মেসি, রোনালদো না ফন ডাইক?
>ইউরোপে গত মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে উয়েফা। ইউরোপের বর্ষসেরা হওয়ার লড়াইয়ে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে এবার আছেন লিভারপুলের ডাচ সেন্টারব্যাক ভার্জিল ফন ডাইক।
ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় কে? জানা যাবে আর দুই সপ্তাহ পর। আর এই পুরস্কার পাওয়ার লড়াইয়ে এবার মেসি-রোনালদোর সঙ্গে আছেন ভার্জিল ফন ডাইক। গতকাল ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ের তিনজনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে উয়েফা। কার হাতে এই পুরস্কার যাবে, তা ঠিক হবে উয়েফার সদস্যভুক্ত দেশের কোচ ও সাংবাদিকদের জুরিবোর্ডের মাধ্যমে।
গতবারের ইউরোপসেরা লুকা মদরিচ এবার জঘন্য মৌসুম কাটানোর খেসারত দিয়েছেন। তাঁর দল রিয়াল মাদ্রিদও গত মৌসুমে কিছু জিতেননি, তিনিও ছিলেন অনুজ্জ্বল। ফলে তালিকার সেরা দশেও নেই তিনি। এই তালিকার বাকি স্থানগুলোতে আছেন যথাক্রমে লিভারপুলত্রয়ী অ্যালিসন বেকার, সাদিও মানে ও মোহাম্মদ সালাহ, চেলসি থেকে সদ্যই রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া এডেন হ্যাজার্ড, যৌথভাবে অষ্টম হয়েছেন সাবেক আয়াক্স সতীর্থ ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং ও ম্যাথিস ডি লিট, দশম হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির রহিম স্টার্লিং।
২৯ আগস্ট পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের ড্র অনুষ্ঠানে সেরা খেলোয়াড়ের নাম ঘোষিত হবে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ (৩২) ও উয়েফা ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে অংশগ্রহণকারী ৮০ ক্লাবের কোচরা ভোটাভুটির মাধ্যমে সেরা তিন থেকে একজনকে বাছাই করবেন। এ ছাড়া ভোটের জন্য জুরিবোর্ডে আরও থাকবেন ইউরোপিয়ান স্পোর্টস মিডিয়ার বিশেষভাবে মনোনীত ৫৫ জন সাংবাদিক ও উয়েফা মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে একজন।
প্রত্যেক জুরি সদস্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অনুযায়ী তিনজনকেই ভোট দিতে পারবেন। যেখানে প্রথম পছন্দের জন্য পাঁচ পয়েন্ট, দ্বিতীয় জনের জন্য তিন পয়েন্ট ও তৃতীয় জনের জন্য এক পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে।
মেসি কী পারবেন তৃতীয়বাররে মতো এই পুরস্কার জিততে? নাকি রোনালদো জিতবেন চারবারের মতো? নাকি ফন ডাইক সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেখিয়ে দেবেন, ডিফেন্ডাররাও সেরা খেলোয়াড় হতে পারেন? অপেক্ষা ২৯ আগস্টের!
লিওনেল মেসি
অনেকের মতেই গতবার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মৌসুম কাটিয়েছেন মেসি। পুরো মৌসুমে ৫১ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ৫০টি। অনেক ম্যাচে বার্সেলোনাকে বিপদের হাত থেকে করছেন উদ্ধার। স্বীকৃতিস্বরূপ লা লিগা ও ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার উঠেছে তাঁর শোকেসে। ব্যক্তিগত দিক দিয়ে মৌসুমটা উজ্জ্বল কাটলেও দলগত দিক দিয়ে তেমন সফলতা পাননি এ আর্জেন্টাইন তারকা। সেটি ক্লাব বা আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই।
মৌসুমের শুরুতে সুপার কাপ জেতা বার্সেলোনা ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকলেও সন্তুষ্ট থাকতে হয় লিগ নিয়েই। মেসির অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের সুফল শুধু লিগেই নিতে পেরেছে বার্সা, চ্যাম্পিয়নস লিগ আর কোপা দেল রে আর জেতা হয়নি। আর্জেন্টিনাও কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়েছে এ বছর। জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি খরা এবারও ঘোচাতে পারেননি মেসি। এত কিছুর পরও মেসি ইউরোপের বর্ষসেরা খেলোয়াড় না হতে পারেন, তাহলে সেটি হবে এ ট্রফিগুলো জিততে না পারার জন্য। গতবার এই পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে পঞ্চম অবস্থানে ছিলেন মেসি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
ট্রফির বিচারে মেসির চেয়ে ভালো মৌসুম কাটিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো। জুভেন্টাসের হয়ে সুপার কাপ জিতে মৌসুম শুরু করে পরে মেসির মতো লিগ জিতেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেসিকে আবার ছাড়িয়েও গেছেন এই পর্তুগিজ তারকা। নতুন চালু হওয়া উয়েফা ন্যাশনস লিগ জিতেছেন পর্তুগালের জার্সিতে। দলগত দিক দিয়ে সফল মৌসুম কাটালেও ব্যক্তিগত দিক দিয়ে কিন্তু অত দুর্দান্ত ছিলেন না রোনালদো। গোটা মৌসুমে ৪৩ ম্যাচ খেলে ২৮টা গোল করেছেন। গত এক দশকে এই প্রথম ত্রিশের কম গোল করলেন পর্তুগিজ তারকা। গতবার দ্বিতীয় হওয়া রোনালদো এবার এ কারণেই হয়তো একটু পিছিয়ে আছেন!
ভার্জিল ফন ডাইক
ডিফেন্ডার হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ফন ডাইক। লিভারপুলের জার্সিতে কী অসাধারণ মৌসুম কাটিয়েছেন এই ডিফেন্ডার, এই একটা তথ্যেই যথেষ্ট। দেড় বছর আগে লিভারপুলে যখন যোগ দিলেন, অল রেডদের রক্ষণভাগ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। সে অবস্থা থেকে লিভারপুলের রক্ষণভাগ যে আজকে তর্কযোগ্যভাবে ইউরোপের সেরা, তার পেছনে মূল কৃতিত্ব এই ডাচ সেন্টারব্যাকের। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে গত ৬৪ ম্যাচে ফন ডাইককে ড্রিবলে পরাস্ত করে কেউ গোল করতে পারেননি, ভাবা যায়!
একটুর জন্য লিগ শিরোপা জেতা না গেলেও গত মৌসুমে ফন ডাইক লিভারপুলকে জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিছুদিন আগে জিতলেন উয়েফা সুপার কাপও। বিশ্বকাপ না খেলতে পারা নেদারল্যান্ডসকে ন্যাশনস লিগের ফাইনালে ওঠানোর পেছনে অধিনায়ক ফন ডাইকের ভূমিকা ছিল অনেক। ইউরোপ সেরা হওয়ার দৌড়ে মেসি-রোনালদোর চেয়ে তাই কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই ফন ডাইক।