স্বাগতিক হওয়ার অভিশাপ কাটবে ইংল্যান্ডের?
>বিশ্বকাপে এবার স্বাগতিক দেশ ইংল্যান্ড কতটা সুবিধা করতে পারবে? তারা কি পারবে শিরোপা জিততে, নাকি বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের দুঃখের ইতিহাসটাকেই দীর্ঘ করবে!
বলা হয়, ক্রিকেট খেলাটার জন্ম ইংল্যান্ডে। খেলাটাকে জন্ম দিলেও কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি ইংলিশদের। একবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেও ৪৫ বছর ধরে আসল বিশ্বকাপ জেতার আক্ষেপ বুকে নিয়ে ঘুরছে তারা। এর আগে চারবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেও জেতা হয়নি। ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হয়েছে। এবার কি সেই আক্ষেপ ঘুচবে?
প্রথম তিনবার বিশ্বকাপ আয়োজন ইংল্যান্ডই করেছিল। যথেষ্ট সমীহ জাগানিয়া দল ছিল তাঁদের তখন। প্রথম তিন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিটও ছিল তারা। ডেনিস অ্যামিস, টনি গ্রেগ, ইয়ান বোথাম, জিওফ বয়কট, গ্রাহাম গুচ, মাইক গ্যাটিং, বব উইলিসের মতো তারকারা দলে থাকার পরেও সেই তিনবারের মধ্যে মাত্র একবার ফাইনালে উঠেছিল ইংলিশরা। প্রথম দুইবার বিশ্বকাপ জেতে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তৃতীয়বার কপিল দেবের ভারত। তখন মনে করা হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপটা স্বাগতিকদের জন্য নয় কিনা!
ধারণাটা পোক্ত হয় ১৯৮৭ সালে উপমহাদেশের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে। যৌথ আয়োজক ভারত-পাকিস্তান ছিল হট ফেবারিট। কপিল দেব, সুনীল গাভাস্কার, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, মনিন্দর সিং, রবি শাস্ত্রী, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনদের ভারত, ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, আবদুল কাদির, ওয়াসিম আকরামদের পাকিস্তান—এই দুই দলের সামনে বাকি সবাইকে বড় ক্লিশে মনে হচ্ছিল। কিন্তু স্বাগতিকদের শরীরে লেগে থাকা সেই অভিশাপের কারণেই কিনা ভারত ও পাকিস্তান দুই দলই বিদায় নিল সেমি থেকে। ১৯৯২-তে দুই আয়োজক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কেউই বিশ্বকাপ না জেতায় স্বাগতিক-অভিশাপটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
১৯৯৬ সালে কিছুটা হলেও এই অভিশাপ কাটায় শ্রীলঙ্কা। তবে ভারত আর পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ আয়োজক হলেও শ্রীলঙ্কা ফাইনালটা ঠিক নিজেদের দর্শকদের সামনে জেতেনি। লাহোরে ফাইনাল জিতে কিন্তু তাদের উড়োজাহাজে করেই দেশে ফিরতে হয়েছিল। সে হিসেবে অভিশাপটা যে শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে পুরোপুরি দূর হয়েছিল, সেটি বলা যাবে না। তা ছাড়া সেবার শ্রীলঙ্কাকে সেভাবে ফেবারিট কেউই ভাবেনি। তাদের বিশ্বকাপ জয় অনেকটাই অননুমেয় ব্যাপার ছিল সবার কাছে। ভারত, পাকিস্তানকে নিয়েই প্রত্যাশাটা বেশি ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি।
বিংশ শতকের শেষ বিশ্বকাপ বসেছিল ইংল্যান্ডে। কিন্তু ইংলিশরা কাপ জেতেনি। অ্যালেক স্টুয়ার্টের ইংল্যান্ড দল কাপ জেতার মতো ছিল—এমনটা কেউই দাবি করবেন না। অস্ট্রেলিয়ার তখন রমরমা অবস্থা। ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আকতার, সাঈদ আনোয়ারদের পাকিস্তানও কম যায় না। শচীন টেন্ডুলকারের কল্যাণে ভারতও প্রত্যাশা করতে বিশ্বকাপের। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়টা সেবার কাউকে অবাক করেনি খুব বেশি। স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ডের না জেতাটাও না। অবাক করেছিল ভুতুড়ে এক ম্যাচে হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ ফাইনালে না উঠতে পারাটাই। ২০০৩ বিশ্বকাপ নিজেদের দেশে আয়োজন করেও নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। বৃষ্টি-বিঘ্নিত এক ম্যাচের এক ভৌতিক ‘ভুলে’ তাদের বিশ্বকাপ-যাত্রা থেমেছিল প্রথম রাউন্ডেই। ২০০৭ বিশ্বকাপেও শিরোপা পায়নি স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
স্বাগতিকদের অভিশাপ সত্যিকার অর্থে কাটিয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত, ২০১১ সালে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজন করলেও ভারত ফাইনালটা খেলেছিল মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল আরেক স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৯৭৫ সালে শুরু বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে শিরোপা নিয়ে উল্লাস করার উদাহরণ সেটিই প্রথম। পরের বিশ্বকাপে, ২০১৫ সালে ভারতের সঙ্গে এ কৃতিত্বে ভাগ বসিয়েছিল মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। চার বছর পর এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। স্বাগতিকেরা দারুণ ফেবারিট। এউইন মরগানের ইংল্যান্ড দল কি পারবে গত দুইবারের প্রথার পুনরাবৃত্তি করতে?
জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জো রুট, মঈন আলী, বেন স্টোকসের মতো খেলোয়াড়রা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছেন নিয়মিত। প্রায়ই ৩৫০-৪০০ রান করছেন। সঙ্গে মার্ক উড, জফরা আর্চার, ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদরা শিখে গেছেন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বোলিংটা কতটা কার্যকরী হতে পারে।
ইংলিশরা স্বাগতিকদের অভিশাপে পড়বে, নাকি ভারত, অস্ট্রেলিয়ার পথে হাঁটবে, সেটি সময়ের হাতেই তোলা থাকল। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংলিশরা ব্যর্থ হয়েছিল নিজেদের মাটিতে। সে ইতিহাস কিন্তু মরগানদের কিছুটা ভাবিয়ে তুলতেই পারে।