ইডেনে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দও
ভারতের দার্শনিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব স্বামী বিবেকানন্দ ফুটবলের পাশাপাশি খেলেছেন ক্রিকেটও।
পারিবারিক নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। স্বামী বিবেকানন্দ নামে চেনে গোটা উপমহাদেশ। তিনি একাধারে দার্শনিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এ মানুষটি পরোক্ষভাবে ভারতীয়দের জাতীয় আত্মচেতনার রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন। ভারতে হিন্দু পুনর্জাগরণের পুরোধা এ ব্যক্তিত্ব খেলতেন ক্রিকেটও! ১৮৬৩ সালে জন্ম নেওয়া বিবেকানন্দ খেলেছেন ইডেন গার্ডেনেও।
ঘরে বসে না থেকে তরুণদের শরীরচর্চায় মনোযোগী হতে বলতেন বিবেকানন্দ। স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র থাকতে তিনি নিজেও অনেক খেলায় অংশ নিয়েছেন। শরীরচর্চায় অনেক সময় দিয়েছেন নানা আখড়ায়। ফুটবল, ফেন্সিং ও বক্সিংয়ে বেশ হাত পাকিয়েছিলেন বিবেকানন্দ। ক্রিকেটে এসেছিলেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী টাউন ক্লাবের মাধ্যমে। ১৮৮৪ সালে এ ক্লাবের গোড়াপত্তন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মশুয়া গ্রামে বিখ্যাত রায় চৌধুরী পরিবারের সন্তান—গণিতবিদ ও উপমহাদেশে ক্রিকেটের অগ্রদূত সারদারঞ্জন রায়ের হাতে। তিনি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ। ১৭৯২ সালে ব্রিটিশদের গঠন করা কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে তখন জমাট লড়াই হতো টাউন ক্লাবের।
ব্রিটিশশাসিত ভারতের বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে একদিন আড্ডা দিচ্ছিলেন বিবেকানন্দ। সে আড্ডাতেই বিবেকানন্দকে ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব দেন হেমচন্দ্র, জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। সে প্রস্তাবে এক কথায় রাজি হয়ে যান বিবেকানন্দ। এরপর হেমচন্দ্র ঘোষের তত্ত্বাবধানে বেশ হাত পাকিয়ে ফেললেন বোলিংয়ে। এরপর নামলেন ইডেনে, সেদিন কলকাতা ক্রিকেট ক্লাবের মুখোমুখি হয়েছিল টাউন ক্লাব। ইডেনের বয়স তখন প্রায় ২০ বছর। ‘নন্দন-কানন’খ্যাত এ মাঠে তখন ক্রিকেট লড়াইয়ে মুখোমুখি হতো শাসক (ব্রিটিশ) ও শাসিত (ভারতীয়)।
বিবেকানন্দ টাউন ক্লাব দলের বোলার। খেলার উত্তেজনায় প্রায় আবেগতাড়িত হয়ে উঠছিলেন বিবেকানন্দ। শান্ত থেকে তাঁকে নিজের বোলিংয়ে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন হেমচন্দ্র। এরপরই চমক—ব্রিটিশরা স্কোরবোর্ডে ২০ রান যোগ করার মধ্যে বিবেকানন্দ নিলেন ৭ উইকেট!
১৮৮৭ সালে সন্ন্যাস নেওয়ার প্রায় দুই বছর আগ পর্যন্তও টাউন ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিবেকানন্দ। তখন ইডেনে ক্রিকেটও খেলতেন নিয়মিত। অনুরাগী ছিলেন ফুটবলেরও। দুটোই টাউন ক্লাবের হয়ে। শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘সহাস্য বিবেকানন্দ’ বইয়ে এর উল্লেখ রয়েছে। টাউন ক্লাবের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসব তথ্য নথিভুক্ত করা আছে। ফুটবল নিয়ে বিবেকানন্দ একবার বলেছিলেন, ‘ফুটবল খেলা ও ভাগবত গীতা পাঠে স্বর্গের কাছাকাছি থাকা যায়।’