পাকিস্তানেই কেন এত দুর্দান্ত বোলার আসে?

পাকিস্তানে ভালো ভালো বোলার উঠে আসার কারণ খুঁজে পেয়েছেন মাইক আথারটন।
পাকিস্তানে ভালো ভালো বোলার উঠে আসার কারণ খুঁজে পেয়েছেন মাইক আথারটন।

লম্বা গঠন, চওড়া কাঁধ। গতি ভয়ংকর, সঙ্গে বলকে ভেতরে বা বাইরে ঢোকানো সুইংয়ের বিষ। ওহ হ্যাঁ, রিভার্স সুইংও আছে শিল্পের বাড়তি রসদ হয়ে। একজন আদর্শ পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারের বৈশিষ্ট্যই হয়ে গেছে এসব।

স্পিনও বা কম কী! আবদুল কাদির থেকে শুরু করে সাকলায়েন মুশতাক, মুশতাক আহমেদ—স্পিনও পাকিস্তানের শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে অনেকবারই।

যদিও পাকিস্তান বললে পেসারের কথাই মনে পড়ে বেশি। যুগে যুগে গতি-সুইংয়ের চোখধাঁধানো ঝলক দেখিয়ে যাওয়া পেসারে সমৃদ্ধ পাকিস্তানের ক্রিকেট। বাক্যটা পড়ে যে কারও কল্পনাতেই ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, ইমরান খান, শোয়েব আখতার...নামগুলো ভাসতে থাকার কথা।

রিভার্স সুইংকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া ইমরান খান, কিংবা সেটির প্রথম ‘আবিষ্কারক’ সরফরাজ নওয়াজ, টেস্টে ১০০ উইকেট পাওয়া (সেটিও মাত্র ২২ টেস্টে) প্রথম পাকিস্তানি ও বলতে গেলে পাকিস্তানের পেসারদের পথপ্রদর্শক ফজল মাহমুদ—তালিকায় আসবে এ নামগুলোও। আকিব জাভেদ, উমর গুল, কিংবা স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ আসিফ, স্পট ফিক্সিংয়ের শাস্তি শেষে ফিরলেও কিছুটা পুরোনো ঝলক হারানো মোহাম্মদ আমিরও তালিকায় ঠাঁই পাবেন।

কিন্তু পাকিস্তানই কেন? যুগে যুগে পাকিস্তানে এত দুর্দান্ত সব বোলার, বিশেষত পেসার পাওয়ার কারণ কী? দুর্দান্ত অনেক ফাস্ট বোলার বিশ্বের অনেক দেশই দেখেছে, কিন্তু পাকিস্তান যেন ফাস্ট বোলারদের উর্বর ভূমি। এর একটা কারণ খুঁজে বের করেছেন বর্তমানে ধারাভাষ্যকার বনে যাওয়া সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইক আথারটন। শুনতে একটু অদ্ভুত শোনাতে পারে, কারণটা পাকিস্তান ক্রিকেটে অবকাঠামোগত সুযোগের অপ্রতুলতা।

একটা দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি অনেকটা ঠিক করে দেয় সেখানে কেমন ক্রিকেটার আসবে। পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিংয়ের সমৃদ্ধ ইতিহাসই হয়তো উঠতি ক্রিকেটারদের মনে ফাস্ট বোলার হওয়ার রোমাঞ্চ জাগিয়ে দেয়। আবহাওয়া, সেখানকার মানুষের শারীরিক গঠন, উইকেটের মাটি কেমন...এসবও পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার তৈরির কারণ হিসেবে উঠে আসবে নিশ্চিত। তবে আথারটনের চোখে অবকাঠামোগত সুযোগ কম থাকাই পাকিস্তানকে সাহায্য করছে দারুণ সব ফাস্ট বোলার পেতে।

কিছুদিন আগে এবারই প্রথম পাকিস্তানের মাটিতে পুরোপুরি আয়োজিত পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) ধারাভাষ্য দিতে এসেছেন আথারটন। সেখানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) মিডিয়া টিমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয় নিয়ে কথার মধ্যেই আলোচনা চলে গেল পাকিস্তান ক্রিকেটের গ্রেটদের নিয়ে। তাতে প্রথমে থাকল আথারটনের স্মৃতিচারণ, ‘ওদের বিপক্ষে যখন খেলতাম, সব সময়ই অসাধারণ কিছু বোলার থাকত ওদের। ২০০০ সালে এখানে (খেলোয়াড় হিসেবে) আমার সর্বশেষ সফরে শেষবার যে বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে খেলেছি, সেখানে ওয়াসিম ও ওয়াকার ছিল, তারপর মুশতাক (আহমেদ) ও সাকলায়েন (মুশতাক) ছিল। চার-চারজন ম্যাচ জেতানোর মতো বোলার।’

স্মৃতিচারণ মোড় নিল আথারটনের বিশ্লেষণে, ‘পাকিস্তান অবশ্যই অনেক অসাধারণ ব্যাটসম্যান পেয়েছে। তবে আমার মনে হয় সাম্প্রতিক সময়ে ওদের বোলিংয়ের শক্তি আর গভীরতা, বিশেষ করে উইকেট নেওয়ার মতো এত বোলার এসেছে—সেটা রহস্যময় স্পিনারই হোক বা দারুণ পেস বোলার, এটাই ওদের আলাদা করে রেখেছে।’

এত দারুণ সব বোলার পাকিস্তান কেন পায়, সে ব্যাখ্যায় আথারটন বললেন, ‘আমি ঠিক জানি না পাকিস্তান কীভাবে এত অসাধারণ সব বোলারের জন্ম দিয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, এটার সঙ্গে পাকিস্তানের অবকাঠামোগত দৈন্যের একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।’ সেটা কীরকম? আথারটনের ব্যাখ্যা, ‘দারুণ অনেক ব্যাটসম্যান পেতে হলে আপনার ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো দারুণ হতে হবে, দারুণ অনেক কোচ থাকতে হবে, একটা আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট সিস্টেম থাকতে হবে। কিন্তু বোলার যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় উঠে আসতে পারে। সে কারণেই হয়তো পাকিস্তানে এ রকম বোলারের সংখ্যাটা এত বেশি।’