বিসিবি এই মাথাব্যথা সারাবে কী করে?
লেগ স্পিনার না খেলানোর অপরাধে দুদিন আগে ঢাকা ও রংপুর বিভাগের কোচকে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কোচ বরখাস্তের এই ঘটনায় জাতীয় লিগের প্রতিটি দল এখন তটস্থ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, স্কোয়াডে লেগ স্পিনার থাকলেই টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে চোখ বুঝে খেলাবে। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন, পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থান—কিচ্ছু দেখার দরকার নেই!
ভালো মানের লেগ স্পিনারের সংকট ভালোই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিসিবির কাছে। লেগ স্পিনারের শূন্যতা দূর করতে নানা উদ্যোগও নিচ্ছে তারা। এসব উদ্যোগ নিয়ে উঠছে প্রশ্নও—কতটা ফলপ্রসূ হবে এসব উদ্যোগ? বিসিবি চাইছে জাতীয় লিগে লেগ স্পিনারদের নিয়মিত একাদশে সুযোগ দিতে হবে। খুবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এই সুযোগ দিতে গিয়ে ক্ষতিরও তো আশঙ্কা আছে।
ঢাকা বিভাগের কথাই ধরা যাক। একাদশে লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে সুযোগ দিতে গেলে একজন বাঁহাতি স্পিনারকে বসে যেতে হয়। বাংলাদেশ দলে আরেকজন ভালো মানের বাঁহাতি স্পিনারের সংকটও আছে। আবদুর রাজ্জাকের সামনে জাতীয় দলের দরজা বন্ধ হওয়ার পর সাকিব আল হাসানের একজন বোলিং-সঙ্গী পাওয়া যায়নি গত পাঁচ বছরে। এই সময়ে অন্তত ছয়জন বাঁহাতি স্পিনারকে সুযোগ দিয়েছেন নির্বাচকেরা। কেউ দলে জায়গা পোক্ত করতে পারেননি। সবশেষ আবার ফেরানো হয়েছে পুরোনো মুখ আরাফাত সানিকে।
সামনের চারটি রাউন্ড। জুবায়ের যখন ঢাকা বিভাগে খেলবেন, তখন তাঁর উপলব্ধিই-বা কী হবে! তাঁকে না খেলানোর জন্য একজন কোচের চাকরি গেছে—এটা ভেবে ভেতরে-ভেতরে একটা খারাপ লাগা কাজ করাটা অস্বাভাবিক নয়। ড্রেসিংরুমে তাঁর একধরনের অস্বস্তিও হয়তো কাজ করবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের কোচ জাহাঙ্গীর আলম এখানে ‘বলির পাঁঠা’ হয়েছেন! দ্বিতীয় রাউন্ডে জুবায়েরকে নেওয়ার পক্ষেই তিনি মত দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের সিনিয়র ক্রিকেটার, ম্যানেজার সবার মত ছিল জুবায়েরের জায়গায় একজন বাঁহাতি স্পিনার খেলানো। জাতীয় লিগ তো আর অপেশাদার বা শৌখিন কোনো লিগ নয়। এখানে দল খেলছে চ্যাম্পিয়ন হতে। পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থান ভালো করতে।
ঢাকা বিভাগের লক্ষ্য যেমন শিরোপা জেতা। তেমনি শিরোপা জেতার লক্ষ্যে খেলতে নামা একটা দল প্রতিপক্ষ-কন্ডিশন জেনেও কেন একাদশে চাপিয়ে দেওয়া খেলোয়াড় নিতে চাইবে। স্বাভাবিকভাবেই তারা সম্ভাব্য সেরা একাদশ সাজিয়েছে। একাদশ সাজিয়েও অবশ্য ঢাকা বিভাগের টিম ম্যানেজমেন্ট যোগাযোগ করেছিল বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদের সঙ্গে। তারা জানাতে চেয়েছিল, জুবায়েরকে না খেলানো বড় ‘অপরাধ’ হবে কিনা! খালেদ মাহমুদ তখন ফোনটা ধরেননি। ধরলে হয়তো ঢাকা বিভাগের কোচের চাকরিটা বেঁচেও যেতে পারত। ঢাকার অধিনায়ক নাদিফ চৌধুরী কাল বললেন, ‘যদি বুঝতাম এত বড় ঘটনা হয়ে যাবে, বোর্ড এত কঠোর হবে, আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতাম না। একটা ভুল হয়ে গেছে। সামনের ম্যাচে দরকার হলে আমি বসে যাব, তবুও লেগ স্পিনার খেলানো হবে।’
মজার ব্যাপার, রংপুর বিভাগে একজন লেগ স্পিনার কিন্তু খেলছেন। দলে লেগ স্পিনার তানভীর হায়দার থাকায় টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো রিশাদ হোসেনকে সুযোগ দেয়নি। বিসিবি তানভীরকে ‘লেগ স্পিনার’ হিসেবে গণ্য করছে কি না, সেটিও ব্যাপার। তরুণ রিশাদকেই হয়তো বেশি সম্ভাবনাময় মনে করছে তারা।
শুধু জাতীয় লিগ কেন, বিপিএলেও লেগ স্পিনার খেলানো বাধ্যতামূলক করতে চাইছে বিসিবি। এটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিপিএলে সাতটি দলে খেলানোর মতো লেগ স্পিনারই তো নেই বিসিবির হাতে। আর বিসিবির বেঁধে দেওয়া শর্ত মেনে যদি একাদশ সাজাতে হয়, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে কীভাবে? এ যেন দাবার সব ঘুঁটি একজনেরই চাল দেওয়ার মতো!
ঘরোয়া ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের পরিচর্যার যে উদ্যোগ বিসিবি নিয়েছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে প্রক্রিয়াটা নিয়ে। বিসিবির উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে, জোর করে লেগ স্পিনার পেতে চায় তারা। কিন্তু জোর করে যে খেলোয়াড় তৈরি হয় না। তাহলে কী করণীয়? কাল এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলছিলেন, এখানে ‘ডেভেলপমেন্ট’ তত্ত্বটা কাজে লাগাতে পারে বিসিবি। বিসিএলে যেমন বিসিবির একটা দল আছে। জাতীয় লিগ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল—প্রতিটি লিগ বা টুর্নামেন্টে ঠিক একইভাবে নিজেদের একটা দল রাখতে পারে তারা। এই দলে সুযোগ পাবেন উপেক্ষিত খেলোয়াড়েরা। ডেভেলপমেন্ট টিম হতে পারে বিসিবির খুব ভালো বটিকা।