ম্যাচ না পাতিয়েও কেন শাস্তি পেলেন সাকিব
বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় এক ধাক্কার দিন আজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণের পর নানা সময়েই ঘাত–প্রতিঘাতের শিকার হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। কিন্তু ২০০৮ সালে আইসিএলে তারকা খেলোয়াড়দের চলে যাওয়া কিংবা ২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের ম্যাচ পাতানো ও স্পট ফিক্সিংয়ের সে ঘটনাগুলোও সাকিবের দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার কাছে নগণ্য ঠেকছে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামা হবে না সাকিব আল হাসানের।
২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। ২৩ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হওয়া সে পর্ব পেরোতে পারলেই সুপার টুয়েলভে জায়গা পাবে বাংলাদেশ। সাকিবকে ছাড়াই তাই প্রথম পর্ব পার হতে হবে। এমনকি সুপার টুয়েলভের দুটি ম্যাচও খেলা হবে না সাকিবের। এর মাঝেই ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগছে, কী এমন অপরাধ করেছেন সাকিব, যার কারণে এত বড় শাস্তি পেলেন!
প্রথমেই বলে নেওয়া যাক, সাকিব যে ‘অপরাধ’ করেছেন, সেটির সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মোহাম্মদ আমিরদের অপরাধ মেলালে চলবে না। পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দুজনই স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিলেন। সে অনুযায়ী শাস্তি পেয়েছেন। সাকিবের ক্ষেত্রে অপরাধ ছিল অনৈতিক প্রস্তাব পাওয়ার পরও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানানো। আইসিসি আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের অপরাধের ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘একটি চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে দীপক আগারওয়াল নামের এক ব্যক্তির ব্যাপারে জানতে সাকিব আল হাসানকে ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ।’ আগারওয়াল নামের সে ব্যক্তি ক্রিকেট দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং আইসিসির চোখে সন্দেহভাজন। এ তদন্তেই সাকিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী আইনের ২.৪.৪ ধারায় তিনটি অভিযোগ দাঁড় করানো হয়েছে।
২.৪.৪ ধারা যে অপরাধের বর্ণনা দিয়েছে—
দুর্নীতি দমন আইনের অধীনে অনৈতিক আচরণে জড়িত হওয়ার আমন্ত্রণের কথা আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের কাছে (অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব না করে) প্রকাশ করতে ব্যর্থ হওয়া।
২.৪.৪ ধারায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা হয়েছে—
এটা অনস্বীকার্য যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ ধরনের সব অনৈতিক প্রস্তাব যত দ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী বিভাগ ও অন্যান্য দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান, যারা খেলাটির নৈতিকতা রক্ষার চেষ্টা করছে তার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। এটা ঠিক ‘অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব’ ছিল কি না, সেটা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদাভাবে বিচার করা হবে। একটি নির্দিষ্ট ম্যাচে যদি কোনো খেলোয়াড় দুর্নীতির প্রস্তাব পায় এবং সেটি দুর্নীতি বিভাগকে জানাতে সে যদি ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না (এবং ‘অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব’ বলে গণ্য হবে)।
দুর্নীতি দমন বিভাগের ৬.২ ধারা অনুযায়ী ২.৪.৪ ধারায় সর্বনিম্ন ছয় (৬) মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ (৫) বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সাকিব আল হাসানকে দুই বছর (এর মাঝে স্থগিত শাস্তি এক বছর) শাস্তি দেওয়ার পেছনে এ বিষয়টি ভূমিকা রেখেছে।
সাকিবের শাস্তি ছয় মাস থেকে বেড়ে যাওয়ার কারণ
১. আগারওয়ালের কাছ থেকে তিনবার প্রস্তাব পেয়েও কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২. আগারওয়ালের সঙ্গে সাকিবের সাক্ষাতের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে।
৩. সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যেভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তাতে উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা গেছে। সাকিব পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলেন আগারওয়াল তাঁর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জুয়ার কাজে তা ব্যবহার করবে।
৪. সাকিব একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি অনেকবারই দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন এবং এ ধারায় তাঁর কর্তব্য খুব ভালোমতোই জানেন।
৫. বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে সাকিব বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন।
সাকিবের সর্বোচ্চ শাস্তি না পাওয়ার কারণ
১. সাকিব নিজ থেকে সব দায় মেনে নিয়েছেন এবং তদন্তের সময় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।
২. নিয়ম ভাঙার নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায় স্বীকার করে নিয়েছেন।
৩. দুর্নীতিবিরোধী বিভাগের কাছে সাকিব অনুশোচনা করেছেন এবং অনুতপ্ত হয়েছেন।
৪. সাকিবের অতীত আচরণ।
৫. ওই নির্দিষ্ট ম্যাচগুলোয় ওই ঘটনায় আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়নি, মানুষের আগ্রহেও ঘাটতি দেখা যায়নি।
৬. ওই ঘটনায় খেলার ফলে কোনো প্রভাব পড়েনি।