সাকিবের চাওয়া কেন পূরণ হয়নি
>চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিনে বল গড়ে বাঁক নিয়েছে ৩.৩, দ্বিতীয় দিনে সেটি ৩.৫। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দুদিনে টার্ন ছিল গড়ে ৩.৪ ডিগ্রি। সাকিবের প্রত্যাশা ছিল টার্ন হবে আরও বেশি। সাকিবের চাওয়া পূরণ হয়নি কেন
সাকিব আল হাসানের চাওয়া ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম সেশন থেকেই বল ঘুরতে হবে। সেই চাওয়া পূরণ না হওয়ায় কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক পরিষ্কার জানিয়ে গেছেন, এই উইকেট তাঁরা চাননি। প্রথম দুদিনে উইকেট পুরোই ‘ফ্ল্যাট’।
বাঁকের মাপজোখ
সাকিব ন্যাড়া উইকেটের কথা বলেছেন। উইকেট কতটা ন্যাড়া, পরিসংখ্যানের আলোয় দেখে নেওয়া যাক—এই টেস্টে জহুর আহমেদের উইকেটে প্রথম দিনে ৫৭৬ ডেলিভারির ৪৮টি অর্থাৎ ৮ শতাংশ ডেলিভারি ৫ ডিগ্রির বেশি টার্ন করেছে। দ্বিতীয় দিনে সংখ্যাটা একটু বেড়েছে, তবে সাকিবদের প্রত্যাশামতো নয়। ৫২৮ ডেলিভারির ৭৪টি অর্থাৎ ১৪ শতাংশ বাঁক নিয়েছে ৫ ডিগ্রির বেশি।
২০১৫ থেকে জহুর আহমেদে প্রথম দিনে বল বাঁক নিয়েছে গড়ে ৩.৬ ডিগ্রি, দ্বিতীয় দিনে সেটি ৪.২ ডিগ্রি, তৃতীয় দিনে ৫ ডিগ্রি, চতুর্থ দিনে ৫.৪ ডিগ্রি আর পঞ্চম দিনে ৬.২ ডিগ্রিতে। শেষ দিনে কিংবা চতুর্থ ইনিংসে কতটা বিপজ্জনক বাঁক ব্যাটসম্যানদের এগোতে হয়, বোঝাই যাচ্ছে। এই টেস্টে প্রথম দিনে বল গড়ে বাঁক নিয়েছে ৩.৩, দ্বিতীয় দিনে সেটি ৩.৫। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দুদিনে টার্ন ছিল গড়ে ৩.৪ ডিগ্রি। সাকিবের প্রত্যাশা ছিল টার্ন হবে আরও বেশি।
চাওয়া কেন পাওয়া হয়নি
সাকিব কেন এমন ন্যাড়া উইকেটে খেলতে চাননি, সেটির যুক্তি তিনি কালই দিয়েছেন, ‘আমরা কীভাবে দল সাজিয়েছি, সেটি দেখি হয়তো বুঝতে পারছেন যে কী ধরনের পিচ আশা করছিলাম। ...সব সময়ই চাইলেই যে সেটা পাবেন, এটা আশা করা ভুল।’ দলে চার বিশেষজ্ঞ স্পিনারের সঙ্গে তিন খণ্ডকালীন স্পিনার—সাত স্পিনার নিয়ে যদি দেখেন উইকেট ফ্ল্যাট, অধিনায়ক হতাশ হবেনই। কিন্তু তাঁর চাওয়া কেন পূরণ হয়নি—বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান মাহাবুবুল আনাম ব্যাখ্যায় না গিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘দুই দলের স্পিনারদের মধ্যে কাদের স্পিনার সেরা? এখন আপনি প্রতিপক্ষের শক্তি অনুযায়ী খেলবেন, নাকি প্রতিপক্ষের শক্তিকে কীভাবে ভালোভাবে সামলাতে হবে, সে অনুযায়ী খেলবেন? গত বছর আফগানিস্তান যখন ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলল, ভারতের বোলিং আক্রমণ কি পুরোপুরি স্পিননির্ভর ছিল?’
উইকেট যেমনই হোক, আফগানিস্তানের ‘রিস্ট’ স্পিনাররা সেখানে দুর্দান্ত বোলিং করতে পারবেন। কিন্তু উইকেটের সহায়তা না পেলে বাংলাদেশের ফিঙ্গার স্পিনারদের কাজটা কঠিন হয়ে যাবে—সাকিব তাই ঘূর্ণি উইকেটের বাইরে ভাবতে চাননি।
তবে মাহবুবুল মনে করেন, উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা উচিত। অনেক প্রশ্ন তুললেনও বিসিবির এ পরিচালক, ‘এই উইকেটে (দ্বিতীয়) দিনের শেষ জুটি (মোসাদ্দেক-তাইজুল) কীভাবে প্রায় ২০ ওভার খেলল? (প্রথম ইনিংসে) আফগানিস্তান ব্যাটসম্যানদের কজন ক্রস ব্যাট, কাট শট বা সুইপ শট খেলেছে? আফগানিস্তান বছর কটা টেস্ট খেলে? তারা সোজা ব্যাটে খেলতে পারল, আমাদের ব্যাটসম্যানরা পারল না কেন? ওরা যেভাবে ধৈর্য নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি সেটা পেরেছে? উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি।’
স্বাগতিক হিসেবে সব দলই সুবিধা নেয়। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। গত তিন বছরে এভাবে টেস্ট জিতে আসছে তারা। সাকিব সে সূত্র ধরেই এগোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিসিবির কর্তারা ভেবেছেন আরেকভাবে। প্রশ্নটা হচ্ছে, বাংলাদেশ তো আর বিদেশে কিংবা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলছে না। খেলছে নিজেদের মাঠে। অধিনায়ক, গ্রাউন্ডস বিভাগ—দুই পক্ষের ভাবনায় এতটা পার্থক্য হলো কীভাবে?