শেষ সময়ের গোলে জয়টা ফসকে গেল বাংলাদেশের
>কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ যৌথ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ৪২ মিনিটে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সাদ উদ্দিন। ৮৮ মিনিটে ভারতকে সমতাসূচক গোলটি এনে দেন আদিল খান
ভারতের মাটিতে কখনো জেতেনি বাংলাদেশ। আজ সেই অধরা জয়ের দেখা মিলতে পারত। প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকার ব্যবধান পুঁজি করে ম্যাচের প্রায় শেষ পর্যন্তও জয়ের সুবাস পাচ্ছিল বাংলাদেশ। ঠিক তখনই হৃদয়ভঙ্গ। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে হেডে সমতাসূচক গোলটি করেন ভারতের আদিল খান। এই পয়েন্ট ভাগাভাগিতে আক্ষেপ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটি অবশ্যই বাংলাদেশের দু-দুটি পেনাল্টি বঞ্চিত হওয়া!
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর কলকাতায় আরেকটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ। আগ্রহের তুঙ্গে ছিল দুই প্রতিবেশী দেশের এ লড়াই। খেলাধুলার ভাষায় ‘সোল্ড আউট ম্যাচ’। যুবভারতীর তিল ঠাঁই নাই গ্যালারিতে খুব স্বাভাবিকভাবেই স্বাগতিকদের পক্ষে স্লোগান উঠেছে বেশি। কিন্তু ৪২ মিনিটে বিশ্বের অন্যতম বড় এ স্টেডিয়ামের বেশির ভাগ অংশে পিনপতন নীরবতা নামিয়ে আনেন সাদ উদ্দিন। বাংলাদেশকে এগিয়ে দেওয়া গোলটা যে এ রাইট উইঙ্গারের।
সেট পিস থেকে গোলমুখে বাতাসে বল ভাসিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। উদ্দেশ্য ছিলে গোলপোস্টের সামনে জটলার মুখে বল ফেলা। ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিং সান্ধু বলটা ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে বড় ভুল করে ফেলেন। ‘ফিস্ট’ করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় বলটা ছুঁতেও পারেননি তিনি। এ সুযোগে ডান প্রান্ত দিয়ে বুলেটের বেগে ধেয়ে আসা সাদ উদ্দিন শূন্যে লাফিয়ে হেডে গোল করেন। বলের দিক পাল্টে জালে পাঠাতে তাঁর হেডটা বেশ কৌশলী ছিল। কিন্তু ৮৮ মিনিটে আদিলের হেডে জয় নিয়ে আর মাঠ ছাড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
সব শেষ ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে খেলানো একাদশই মাঠে নামিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। ৪-১-৪-১ ফরমেশনে আঁটসাঁট মাঝমাঠ গঠন করেছিলেন তিনি। ভারত এর জবাবে বড় পাসে খেলার চেষ্টা করেছে। তবে প্রথমার্ধের ৮ মিনিটের মধ্যেই দুই গোল ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। খেলা শুরুর ২০ সেকেন্ডের মাথায় বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছিলেন লেফট উইঙ্গার ইব্রাহিম। তাঁকের বক্সের মধ্যে ফেলে দেন ভারতের রাহুল ভেকে। পরিষ্কার দেখা গেছে, তাঁকে বেআইনিভাবে ফাউল করেছেন ভেকে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) না থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় ভারত।
এরপর ৮ মিনিটের মাথায় ভারতের বক্সের মধ্যে সেই ভেকেই আবারও অবৈধভাবে ফাউল করেছিলেন। এ যাত্রায়ও পেনাল্টি দেননি রেফারি। এ দুবারেই টিভি ধারাভাষ্যকার পেনাল্টি না দেওয়ায় সমালোচনা করেন। প্রথমার্ধে গোলের আরও দুটি সুযোগ নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। ৩১ মিনিটে বিপুল একক প্রচেষ্টায় ঢুকে পড়েছিলেন ডান প্রান্ত দিয়ে। নাবীব নেওয়াজ জীবন ডান পাশে প্রায় ফাঁকা থাকলেও তাঁকে পাস দেননি। নিজে শট নিতে গিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সুযোগ নষ্ট করেছেন গোলের। সুযোগ পেয়েছিল ভারতও। ৪ মিনিটের মাথায় ভারতের সেরা ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীর ভলি রুখে দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আশরাফুল।
প্রথমার্ধে ভারত বেশি আক্রমণ করলেও রক্ষণ বেশ গোছাল ছিল বাংলাদেশ। মাথা ঠান্ডা রেখে প্রতিহত করেছে বড় পাসের বল। ম্যান মার্কিং আর বল কাড়ার ক্ষেত্রেও ভালো দক্ষতা দেখিয়েছেন রায়হান, ইব্রাহিম ও রহমত মিয়ারা। সে তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর পর প্রায় ৮০ মিনিট পর্যন্ত গোল শোধে মরিয়া আক্রমণ করেছে ভারত। ৬০ মিনিটের আনাসের শট গোল লাইন থেকে ক্লিয়ার করেছেন বিপলু। এর ১৩ মিনিট পর ভারতীয় ডিফেন্ডার আদিল খানের দৃঢ়তায় নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। গোটা ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকা ফরোয়ার্ড নাবীব নেওয়াজ জীবন ভারতের গোলরক্ষককে একা পেয়ে চিপ করেছিলেন তাঁর মাথার ওপর দিয়ে। বল গোলপোস্টের দিকে ধেয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে ক্লিয়ার করছেন আদিল।
জয়ের সুবাস পেতে পেতে হতাশার ড্রয়েও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এসে পয়েন্টের মুখ দেখল বাংলাদেশ।