একটা রেকর্ড গড়েই জিম্বাবুয়েকে হারাল বাংলাদেশ
>লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের ফিফটি আর তামিম ইকবালের ৪১ রানে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে করে ঠিক ২০০ রান। জবাবে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়ে গেছে ১৫২ রানে।
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ঠিকই, কিন্তু এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় তো বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই বলতে গেলে লেখা ছিল। বরং ২০১ রানের লক্ষ্যে নামা জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরু থেকেই হিসাবটা ছিল, ঠিক কত রানে ম্যাচটা জিতবে বাংলাদেশ? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হলো ১৯তম ওভার পর্যন্ত। মিরপুরে আজ দুই টি-টোয়েন্টির সিরিজের প্রথমটিতে জিম্বাবুয়েকে ৪৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
সেই ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে স্বাগতিকদের ৭১ রানে হারানোই এত দিন ছিল টি-টোয়েন্টিতে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। সেটি আজ পেরিয়ে যাবে কি না বাংলাদেশ, সে হিসাবই হচ্ছিল জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ১৫তম ওভারেও। ততক্ষণে ৮ উইকেট চলে গেছে জিম্বাবুয়ের, রান মাত্র ১০৭। কিন্তু শেষ দিকে বাংলাদেশ একটু গা ছেড়ে দেওয়াতেই হোক, আর তিরিপানো-মুম্বাদের হারের আগে শেষ একটা ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টাতেই হোক, জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত থেমেছে ১৫২ রানে।
নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয় না হোক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়টা ঠিকই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৪৩ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
২০১ রানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ের ইনিংসটা বড় রান তাড়ার ক্ষেত্রে অনেক দলের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে। বড় রান তাড়ায় কী কী করা যাবে না, সেই শিক্ষা। এত বড় রান তাড়ায় অন্তত এক-দুজন ব্যাটসম্যানকে বড় ইনিংস খেলতে হয়। জিম্বাবুয়ের কোনো ব্যাটসম্যানকেই বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ওপেনার তিনাশে কামুনহুকামোয়ে (২৮) আর দশ নম্বর ব্যাটসম্যান কার্ল মুম্বা (২৫) ছাড়া কেউ ২০-এর বেশিই করতে পারলেন না! ঠিক ২০ রানে আউট হয়েছেন অবশ্য আরও তিন ব্যাটসম্যান—অধিনায়ক শন উইলিয়ামস, উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুতুম্বামি আর নয়ে নামা ডোনাল্ড তিরিপানো।
এত বড় রান তাড়ায় বড় দু-একটা জুটিও লাগে। জিম্বাবুয়েকে তেমন কিছুও করতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর নিজেদের এলোপাতাড়ি ব্যাটিং। চতুর্থ উইকেটে শন উইলিয়ামস আর তিনাশে কামুনহুকামোয়ের ৩২ রানের জুটিই ইনিংসের সর্বোচ্চ। এর বাইরে জুটিতে ২০-এর বেশি রানই এসেছে শুধু নবম উইকেটে তিরিপানো-মুম্বা আর দশম উইকেটে মুম্বা-পোফু জুটিতে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুগ্ধ করেছেন লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম। রান দিয়েছেন বটে, ৩ ওভারে ৩৪ রান এসেছে তাঁর বোলিংয়ে, তবে আমিনুল উইকেট নিয়েছেন ৩টি। চতুর্থ উইকেটে ৩২ রানের জুটিতে জিম্বাবুয়েকে পাল্টা লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখানো দুই ব্যাটসম্যান উইলিয়ামস-কামুনহুকামোয়ের দুজনকেই ফিরিয়েছেন নবম ওভারে পরপর দুই বলে। প্রথমে তামুনহুকামোয়েকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে, পরের বলে আমিনুলের ফুলটসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন উইলিয়ামস। পরে ১৩তম ওভারের শেষ বলে মুতুম্বোদজিকেও ফিরিয়েছেন আমিনুল।
দারুণ বোলিংয়ে মুগ্ধ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমানও। ৪ ওভারে ৩২ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এর মধ্যে অবশ্য নিজের শেষ বলে মুম্বার উইকেটটি নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করার আগে শেষ ওভারেই মোস্তাফিজ দিয়েছেন ১৩ রান। ১টি করে উইকেট শফিউল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও আফিফ হোসেনের।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে পাঠিয়েই তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ঝড়ের মুখে পড়ে জিম্বাবুয়ে। সিলেটে শেষ ওয়ানডেতে যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ ঠিক যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন লিটন। জিম্বাবুইয়ান বোলারদের চোখের জল, নাকের জল এক করে লিটন সেদিন করেছিলেন ১৭৬, যা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। আজ ৩৯ বলে ৫৯ রান করে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়ার আগে মিরপুরের দর্শকদেরও ভালোই আনন্দ দিয়েছেন লিটন।
তামিমও কম যাননি। ৩৩ বলে ৪১ রানে ফিরলেও ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পাওয়াটা বেশ উদযাপনই করছিলেন তিনি। এ দুজন আজ ছুঁয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটির রেকর্ড। তাঁদের গড়ে যাওয়া ৯২ রানের ওপেনিং জুটি আর সৌম্য সরকারের ৩২ বলে ৬২ রানে স্কোর বোর্ডে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০০ তুলেছে বাংলাদেশ। এটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
বাংলাদেশের পুরো ইনিংসে আজ ছক্কা হয়েছে ১২টি। এটি নিজেদেরই ছক্কার রেকর্ড নতুন করে ছোঁয়া। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ১২ ছক্কা মেরেছিল বাংলাদেশ।