বিপিএলের সময় শতাধিক 'বেকার' ক্রিকেটার কী করবেন
ছয়টি শ্রেণিতে বিপিএলের ড্রাফট বা নিলামে এবার উঠেছিলেন ১৮১ বাংলাদেশি ক্রিকেটার। এঁদের মধ্যে দল পেয়েছেন ৬৭জন। ড্রাফটে থাকা মাত্র ৩৭ শতাংশ খেলোয়াড়ের সুযোগ হচ্ছে টুর্নামেন্টের অংশ হওয়ার। ৩৭ শতাংশের সবাই যে নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাবেন, তা নয়। তবুও দল তো পেয়েছেন। বাকি ১১৪ ক্রিকেটার বিপিএলের পুরো সময়টা বেকার থাকবেন!
ড্রাফটে থাকলেই যে সবাইকে দল পেতে হবে, এমন নয়। এবার প্রথমবারের মতো দেশের শতাধিক ক্রিকেটার বিপিএলের সময় ‘বেকার’ থাকছেন তাও নয়। আইপিএল নিলামের কথাই ধরুন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় যে আইপিএলের নিলাম হতে যাচ্ছে সেখানে ৭১৩ ভারতীয় ক্রিকেটার নিবন্ধন করেছেন। অথচ আটটি দলে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সুযোগই পাবেন মাত্র ৭৩ ক্রিকেটার। বাকিদের ‘দর্শক’ হয়েই দেখতে হবে আইপিএল। বড়সংখ্যক ভারতীয় ক্রিকেটারকে আইপিএলের দর্শক হয়ে থাকতে হলেও সারা বছর বসে থাকতে হয় না তাঁদের। আইপিএল ছাড়াও ভারতে বিসিসিআই স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টই আছে ছয়টি—সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি (আন্তঃপ্রদেশ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট), কর্ণাটক প্রিমিয়ার লিগ, তামিলনাড়ু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, টি-টোয়েন্টি মুম্বাই লিগ, তেলেঙ্গানা টি-টোয়েন্টি প্রিমিয়ার লিগ ও সৌরাষ্ট্র প্রিমিয়ার লিগ।
আর বাংলাদেশে? বিপিএল খেলতে না পারলে বিসিবি স্বীকৃত আর কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ নেই! এ বছর বিসিবি অবশ্য গত মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট করেছিল, যেটি নিয়মিত হবে কি না নিশ্চয়তা নেই। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই টুর্নামেন্ট তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি বিপিএলের দল গঠনে। অথচ বিপিএলের আগে শুধু স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা হচ্ছে অনেক আগ থেকেই। গত অক্টোবরে ক্রিকেটাররা যে ১৩ দফা দাবিতে ধর্মঘটে গেলেন, সেখানে একটি দাবি ছিল, ‘বিপিএলের আগ দিয়ে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হওয়া জরুরি। এতে বিপিএলে আরও ভালো করতে পারবে স্থানীয় ক্রিকেটাররা।’
>দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টের সময় প্রতি বছর বড়সংখ্যক ক্রিকেটার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকছেন, তাঁদের জন্য কি কিছুই করার নেই বিসিবির?
দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টের সময় প্রতি বছর বড়সংখ্যক ক্রিকেটার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকছেন, তাঁদের জন্য কি কিছুই করার নেই বিসিবির? ক্রিকেট বিশ্লেষক ও বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের সাবেক ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন বলছেন, চাইলেই বিপিএলের বাইরে আরেকটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যেতে পারে, ‘বিপিএলের আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা বারবার আসছে। সেখানে আমাদের খেলোয়াড়েরা সুযোগ পাবে, পরিচিত পাবে। এই টুর্নামেন্টে ভালো খেলা খেলোয়াড়দের অনায়াসে বিপিএলের নিলামে রাখা যাবে। বিপিএলে সুযোগ না পেলেও অনেকের টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে। আইপিএলের বাইরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নিজেরা নিজেরা টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। আমাদের যে বিভাগগুলোর সামর্থ্য আছে তারা করতে পারলে আমাদের অনেক খেলোয়াড় টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ যাবে। এখন অনেক দেশেই একাধিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হচ্ছে। আমরা কেন পারব না?’
একাধিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল তুলে ধরলেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, ‘বেশির ভাগ বিপিএলের নিলাম হয় আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট মৌসুমে (নভেম্বরে)। বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে নেওয়া হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ফর্ম দেখে। অথচ হওয়া উচিত ছিল বিপিএলের আগে একটা টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দেখে। বিপিএলে দেখবেন বেশির ভাগ স্থানীয় ক্রিকেটারদের মানিয়ে নিতেই লেগে যায় চার-পাঁচ ম্যাচ। চার দিনের ম্যাচ খেলে এসেই নতুন টুর্নামেন্ট, নতুন দলে ভালো করা কঠিন। শেষ দিকে দেখবেন বেশি ভালো করবে। আর একটা টুর্নামেন্ট দিয়ে প্রতি বছর নতুন নতুন খেলোয়াড় পাওয়াও কঠিন।’
এক টুর্নামেন্ট দিয়ে নতুন খেলোয়াড় পাওয়া কঠিন বলেই এখনো বিপিএলের ক্রিকেটীয় প্রাপ্তি সামান্য। বিপিএলে দুর্দান্ত খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন এবং বছরের পর বছর ধারাবাহিক সেবা দিতে পেরেছেন—এমন একজন খেলোয়াড় কি বাংলাদেশ পেয়েছে?