বিপিএল নিয়ে বিরক্ত মুডি-জয়াবর্ধনেরা
বিপিএল মানেই নাটক। প্রথম বিপিএল থেকেই হয়ে আসছে, সপ্তম মৌসুমেও এর চরিত্রে কোনো বদল হয়নি। এবারই যেমন অনেক আয়োজন করে রংপুর রাইডার্সে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন সাকিব আল হাসান। তার এক সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই বিসিবি বেশ ঘটা করে জানাল, এভাবে দল বদল করা সম্ভব নয় সাকিবের পক্ষে। অথচ এর আগের মৌসুমগুলোতে প্রায় সব আইকনই এভাবে দলবদল করেছেন। বিপিএলের দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি কোচ এভাবে বারবার নিয়ম বদল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মাহেলা জয়াবর্ধনে ও টম মুডি—দুজনেই বিপিএলের সঙ্গে বেশ অনেক দিন ধরে জড়িত। খুলনা টাইটানস ও রংপুর রাইডার্সের প্রধান কোচ বিপিএলের ইচ্ছে খুশি মতো নিয়ম পরিবর্তন নিয়ে বিরক্তি জানিয়েছেন ক্রিকইনফোর কাছে। আগস্টের ৪ তারিখে বিপিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমান সব দলকে চার বছরের জন্য নতুন চক্রের আওতায় যেতে হবে। তারপরই দলবদল হবে। বিসিবির পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেছেন, ‘নতুন চক্রের চুক্তিপত্র যেহেতু এখনো সাক্ষর হয়নি, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দলবদলকে আমরা স্বীকৃতি দিতে পারব না।’
মজার ব্যাপার, মে মাসের ১১ তারিখেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে বিসিবি চিঠি পাঠিয়েছিল পরের মৌসুমের কথা চিন্তা করে ব্যবস্থা নেওয়ার। ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তাই বলেছেন চুক্তি নবায়ন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। বরং ডিসেম্বরের টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছিল।
২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সকে বিপিএলের প্রথম শিরোপা এনে দিয়েছেন টম মুডি। এ মৌসুমে ঢাকা ডায়নামাইটস ছেড়ে রংপুরে যাওয়ার ব্যাপারে এই কোচের উপস্থিতিও একটি প্রভাবক বলে স্বীকার করেছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোচিং করানো মুডি বিপিএলের এভাবে কিছুদিন পর পর নিয়ম বদলানোয় বিরক্ত, ‘গত ১২ বছরে অনেক টি-টোয়েন্টি লিগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এতে একটা জিনিস পরিষ্কার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য খেলার কন্ডিশন ও নিয়মে ধারাবাহিকতা রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শুধু দলই নয়, সমর্থকদের কথা চিন্তা করেও বিপিএলকে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন মুডি, ‘এটা শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি বা ম্যানেজমেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ না। ভক্তদের এ জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদেরও তো জানতে হবে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক কোন ক্রিকেটারদের অনুসরণ করবে তারা। এটাই ফ্র্যাঞ্চাইজির বিশ্বস্ত ভক্ত সৃষ্টি হয়। যদি নিয়মিত ইচ্ছেমতো নিয়ম বদলে ফেলা হয়, তবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
২০১৭ সাল থেকে খুলনা টাইটানসের দায়িত্বে আছে মাহেলা জয়াবর্ধনে। তাঁর মতে এভাবে নিয়ম বদলানোতে দল গুলোর সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতি বছর এবং টুর্নামেন্ট চলার সময়ই এভাবে নিয়ম বদলানো কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্যই ভালো না। বিশ্বের আর সব টুর্নামেন্টেই নিয়মগুলো ঠিক থাকে এবং সব ফ্র্যাঞ্চাইজি এ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।’
বিপিএলের এত দিনের নিয়মানুযায়ী একজন আইকন হিসেবে সাকিব দলবদল করতেই পারেন। ২০১৬ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মুশফিকুর রহিম দল বদল করেছেন। তামিম ইকবালও দল বদল করেছেন আগে। এমনকি এই নিয়মেই এ মৌসুমে তামিমের খুলনায় ও মুশফিকের কুমিল্লায় যোগ দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।
বিপিএলের নতুন চক্রের ব্যাপারটি সবার নজরে আনার সময়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। মুশফিক, তামিম ও এউইন মরগানের মতো খেলোয়াড়দের নতুন দলে যাওয়ার সময় কারও নতুন চক্রের কথা মনে পড়েনি। শুধু সাকিব ঢাকা ডায়নামাইটস ছেড়ে রংপুরে যাওয়ার পরই বিসিবির টনক নড়েছে, সবাইকে ঘটা করে জানিয়েছে নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর না হলে দলবদল করা যাবে না। সাকিব যে দলকে ছেড়ে যাওয়ার পর ৪ দিন পরেই বিপিএলের নতুন নিয়মের কথা জানানো হয়েছে, সেই ঢাকা ডায়নামাইটসের মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল ইসলাম, বিপিএলের সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকও। এমনকি ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদও বিসিবির পরিচালক।