মুশফিকের সান্ত্বনা যখন ওয়াসিম আকরামরা
ক্রিকেট সমর্থকদের সন্তুষ্ট করা কঠিন। গত মাসেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিকুর রহিম। ৩১৮ বলের সেই ইনিংসে কয়েক সেশন উইকেটে থাকতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু মুশফিক ডাবল পাওয়ার পর সেই পুরোনো রসিকতাই নতুন করে টেনে তোলেন সমর্থকেরা—শুধু ওই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই! শ্লেষটুকু বাদ দিলে খুব দোষ দেওয়া যায় না। মুশফিকের তিন ডাবলের মধ্যে দুটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তখন এ কথাও উঠেছে, টেস্টে তিন-তিনটি ডাবল নিয়েও মুশফিকের ব্যাটিং গড় চল্লিশের নিচে (৩৬.৭৭)!
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের তিনজন ডাবল সেঞ্চুরিয়ান আছেন। মুশফিক বাদে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি অবশ্য একটি করে। ডাবল সেঞ্চুরিতে পিছিয়ে থাকলেও গড়ে কিন্তু বেশ এগিয়ে সাকিব (৩৯.৪০) ও তামিম (৩৮.৬৪)। কিন্তু মুশফিক চাইলেই সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন বিশ্ব ক্রিকেটে নজর বোলালে।
টেস্ট ক্রিকেট ফিটনেসের লড়াই। ধৈর্যের পরীক্ষা। বড় ইনিংস খেলতে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে হয়। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক বড় ইনিংস মানে ন্যূনতম ডাবল সেঞ্চুরি তুলতে এ বিষয়গুলো লাগবেই। উইকেটে নেমে ‘সেট’ হওয়া, ইনিংস গড়া এবং তার মাঝে ছন্দ কখনো থাকবে, কখনো তা ফিরে পেতে লড়াই করতে হবে। টেস্টে বড় ইনিংসগুলো গড়া হয় এভাবেই। খুব কম ইনিংসই আছে যেগুলো এক ছন্দে খেলা হয়েছে।
টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি কত কঠিন সেই উদাহরণ শচীন টেন্ডুলকার। ১৯৮৯ সালে টেস্ট অভিষেক ভারতীয় কিংবদন্তির। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেতে সময় লেগেছে ১৫ বছর! একই সময় লেগেছে জ্যাক ক্যালিসেরও। রিকি পন্টিংয়ের লেগেছে ৮ বছর। ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবলের দেখা পেতে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির সমান ৮ বছর সময় লেগেছে মুশফিকের।
এবার আসা যাক ব্যাটিং গড় নিয়ে। ইয়ান বোথামের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? ইংলিশ অলরাউন্ডার ব্যাটিংয়ে কম ভালো ছিলেন না। টেস্টে ডাবল মেরেও ব্যাটিং গড় চৌত্রিশ ছুঁতে পারেননি বোথাম। লু ভিনসেন্ট, ওয়াসিম জাফর, গ্রেগ ব্লিওয়েট, আমির সোহেল, মনসুর আলী খান পতৌদিরাও একই পথের পথিক। ডাবল সেঞ্চুরি নিয়েও কারও ব্যাটিং গড় ছত্রিশ স্পর্শ করেনি। আরেকটু সামনে তাকালে উঠে আসবেন মাইক গ্যাটিং (৩৫.৫৫), রবি শাস্ত্রী (৩৫.৭৯), কার্ল হুপাররা (৩৬.৪৬)। এমনকি বোথামের উত্তরসূরি হিসেবে খ্যাত হালের বেন স্টোকসের ব্যাটিং গড় ৩৬.৫৪।
আর টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তবু গড় ত্রিশের নিচে, এমনটাও তো দেখা গেছে ক্রিকেটে। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক সিডনি গ্রেগরি ২০১ রানের এক ইনিংস খেলেও ক্যারিয়ার শেষ করেছিলেন। রিভার্স সুইং আর গতির জন্য বিখ্যাত হলেও টেস্টে ২৫৭ রানের অপরাজিত এক ইনিংসও আছে ওয়াসিম আকরামের। পাকিস্তানকে ওয়ানডেতে প্রায় লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেওয়া ইনিংস খেলতেন ওয়াসিম। তবু টেস্টে তাঁর গড় (২২.৬৪), তাঁর ব্যাটিং ক্ষমতার কথা ঠিকভাবে প্রকাশ করে না। অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেও সবচেয়ে বাজে গড়ের রেকর্ডটা ওয়াসিম আকরামের নয়। সে রেকর্ডটাও একজন পেসারের, আর তাতে কিছুটা অবদান বাংলাদেশেরও।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে নিজের গড়টা এক লাফে ১৫.৬৪ থেকে ১৮.৭৩ করে ফেলেছিলেন জ্যাসন গিলেস্পি । নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন যে ২০১ রানে। তাতেই ইতিহাসে ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে সবচেয়ে বাজে গড়ের মালিক হয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার। অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটেও এ রেকর্ড ভাঙা কঠিন হবে যে কারও পক্ষে!