'ডেথ ওভারে' ভারতের সঙ্গে কীভাবে পাল্লা দেবে বাংলাদেশ?
>বিশ্বকাপে এখন ভারতের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতীয় ব্যাটিংকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে বড় রান তোলার বিকল্প পথ নেই বাংলাদেশ দলের। কিন্তু দলে নেই স্বীকৃত কোনো ‘বিগ হিটার’। আর শেষ ১০ ওভারে রান তোলার হারেও বাংলাদেশ বড় দলগুলোর চেয়ে পিছিয়ে
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে এখনো টিকে আছে বাংলাদেশ। আশা আরও জোরদার করতে মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ এবার বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। তাদের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করলে সংগ্রহটা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নিতে হবে। নইলে শঙ্কা থেকেই যাবে।
ক্রিকেট বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশ যে বাজে ব্যাটিং করছে তা নয়। তিন শর বেশি রান তাড়া করে জয়ের নজির এখন পর্যন্ত কেবল বাংলাদেশেরই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও পরে ব্যাটিং করে ৩৩৩ তোলা গেছে। এরপরও সমস্যা থেকে যাচ্ছেই। ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও দ্রুত রান তোলায় বেশ সমস্যা হয় বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের। সেট হতে হতেই চলে যায় কিছুটা সময়। বিশেষ করে ইনিংসের শেষ ২০ ওভার বাকি থাকতে। ক্রিকইনফোর বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে পাওয়ার প্লের নিয়ম পাল্টানোর পর থেকে বাকি দলগুলো এ ২০ ওভারে রান তোলায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে।
ইংল্যান্ড শেষ ২০ ওভারে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে রান তোলা দল। ওভারপ্রতি ৭.২৬ গড়ে তুলে থাকে দলটি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের রান তোলার হার সাড়ে ছয়ের আশপাশে। কিন্তু বাংলাদেশ শেষের ২০ ওভারে রান তোলায় তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না। ছয়ের নিচে অর্থাৎ ওভারপ্রতি গড়ে ৫.৮৮ করে শেষ ২০ ওভারে রান তুলতে পারে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
২০১৫ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর থেকে চলতি বিশ্বকাপ শুরুর আগ পর্যন্ত ইনিংসের প্রথম ৩০ ওভারে গড়ে ৫.০৯ হারে রান তুলেছে বাংলাদেশ, যা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো। ইংল্যান্ড এ ক্ষেত্রে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে (৫.৭৬)। আর শেষ ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের ধারেকাছেও কেউ নেই। এই ১০ ওভারে ইংল্যান্ড গড়ে ৮.৪৯ করে রান তুলে থাকে। বাংলাদেশ ইনিংসের এই শেষ ১০ ওভারেই রান তোলায় বড় দলগুলোর চেয়ে পিছিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা (৭.৮৭), অস্ট্রেলিয়া (৭.৮৫), নিউজিল্যান্ড (৭.৭৭), ভারত (৭.৬৯), পাকিস্তান (৭.৫৯), আফগানিস্তান (৭.০৩) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৭.০১) পরই রয়েছে বাংলাদেশ (৬.৭৬)। শুধু শ্রীলঙ্কা (৬.৫৭) বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে।
ওয়ানডেতে খেলার ধাঁচ গত সাত-আট বছরে অনেক পাল্টেছে। বড় দলগুলো এখন ৩০ ওভার শেষ হলেই ‘বিগ হিটার’ নামিয়ে থাকে। কারণ, শেষ ১০ ওভারে অতিরিক্ত একজন ফিল্ডার সীমানায় থাকেন। আর এই ‘ডেথ ওভার’-এ বোলাররা, বিশেষ করে পেসাররা ইয়র্কার ডেলিভারি বেশি করে থাকেন। তাতে রান তোলাটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই ৩০ থেকে ৪০—এ ১০ ওভারকে কাজে লাগাতে বিগ হিটার নামিয়ে থাকে বড় দলগুলো। দ্রুত রান তোলায় বাংলাদেশের সমস্যা ঠিক এখানেই। দলে স্বীকৃত কোনো বিগ হিটার নেই। প্রায় সবাই প্রথাগত ব্যাটসম্যান, সেট হওয়ার পর স্ট্রোক খেলে থাকেন।
আফগানিস্তান ম্যাচের আগে এ বিশ্বকাপে ৩১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বল খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তাঁর স্ট্রাইকরেট ৭৪; যেখানে জস বাটলারের ১৪০, উসমান খাজার ১১৮ এমনকি সরফরাজ আহমেদের স্ট্রাইকরেটও ১০০ ছুঁইছুঁই—৯৩.৫২। তবে বিশ্বকাপে শেষ ১০ ওভারে মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইকরেট বেশ সন্তোষজনক—১৪৪। তবে তুলনা করলে বাটলার, হার্দিক পান্ডিয়া আর এউইন মরগান তাঁর চেয়ে এগিয়ে (ইনিংসের এ সময় অন্তত ৪০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে)।
সমস্যা হলো উইকেটের অন্য প্রান্তে স্বীকৃত কোনো বিগ হিটার পাচ্ছেন না মাহমুদউল্লাহ। ২০১৬ সাল থেকে মাহমুদউল্লাহর কাঁধে বিগ হিটিংয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার পর তিনি একেবারে খারাপ করছেন না। কিন্তু দল বিপদে পড়লে তাঁকে খোলসে ঢুকতে হয় এটাও সত্য। উইকেটে সেট হওয়ার পর ধীরে ধীরে হাত খুলতে হয়। তখন অন্য প্রান্তে কোনো বিগ হিটার থাকলে দ্রুতগতিতে রান তোলাটা সুবিধা। বাংলাদেশ দলে তেমন কেউ নেই। ভারতের কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়াও হার্দিক পান্ডিয়া আছেন। তা ছাড়া ভারতের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ খেলবেন কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়। চোটে ভুগছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ না খেলতে পারলে টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো তাঁর জায়গায় সাব্বির রহমানকে ভাবতে পারে।
বিকল্প যিনিই হোন না কেন, এটা সত্যি যে ব্যাটসম্যানদের ওপর দায়িত্বটা তাই অনেক বেশি। খোলাসা করে বললে, ভারতের বিপক্ষে বড় রান তোলার দায়িত্ব নিতে হবে নিখাদ ব্যাটসম্যানদেরই।