'ওটা অন্য কেউ ছিল, আমি নই'
>
ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতোই দৃশ্য ছিল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছেন স্টিভ ওয়াহ আর কপিল দেব। কিন্তু ফ্রেমে বাঁধাই করা গেল না। তাঁদের ঘিরে দাঁড়ানো ১০-১২ জন সাংবাদিক। ছবি তোলার ফাঁক-ফোকরও যে নেই!কপিল স্বগতোক্তির মতো করলেন, ‘বুঝলাম না ভারত আজ (গতকাল) শামিকে খেলাচ্ছে না কেন! এই কন্ডিশনে ও ভালো করত।’ এরপর ভারতীয় দল নিয়ে আরও টুকটাক কথা। ভারতীয় কয়েকজন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঢুকে পড়লেন ধারাভাষ্যকক্ষে। ভারত-নিউজিল্যান্ড প্রথম সেমিফাইনালের ধারাভাষ্য দিতে কাল ওল্ড ট্রাফোর্ডের প্রেসবক্সের আশপাশে আনাগোনা ছিল আরও অনেক সাবেক ক্রিকেটারেরই। কথা বলতে গেলে চুক্তির অজুহাত দেখিয়ে বাকিরা পাশ কাটিয়ে গেলেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলতে আপত্তি করলেন না ভারতকে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক কপিল দেব।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলাও নিশ্চয়ই দেখেছেন। কীভাবে মূল্যায়ন করবেন তাদের পারফরম্যান্স?
কপিল দেব: বাংলাদেশ আসলেই ভালো খেলেছে। বিশ্বকাপের সব কটি দলের দিকে যদি তাকান, বাংলাদেশই একমাত্র দল, যারা নিজেদের খেলাটাকে গতবারের তুলনায় অনেক ওপরে নিয়ে এসেছে। ওদের উন্নতিটা চোখে পড়ার মতো। তবে তাদের আরও পরিণত হতে হবে।
প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানকে কেমন দেখলেন? বিশ্বকাপটা তো খুব ভালো গেল তাঁর...
কপিল: সাকিব অসাধারণ খেলেছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে সে এক নম্বর হওয়ার প্রতিযোগিতা করছে, এটা বিরাট ব্যাপার। বোলিংয়ে তো ও সব সময়ই ভালো। অলরাউন্ডার হিসেবেই সাকিব এই বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলে গেছে। ও বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার মতোই ক্রিকেটার।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের আর কারও খেলা কি ভালো লেগেছে? মোস্তাফিজও তো ২০ উইকেট নিয়ে দেশে ফিরলেন...
কপিল: মোস্তাফিজকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। আসলে বাংলাদেশ দলের সবাইকেই সেটি করতে হবে। তাদের একজন নতুন অধিনায়ক দরকার, যে দলটাকে আরও ভালোভাবে দেখাশোনা করতে পারবে। তবে আমি মনে করি, দল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপটা অসাধারণ খেলেছে।
প্রশ্ন: দলটার মধ্যে কোনো কিছুর অভাব কি দেখেছেন, যেটা না থাকলে তাদের সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ত?
কপিল: আমি নেতিবাচক কিছু বলতে চাই না। নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচক কথাই বেশি বলা উচিত। আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চান নেতিবাচকের চেয়ে আপনাকে ইতিবাচক জিনিস বেশি দেখতে হবে। আর আমিও মানুষটা নেতিবাচক নই, ইতিবাচক। আমি বলব দলটা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ১০ বছর আগে তারা যে রকম ছিল, তার চেয়ে এখন অন্য রকম। বাংলাদেশ এখন আরও অনেক প্রতিভাবান। তবে তাদের আরও আগ্রাসী হতে হবে। তারা শুধু নিজেদের সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখেই খেলছে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে রকম আগ্রহ, সেটাকে কীভাবে দেখেন? ভারতের পর সম্ভবত বাংলাদেশেই এখন ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেশি...
কপিল: বাংলাদেশ দলটা এখনো তরুণ। আর বাংলাদেশের মানুষ এখনো ফুটবল বেশি ভালোবাসে। তবে এখন তারা ক্রিকেটকেও বেশ পছন্দ করতে শুরু করেছে। তাদের অসাধারণ কিছু খেলোয়াড় দরকার। নিজেদের শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করেই খেলা উচিত ওদের। স্পিন, কবজির ব্যবহার...এসবকে আরও ভালোভাবে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। কাউকে অনুকরণ করার দরকার নেই। ওরা নিজেরা কী হতে চায়, সেটাই চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে এখনো ফুটবল জনপ্রিয়, এটা কোথায় শুনলেন? এখন তো ক্রিকেট নিয়েই সেখানে মাতামাতি বেশি...
কপিল: আমি তো এই বিশ্বেই বসবাস করি, নাকি? (হাসি)। এটা হওয়া উচিত নয়। ফুটবল চমৎকার একটা খেলা। তরুণদের অবশ্যই এই খেলাটা খেলা উচিত। অ্যাথলেটদের জন্য এটা খুবই জরুরি।
প্রশ্ন: ১৯৮৮ সালে এশিয়া কাপ খেলতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। তখনকার সঙ্গে এখনকার বাংলাদেশের ক্রিকেটের কীভাবে তুলনা করবেন?
কপিল: তারা অনেক উন্নতি করেছে। ১৫ বছর আগেও বাংলাদেশ এতটা ক্রীড়াপ্রেমী বা খেলোয়াড়ি মানসিকতার ছিল না। এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। উপমহাদেশের সব দেশই আসলে এ রকম। শ্রীলঙ্কার জন্য খারাপ লাগে, তারা একটু পিছিয়ে গেছে। পাকিস্তানের জন্যও খারাপ লাগে। নিজেদের দেশে তারা খুব বেশি ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। সে তুলনায় বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো এগিয়ে আসছে।
প্রশ্ন: ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানের ইনিংসটা নিশ্চয়ই কখনো ভুলবেন না। ভারতের হয়ে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল। লোকজন এ নিয়ে জিজ্ঞেস করলে কেমন লাগে?
কপিল: আমার মনে হয়, ওটা অন্য কেউ ছিল। আমি নই। আমাকে এটা নিয়ে কথা বলতে হয়, তবে ওটা আমি ছিলাম না। ৩৫-৩৭ বছর চলে গেছে। ভালো, এটা নিয়ে এখনো কথা হয়। তবে ওটা এখন ইতিহাস।
প্রশ্ন: আপনার ওই পারফরম্যান্সই ওয়ানডেতে ভারতের খেলার ধরনটা বদলে দিল...
কপিল: আসলে সবাই তো খেলাটাকে আরও ভালো করার চেষ্টাই করে। আমরা ভাগ্যবানও ছিলাম। কারণ মানুষ আমাদের কাছে সবকিছু চাইত। তারা চাইত আমরা সব করে ফেলি। এটা হলে আপনি গর্ব বোধ করবেনই।