বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের
>ভারতের বিপক্ষে ২ ওভার আগে অলআউট হয়ে ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হারে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ
এমন না যে ভারতকে হারালেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে চলে যেত বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জয় পেলেও তাকিয়ে থাকতে হতো ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। এর পর পাকিস্তানকেও হারাতে হতো নিজেদের শেষ ম্যাচে। সে সবই অনেক জটিল হিসাব নিকাশের ব্যাপার। বাংলাদেশ অত জটিল হিসাবের মধ্যেই যায়নি। ভারতের কাছে আজ ২৮ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এ হার দিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল মাশরাফিদের।পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।
আর এই জয় দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল ভারত। এর আগে কেবল অস্ট্রেলিয়া শেষ চার নিশ্চিত করেছে।
৩১৫ রানের লক্ষ্য। বিশ্বকাপে তিন শর বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড বাংলাদেশের আছে, সেটাও দুবার। এ বিশ্বকাপেই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২১ তাড়া করেছে বাংলাদেশ, সেটাও ৫১ বল হাতে রেখে। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগেই তাই আশাহত হওয়ার উপায় ছিল না। শেষ দিকে অন্য প্রান্তে কোনো সহযোগিতা ছাড়াই সাইফউদ্দিন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে প্রায় অসম্ভব এক জয়ের স্বপ্নও জেগেছিল। কিন্তু এই এজবাস্টনেই ভারত ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল যে কারণেই, অনেকটা সে কারণেই হেরেছে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান তুলেছিল ভারত। শেষ দিকে এই ধীরে শুরু করার দায় মিটিয়ে হেরেছে ভারত। আজ ৩১৪ তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৪০, সেটাও তামিমের উইকেট হারিয়ে। বিশ্বকাপজুড়ে ধীরে শুরু করার নীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েও পরে খোলসে ঢুকে গেছেন তামিম। ফিরে যাওয়ার আগে ২২ রান করেছেন ৩১ বলে।
এরপরও বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন ছিল। মাঝে ওভারগুলোতে রান তোলার বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়া সাকিব আল হাসান আছেন, বিশ্বকাপে কোনো ফিফটি না পাওয়া সৌম্যও আজই ফর্মে ফিরবেন না তার আশা করতেও দোষ কি? কিন্তু ভারতের ইনিংসের শেষ ভাগে উইকেট ধীর হয়ে যাওয়ার যে ইঙ্গিত মিলেছিল সেটাই বড় হয়ে উঠল বাংলাদেশের ইনিংসে। উইকেটে বল দ্বিমুখী আচরণ করছিল। কোনো বল স্বাভাবিক গতি ধরে রাখছিল। কোনো বল আবার একটু ধীর হয়ে যাচ্ছিল। এর দোলাচলে পড়ে সৌম্য আউট হয়ে গেলেন পান্ডিয়ার প্রথম বলেই। সে বলটা মাঠের যেকোনো প্রান্তে আছড়ে ফেলতে পারতেন সৌম্য, কিন্তু বলের বাড়তি বাউন্স বুঝতে না পেরে কোহলির কাছে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য(৩৩)।
উইকেটের এমন আচরণের মাঝেও দারুণ খেলছিলেন সাকিব। বল ও রানের সামঞ্জস্য ধরে রেখে এ বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ ফিফটি বুঝে নিয়েছেন। সাকিবের কারণেই মাঝের ৩০ ওভারে ১৮৫ রান তুলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিবের সঙ্গে উইকেটে সময় কাটানোয় আরও আগ্রহ দেখা যায়নি। পান্ডিয়ার স্লোয়ারে ৬৬ রান করে সাকিব ফেরার পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। মাঝে যে মুশফিক, লিটন ও মোসাদ্দেকও ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন।
৩৪তম ওভারে সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের জয়ের আশা প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল। ১৬ ওভারে ১৩৬ রানের লক্ষ্যটা ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাব্বির ও সাইফউদ্দিন। কিন্তু ৪৪ ওভারে জয় থেকে ৭০ রান দূরে সাব্বিরও (৩৬) বিদায় নেওয়ার পর শুধু পরাজয়ের অপেক্ষাই বেড়েছে। সঙ্গীহারা হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন (৩৮ বলে ৫১)। বুমরার টানা দুই ইয়র্কারে শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের সব লড়াই।
২ ওভার আগে অলআউট হওয়া ও জয় থেকে ২৯ রানের দূরত্বটা আক্ষেপ বাড়াচ্ছেই। যদি টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের একজন থাকতেন শেষ পর্যন্ত! তাহলে অন্তত ৫ জুন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নটাও বেঁচে থাকত।