১৪৪ কিলোমিটার গতি ধরে রাখতে পারবেন বাংলাদেশি তরুণ?

গতির ঝড় তুলেছেন গত ম্যাচে। এবার অন্যান্য অস্ত্রও দেখানোর পালা হাসানের। প্রথম আলো ফাইল ছবি
গতির ঝড় তুলেছেন গত ম্যাচে। এবার অন্যান্য অস্ত্রও দেখানোর পালা হাসানের। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ব্যাটসম্যানদের স্টাম্প ওড়ানো তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু আজ ঢাকা প্লাটুনের নেট সেশনে মুমিনুল হকের স্টাম্প ওড়াতে পারলেন না হাসান মাহমুদ। লেংথ ধরে ধরে বল করে গেলেন। গতিও ছিল বেশ। বোলিংয়ের এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আগের ম্যাচে সর্বোচ্চ কত উঠেছিল? ট্রাউজারে বল ঘষতে ঘষতে হাসান জবাব দিলেন, ‘১৪৪।’

বিপিএলে পরশু চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের মুখোমুখি হয়ে জিততে পারেনি ঢাকা। ২০ বছর বয়সী এ পেসার সে ম্যাচে রান আটকাতে পারেননি। ৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন ৫৫। তবে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন, এর মধ্যে স্টাম্প উড়িয়েছিলেন আভিষ্কা ফার্নান্দোর। ম্যাচ শেষে অনেক আলোচনার মাঝে উঠে এসেছিল হাসানের ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটার গতির ডেলিভারি। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতে সংবাদমাধ্যমকে একবার বলেছিলেন, শোয়েব আখতার তাঁর আদর্শ। ঠিক পথেই আছেন হাসান।

কিন্তু গতি তুলে তা ধরে রাখার বিদ্যাটা মোটেও সহজ না। বাংলাদেশে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতির আশপাশের পেসার এর আগেও এসেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে তাঁদের গতিও কমেছে। ঢাকার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন তা জানেন বলেই বিপিএলে যত্ন নিচ্ছেন হাসানের। মুমিনুল নেটে থাকতে তাঁর এক ডেলিভারি কোচের মনমতো হয়নি। প্রথমে একটু আদুরে কড়া ভাষায় বললেন হাসানকে। বোলিং মার্কে ফেরার সময় ভুলটা শুধরেও দিলেন সালাউদ্দিন। এরপর টানা কয়েকটি ডেলিভারি ঠিক জায়গাতেই ফেললেন হাসান। কোচকে দেখে মনে হলো সন্তুষ্ট।

>

ঢাকা প্লাটুনের নেট সেশনে আজ বল করেছেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। গতি দিয়ে এবার বিপিএলে নজর কেড়েছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে উঠে আসা লক্ষ্মীপুরের এ পেসার

হাসানের ইয়র্কারও সামলাতে হলো মুমিনুলকে। ঢাকার অনুশীলন শেষে উঠতি এ পেসারের সামর্থ্য নিয়ে কথা বললেন সালাউদ্দিন। শক্তির জায়গাটা মূলত গতি হলেও হাসানের আরেকটি বিষয় চোখে পড়েছে ঢাকা কোচের, ‘ওকে তো এখন দেখিনি, দু-বছর আগে দেখেছিলাম অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। তখন দেখেছি স্লগ ওভারে তিনটা বল (ডেলিভারি) ছিল, তিনটি বলই সুন্দর ইয়র্কার করেছে। তখন মনে হয়েছে এ ছেলেটার হয়তো ভবিষ্যৎ আছে। এরপর আর দেখিনি। এবার শুনেছি এইচপিতে ভালো খেলেছে। এ কারণে আমরা তাকে নিয়েছি। উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করে নেওয়ার শক্তিটা দেশের অনেক ছেলেরই নেই।’

নেটে দুটো স্পেলে বল করেছেন হাসান। মাঝে এক চিলতে বিরতিতে বিশ্রাম নিয়ে কলা খেলেন। এরপর আবারও বোলিং। সালাউদ্দিন জানালেন, উঠতি এ পেসারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই বলার কিছু নেই, ‘তার নিজেরই আগে চেষ্টা করতে হবে। শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে তার আশপাশে যারা আছেন তাদেরও নজর রাখা জরুরি।’

দেশের ক্রিকেটে এখন ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে বল করা পেসারের সংখ্যা খুব কম। হাসানের ঠিকঠাক যত্ন নেওয়া হলে আরও জোরে বল করতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন সালাউদ্দিন। পেসারদের যে আক্রমণাত্মক মানসিকতা থেকে থাকে, সেটি হাসান এখনো রপ্ত করতে পারেনি বলে জানালেন ঘরোয়া ক্রিকেটের খ্যাতনামা এ কোচ, ‘আরও যখন অনুশীলন করবে, খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করে,যখন গায়ে শক্তি বাড়বে তখন আরও জোরে বল করতে পারবে। আমাদের বোলারদের ১৪০-এর ওপরে বল করা দরকার আসলে। তাদের এ মানসিকতায় কখনো যেন ঘাটতি না হয়। জেলা পর্যায় থেকে উঠে আসায় এখনো আক্রমণাত্মক মানসিকতাটা হয়তো তৈরি হয়নি। এটা আরেকটু আসলে আরও ভালো হবে।’

সালাউদ্দিন জানালেন হাসানের গতি নিয়ে স্বপ্ন দেখার দায়িত্বটা আসলে তাঁর একার নয়। বাকিদেরও দায়িত্ব নিতে হবে, ‘এই স্বপ্ন দেখার দায়িত্ব তার একার না। আশপাশে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব বেশি। তাকে সঠিক স্বপ্ন দেখানোটা বেশি জরুরি। এই না দেখার কারণে হয়তো আমাদের অনেক ছেলের বড় খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনাটা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।’

দু-প্রান্তে সুইং পাচ্ছে কি না, কিংবা ছন্দ কেমন, এসব নিয়ে কোনো কথা বলেননি ঢাকা কোচ। তাঁর ভাষায়, ‘টেকনিক্যাল কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলব না।’ বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। হাসান কেবল বড় পর্যায়ে খেলা শুরু করলেন। এটাই তাঁর প্রথম বিপিএল। তরুণ এ পেসারের পছন্দের কোনো বোলার আছে কি না, জিজ্ঞেস করতেই কোচ হাসানের স্বপ্নটা যেন একধাপ এগিয়ে দিলেন, ‘ওর সে সুযোগ আছে যে, তাকে পছন্দ করার মতো অনেকেই থাকবে।’