মোহামেডান পেরেছিল, আবাহনী পারবে?
>এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালের প্রথম লেগ আজ। উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাবের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হবে খেলাটি।
৩১ বছর অনেক লম্বা সময়। তবু আজ মোহামেডান থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে আবাহনী। ১৯৮৮ সালে মালয়েশিয়ার পাহাংয়ে ৮ম এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনাল পর্বে নাসের হেজাজির অধীনে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ স্পোর্টস ক্লাবকে ১–০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১৯৯১ সালে দশম এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্তপর্বে ঢাকায় কোরিয়ার ক্লাবটির বিপক্ষে করেছিল গোলশূন্য ড্র । আজ সন্ধ্যায় সেই এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের সঙ্গেই এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল সেমিতে মুখোমুখি আবাহনী লিমিটেড।
আজ আবাহনী কী করবে? সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু ম্যাচটা শেষে পাওয়া যাবে উত্তর। তবে ঘরের মাঠের একটা বাড়তি সুবিধা তো আছেই। যে সুবিধা তারা ষোলো আনা নিতে পেরেছিল এই এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। গত ১৯ জুন নেপালের মানাং মার্সিয়াংদিকে ৫-০ গোল উড়িয়ে দেওয়ার স্মৃতিটা ফিরে আসছে।
২০১৭ সালে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে ভারতের বেঙ্গালুরু এএফসিকে আকাশি-নীলরা ঢাকায় ২-০ গোলে হারায়। সেই বেঙ্গালুরুর কাছেই পরের রাউন্ড অর্থাৎ ইন্টার জোনাল সেমিফাইনালে উত্তর কোরিয়ার এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ উড়ে যায় ৩-০ গোলে। ক্লাবটিকে তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই আবাহনীর। তাদের কোনো বিদেশি নেই। সবাই কোরিয়া সেনাবাহিনীর সদস্য। আবাহনীতে আছে তিনজন বিদেশি। তবে মানতেই হবে, বিদেশি ছাড়াও আবাহনীর চেয়ে এগিয়ে এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভ।
এই প্রতিযোগিতায় এবার গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচে ২ গোল খেয়ে ১৭ গোল করেছে উত্তর কোরিয়ার ক্লাবটি। তাদের রক্ষণ খুবই শক্তিশালী। আবাহনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙা। আবাহনী সেই সামর্থ্যও রাখে। আকাশি-নীলের কোচ মারিও লেমোস কাল বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সেটিই বলে গেলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছি, উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে গোল পাব। আমরা গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচের ৪টি জিতে গ্রুপসেরা হয়েছি। ১টি হার,১টি ড্র।’
তবে সেসবই অতীত। আজ নতুন একটি ম্যাচ। আগের ম্যাচগুলোয় উত্তর কোরিয়ার দলটি প্রচুর গোল পেয়েছে ক্রস থেকে। আবাহনীর রক্ষণকে সেই ক্রসগুলো আজ সামলাতে হবে। কিন্তু আবাহনীর রক্ষণ দুর্বল। নির্ভরযোগ্য আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি এএফসি কাপের গ্রুপ পর্ব খেলেই চলে গেছেন চেন্নাইয়িন এএফসিতে। তাঁর জায়গায় এশিয়ান কোটায় আসা মিসরের ডিফেন্ডার এলনি নাসের প্রথম ম্যাচটা খেলতে পারছে না। এএফসি কাপে সর্বশেষ ম্যাচে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের জার্সিতে লাল কার্ড দেখেন তিনি। তা ছাড়া এএফসি কাপে গত তিন ম্যাচে ভালো খেলা মিডফিল্ডার মামুনুল নেই চোটের কারণে। মামুনুল ওই তিন ম্যাচে দুটি দারুণ গোল করেন। চেন্নাইয়িন এফসির বিপক্ষে ঢাকায় দলকে জেতান শেষ সময়ে দারুণ গোল করে (৩-২)।
তবে কে আছে কে নেই, ভাবতে নারাজ কোচ মারিও লেমোস, ‘এএফসি কাপের ম্যাচে আমরা সানডেকে ছাড়াই মিনার্ভার সঙ্গে শেষ ম্যাচে জিতে এসেছি সাইগানির গোলে। ওয়েলিংটনও ছিল না। কাজেই এই ম্যাচেও আমরা পিছিয়ে নেই। তবে কোরিয়ার দলটির শক্তির বিবেচনায় নিশ্চয়ই ভিন্ন কৌশল নেব আমরা।’
আবাহনী প্রথম লক্ষ্য রক্ষণ জমাট রাখা। কোনোভাবে গোল খাওয়া চলবে না। তাই জয় না হোক ড্র পেলেও খুশি থাকবেন লোমোস, ‘আমাদের জন্য এটি ফাইনাল ম্যাচ। ঢাকায় না জিতলে ২৮ আগস্ট প্রতিপক্ষের মাঠে ফিরতি ম্যাচে জিতে আসা কঠিন। হারলে আমাদের আর পরের পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যাবে। তবে ড্রটাও খারাপ ফল নয়।’
অবশ্য পাশে বসে আবাহনী অধিনায়ক গোলরক্ষক শহিদুল আলম কোচকে অভয় দেন, ‘আমরা জেতার জন্যই খেলব।’
আবাহনী কোচেরও বিশ্বাস জেতার ক্ষমতা আছে তাঁর দলের। খুব জোর দিয়েই বলেছেন আজ তাঁর দল অবশ্যই গোল করবে। সানডে, বেলফোর্ট, জীবনরা ছন্দে আছেই। তাঁদের ওপর ভরসা রাখছেন কোচ। তবে মনে রাখতে হচ্ছে, কোরিয়ান ক্লাবের দুই স্ট্রাইকারই বেশ ভয়ংকর। দলের বেশির ভাগ গোলই তাঁদের। আর এই স্ট্রাইকারদের ওপর আস্থা রেখে দলটির কোচ ও ইয়ন সন বলছেন, ‘আমরা জেতার লক্ষ্য নিয়েই এখানে এসেছি। আশা করছি, জয় নিয়েই ফিরতে পারব।’
এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের কোচ, অধিনায়ক কেউই ইংরেজি জানেন না। দোভাষীর মাধ্যমে কোচ এটুকু বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। কিছু হাইলাইটস দেখেছি আবাহনীর। তবে প্রতিপক্ষ নয়, আমরা নিজেদের পরিকল্পনা নিয়েই বেশি ভাবছি।’
উত্তর কোরিয়া বিশ্বকাপে খেলেছে। দেশটির ১৮ বারের লিগজয়ী এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভে জাতীয় দলের চারজন ফুটবলার আছেন। তাই ঘরের মাঠ হলেও আবাহনীর জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে আজ।