেষ দিকে ম্যানচেস্টার সিটিতে শেখ মনসুর আর এই দশকের শুরুতে পিএসজিতে নাসের আল-খেলাইফির হাত ধরে পেট্রোডলারের ঝনঝনানির আগে-পরের দলবদলের বাজার দুরকম। এরপর এল ২০১৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে নেইমারের পিএসজিতে যাওয়া। এরপর থেকেই দলবদল মূল্য যেন আর কিছুতেই বাঁধ মানে না। আগে হয়তো ২৫-৩০ মিলিয়নে তারকা কোনো ফুটবলারকেই পাওয়া যেত, এখন ২০-২৫ মিলিয়নে একজন উঠতি তারকা বা এক মৌসুম আলো ছড়ানো কোনো ফুটবলার পেতেও ঘাম ছুটে যায়। নেইমার-কিলিয়ান এমবাপ্পের পিএসজিতে যাওয়া, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জুভেন্টাসে দলবদল, ফিলিপে কুতিনহোর বার্সেলোনায় যাওয়া...দলবদলের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে দশ দলবদলের আটটিই হয়েছে ২০১৭ সালের পর!

তা এমন টাকার ঝনঝনানির যুগে ম্যারাডোনা-পেলে-জিদান-রোনালদোদের আনতে কত খরচ হতো? হিসেবটা করার চেষ্টা করেছে ইংলিশ দৈনিক ডেইলি মিরর। স্বাভাবিকভাবেই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব এখানে আসবে না। কারণ? ওই যে, দলবদলের ক্ষেত্রে অঙ্কে হিসেব করা যায় না এমন ব্যাপারগুলো!

বিভিন্ন যুগের মধ্যে দলবদলের মূল্যকে তুলনাযোগ্য করার ক্ষেত্রে দুই সময়ের মধ্যেকার মূল্যস্ফীতি (সিপিআই - কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) হিসেব করা যায়। অনেকটা ১৯৮০ সালে এক কেজি চালের দামের সঙ্গে ২০২০ সালে এক কেজি চালের দাম তুলনায় দুই সময়ের মধ্যের মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়ার মতোই। সে হিসেবে ১৯৮২ সালে বোকা জুনিয়র্স থেকে যে ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে ৫০ লাখ পাউন্ডে কিনেছে বার্সেলোনা, সেই ম্যারাডোনার এখন দাম হতো ১ কোটি ৭৫ লাখ পাউন্ড!

১৯৯৭ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে ১ কোটি ৯৫ লাখ পাউন্ডে ইন্টার মিলানে যাওয়া রোনালদোর দাম এখন দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫০ লাখ। ২০০১ সালে ৪ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে জুভেন্টাস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসা জিদানের দাম এখন হতো ৭ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড। ক্যারিয়ারের শেষ দুটি বছর নিউইয়র্ক কসমসে খেলার আগে পেলে তো পুরোটা সময় সান্তোসেই কাটিয়েছেন, তাঁকে পেতে কোনো টাকাও খরচ হয়নি কসমসের। সে কারণে মুদ্রাস্ফীতির অঙ্ক কষে ব্রাজিল কিংবদন্তির বর্তমান মূল্য বের করা যাচ্ছে না।

কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির হিসেবটা আসলে খুবই সরলীকরণ হয়ে যায়! ২২ বছরের ম্যারাডোনাকে এ যুগে মাত্র ১৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ডে পাওয়া তো বড় দান জিতে যাওয়াই! জিদানকে পেতে যত খরচ হতো রিয়ালের, রোমেলু লুকাকুকে পেতে ইন্টার মিলানের বা গোলকিপার কেপা আরিসাবালাগাকে আনতে চেলসির এর চেয়ে ৩০ লাখ বেশি খরচ হয়েছে!

সেখানেই হিসেবে আসে খেলোয়াড়ের ‘মার্কেটেবিলিটি’ বা ব্র্যান্ডের বাজারে খেলোয়াড়ের চাহিদার ব্যাপার। নেইমারকে পেতে পিএসজি যে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরোর মায়া ত্যাগ করেছে, তার একটা বড় কারণ এটি। বিবেচনায় আসে বর্তমানে ক্লাবে একজন খেলোয়াড়ের গুরুত্ব আর আগ্রহী ক্লাব তাঁকে কতটুকু চাইছে, সেটিও। হিসেব করা হয় খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও। যে কারণে ফিলিপে কুতিনহোর দাম ওঠে ১৪ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড, ১৮ বছরের কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পেতে ১৮ কোটি ইউরো নির্দ্বিধায় খরচ করে পিএসজি।

তা পেলে তো ২৩ বছরেই দুবার বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছিলেন। তাঁর যুগে দর্শকের কাছে নেইমারের চেয়েও জনপ্রিয় ছিলেন ব্রাজিল কিংবদন্তি। সে হিসেব কষে ডেইলি মিরর জানাচ্ছে, পেলে এ সময়ে খেললে তাঁর দাম হতো ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি পাউন্ড! ১৯৯৭ সালে ২ কোটি পাউন্ডে বিক্রি হওয়া আরেক ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদোর দাম হতো ১২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড। ২০০১ সালে ২৯ বছর বয়সে রিয়ালে আসা জিদানের দাম হতো ১০ কোটি পাউন্ড।

আর ম্যারাডোনা? নেইমারের মতো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিরও ব্র্যান্ডের বাজারে অনেক কদর ছিল বটে। ১৯৮২ বিশ্বকাপে ফিফার পৃষ্ঠপোষক কোকাকোলার বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপনের মুখও ছিলেন তিনি। কিন্তু সে সময় সর্বকালের সেরাদের একজন হলেও ম্যারাডোনার দাম মিররের হিসেবে আসছে ১০ কোটি পাউন্ড। হয়তো এতে তাঁর মাঠের বাইরের বেপরোয়া জীবনের ভূমিকা আছে।