বিপিএলের ড্রাফটে জার্মান ক্রিকেটার
জার্মানি ফুটবলের দেশ। মোটর স্পোর্টসও ভীষণ জনপ্রিয়। টেনিস, গলফ, নানা পদের শীতকালীন খেলাধুলাও সেখানে চলে। কিন্তু ক্রিকেট? জার্মানি ক্রিকেট খেলে এটা অনেকের কাছেই আশ্চর্যের বিষয়। তবে এখন থেকে অন্তত বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ব্যাপারটি স্বাভাবিক চোখে দেখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এবার বিপিএলে প্লেয়ার্স ড্রাফট তালিকায় আছেন যে এক জার্মান ক্রিকেটার!
ক্রেগ মেসেদে। ‘ক্রিকেট পোকা’ হলে নামটি ভাসা ভাসা চেনা লাগতে পারে। খুঁজতে খুঁজতে হুট করেই মনে পড়তে পারে, আরে এ ছেলেটাই তো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ম্যাচে আউট করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারকে! তখন যা একটু আলোচনা হয়েছিল মেসেদেকে নিয়ে। জার্মান এ অলরাউন্ডার ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মেসেদে খেলেন জার্মান জাতীয় ক্রিকেট দলে। ইংলিশ ক্রিকেটে সমারসেট ছেড়ে এখন খেলছেন গ্ল্যামারগনের হয়ে। ২৭ বছর বয়সী এই মেসেদে-ই এবার বিপিএলে খেলোয়াড়দের ড্রাফট তালিকায় জায়গা পাওয়া একমাত্র জার্মান ক্রিকেটার।
মোট ৪৩৯ জন বিদেশি ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে ড্রাফট তালিকায়। ২২টি দেশ থেকে জায়গা পেয়েছেন এসব ক্রিকেটার। একটু আশ্চর্য লাগাই তো স্বাভাবিক। স্বীকৃত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় সাধারণত ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে মোটামুটি পরিচিত দেশের ক্রিকেটারদের রাখা হয়। ব্যতিক্রম যে একেবারে নেই তা নয়, তবে টেস্ট খেলুড়ে ১২টি দেশের বাইরে আরও ১০ দেশ।
সে কারণেই আলোচনায় উঠে আসছে ক্রিকেট খেলুড়ে হিসেবে তেমন পরিচিত নয়, এমন কিছু দেশের নাম। এই ধরুন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নামিবিয়া, ওমান, নেদারল্যান্ডস, হংকং, কানাডা, আরব আমিরাত ও নেপাল।
নিউজিল্যান্ড থেকে রয়েছেন ১জন ক্রিকেটার, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত থেকে ৩জন করে, সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটার রয়েছেন সাত-সাতজন। এমনকি স্কটল্যান্ড থেকেও আছেন ৬জন ক্রিকেটার, আরব আমিরাত থেকে ৫জন, ওমান থেকে ৪জন। আর হ্যাঁ, সঙ্গে কানাডার আরও ১৪ ক্রিকেটার। বাজারে বহু আগেই গুঞ্জন চলছে, ক্রিকেটের কুলীন দেশের খেলোয়াড়দের বিপিএলে আসতে কিছুটা অনীহা থাকে। সেটি যেন ড্রাফট তালিকার দিকে তাকালেই টের পাওয়া যাচ্ছে।
>বিপিএলে খেলোয়াড়দের ড্রাফটে রয়েছেন জার্মানি জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার। ক্রিকেটে তেমন পরিচিত নয় এমন কিছু দেশের ক্রিকেটারেরাও রয়েছেন ড্রাফট তালিকায়।
ক্রিকেটে কম পরিচিত দেশগুলোর সিংহভাগ খেলোয়াড়ই জায়গা পেয়েছেন ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে (২০ হাজার ডলার)। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নামিবিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার রয়েছেন ১ জন করে। আর তালিকায় সর্বোচ্চ ৯৫ জন খেলোয়াড় আছেন ইংল্যান্ডের, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৯ জন পাকিস্তানের, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৬জন ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বিদেশি খেলোয়াড়সংখ্যার পাশে দেশি খেলোয়াড়সংখ্যা (১৮১জন) রাখলেই কিন্তু বিশ্বায়নের চেষ্টার বিষয়টি পরিষ্কার। নেদারল্যান্ডস থেকে রায়ান টেন ডেসকাট তো আছেনই, তবে দেশটির জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক পিটার সিলার জায়গা পেয়েছেন বিপিএলের ড্রাফটে।
সে যাই হোক, আজ নিলামে হয়তো ক্রিকেটের এসব অখ্যাত দেশের খেলোয়াড়দের ছাড়াই দল সাজাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। কুলীন এবং পরিচিত দেশের ক্রিকেটারদেরই হয়তো বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে। বৈচিত্র্যের জন্য দু-একজন সুযোগ পেলেও পেতে পারেন। তবে ভারত থেকে যে তিনজন ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন তাঁদের তুলনায় ছোট দেশগুলোর কিছু ক্রিকেটারদের পরিচিতি (অন্তত খেলার মাঠে) একেবারে কম না। ভারতের তিন ক্রিকেটার— ২ ওয়ানডে খেলা ৩৫ বছর বয়সী পেসার মনপ্রীত গণি, ২০১৩ সালে রাজস্থান রয়্যালসে সুযোগ পেয়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা স্পিনার কুমার বোরেসা এবং ৩৪ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মনবিন্দর বিসলা।
আছেন আরব আমিরাতের হয়ে ওয়ানডে ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি পাওয়া শাইমান আনোয়ার। কিংবা ভিভ রিচার্ডস ও পল কলিংউডের পর এক (ওয়ানডে) ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়া একই দেশের রোহান মুস্তফাকে। তবে এই তালিকা দর্শকদের কতটা আকৃষ্ট করবে—সেই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।